করোনার টিকা সমভাবে বণ্টন হবে তো?

করোনা ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করছেন গবেষকেরা। ছবি: এএফপি
করোনা ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করছেন গবেষকেরা। ছবি: এএফপি

স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। প্রশ্ন উঠেছে বণ্টনের নৈতিকতা নিয়ে। টিকা একবার হাতে এসে গেলে, তা কীভাবে বিশ্বজুড়ে ন্যায্যভাবে বণ্টন করা হবে?

বিশেষজ্ঞরা আগেভাগেই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, সরকারদের অবশ্যই এখনই একটি নৈতিক ও ন্যায়সংগত বিশ্ব প্রক্রিয়ার সন্ধান শুরু করতে হবে, যা সহজ হবে না। যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

২০০৬ সালের ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ ভ্যাকসিন তৈরি হলে তা থেকে সুবিধা পাওয়ার নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত বার্ড ফ্লুর নমুনা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু ছড়ানোর সময় অস্ট্রেলিয়া সরকার ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে রপ্তানির আগে দেশের চাহিদা মেটানোর আদেশ দিয়েছিল। ওই বছরের নভেম্বরে কয়েকটি উন্নত দেশ ভ্যাকসিন সুরক্ষিত করতে শুরু করলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি ঘটতে পারে বলে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, করোনভাইরাস সংকট উতরানোর কয়েকটি মূল উপায়ের মধ্যে ভ্যাকসিন তৈরি একটি। এর মধ্যে ‘ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদের’ আশঙ্কা বাড়ছে। একটি ভ্যাকসিন তৈরি, পরীক্ষা ও ব্যাপক হারে উৎপাদন করার প্রতিটি পদক্ষেপ বিশাল চ্যালেঞ্জ। পরবর্তী বিতরণকে ঘিরে রাজনৈতিক ও নৈতিক সিদ্ধান্তগুলো আরেক চ্যালেঞ্জ।

যুক্তরাজ্যসহ সরকারগুলো কীভাবে কাতারের সামনে থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে। ভ্যাকসিন কীভাবে বণ্টিত হবে? সবচেয়ে যে বেশি দাম দেবে, সে কি তা পাবে, নাকি ইতিমধ্যে ধনী দেশের কাছে সম্ভাব্য সব ভ্যাকসিন বিক্রি হয়ে গেছে? আরও প্রশ্ন উঠছে, ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী দেশ নিজেদের টিকা বাইরে যাওয়া ঠেকালে কী হবে, তা নিয়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক বছরের মধ্যে হয়তো করোনাভাইরাসের টিকা চলে আসবে। সবকিছু ঠিক থাকলে এই ১২ মাস সবাইকে অপেক্ষায় থাকতে হবে। ইবোলা ভ্যাকসিন উৎপাদক দলের সদস্য স্টিভেন জোনস বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, ভ্যাকসিন কীভাবে বণ্টন করা হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করা হয়নি।’

সমস্যা চিহ্নিত করা গেছে। এর সমাধান উপলক্ষে গত শুক্রবার বিশ্বের কয়েকটি দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা, দাতব্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান, শিল্প খাতের প্রধান, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়ের মাখোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, মেলিন্ডা গেটস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কার্যক্রমে যুক্ত হন। বিশ্বজুড়ে কীভাবে করোনাভাইরাস চিকিৎসা ও টিকা সমভাবে বণ্টন করা যায়, তা নিশ্চিত করতে কাজ করার কথা বলেন তাঁরা। এতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ভারতের অংশগ্রহণ ছিল না।

ওয়েলকাম ভ্যাকসিনের প্রধান চার্লি ওয়েলার বলেছেন, ‘একটি সংকটের মধ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি সূক্ষ্ম ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে। আমরা কোটি কোটি ডোজ সবার জন্য উপলব্ধ হওয়ার বিষয়ে কথা বলছি। এটি কীভাবে করা যায়, তার জন্য আমরা একটি রোডম্যাপ পাইনি। এই আলোচনার অনেকগুলো বিষয়ে এখন কাজ করা হচ্ছে।’

জোনস বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নেতৃত্বের ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে, তবে তারা একটি কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছে। তারা নৈতিক ও নৈতিক নির্দেশিকা প্রয়োগের চেষ্টা করতে পারে।’

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এক বছর পর ভ্যাকসিন পাওয়া গেলেও শুরুতে অপর্যাপ্ত সরবরাহ থাকবে। বৈশ্বিক চাহিদা মেটানোর মতো ডোজ তৈরি করা সম্ভব হবে না।তাই ভ্যাকসিন পাওয়ার সারি দীর্ঘ হবে। তাই এ ক্ষেত্রে কোনো একক কোম্পানি চাহিদা মেটাতে পারবে না। বড় বড় কোম্পানিকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক লড়াই বা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার মতো সমস্যাও আসতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন উৎস থেকে একাধিক ভ্যাকসিন এ সমস্যার সমাধান করতে পারে।

চার্লি ওয়েলার বলেন, কেউ একা পথচলার নীতি নিলে, এটা তার জন্য আক্ষেপ হিসেবে আবার ফেরত আসতে পারে। কোথাও কোভিড যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে যায়, এটি সবার জন্য সবখানেই হুমকি সৃষ্টি করবে।