করোনাযুদ্ধে জয়ের পথে অস্ট্রেলিয়া

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ায় কিছু দিন ধরে নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার সংখা খুব কম। মঙ্গলবার সারা দেশে ১১ জন নতুন শনাক্ত হয়েছে। ফলে দেশটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিদের মধ্যে একটা উৎফুল্লতা ফুটে উঠেছে। পাশাপাশি বিরাজমান কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করার উদ্যোগ নিচ্ছে দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারগুলো।

যদিও দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন আগেই বলে রেখেছেন, কমপক্ষে ১১ মের আগপর্যন্ত জাতীয় নিষেধাজ্ঞাগুলোর তুলে নেবেন না। তবে রাজ্য ও অঞ্চলগুলো চাইলে নির্দিষ্ট কিছু সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারে। আর সে সুযোগ থাকায় রাজ্য এবং স্থানীয় সরকারগুলো কিছু বিধি নিষেধকে শিথিল করা শুরু করেছে।

মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ১ জন অজ্ঞাত সংক্রমণের ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ায় আশাবাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় কোভিড-১৯ থেকে সামাজিক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সামাজিক দূরত্বসহ সব বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে এই জয় ধরে রাখতে হলে।

অবশ্য এর আগেই মঙ্গলবার কুইন্সল্যান্ড এবং ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া রাজ্য এই সপ্তাহে তাদের কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে। আজ আবার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যও ঘোষণা দিল, আগামী শুক্রবার থেকে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক এবং তাঁদের বাচ্চাদের নিয়ে সামাজিক-পারিবারিক পরিদর্শনে যেতে পারার। এ ছাড়া, নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সিডনির পূর্বাঞ্চলীয় শহরতলি ওয়ের্ভালি কাউন্সিল আজ তাদের বিখ্যাত বন্ডাই সমুদ্রসৈকতসহ অন্য সৈকতগুলো খুলে দিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাস লড়াইয়ে যে সফলতা আসছে, তার কিছু কারণের মধ্যে সুসংহত চিকিৎসাব্যবস্থা এবং আইনের কঠোরতা অন্যতম।সাংসদ থেকে শুরু করে জনপ্রিয় রাগবি খেলোয়াড় এমনকি পুলিশ কর্মকর্তা, যিনিই নিয়ম ভেঙেছেন, তাঁকেই মাশুল গুনতে হয়েছে।


অস্ট্রেলিয়ায় জনসংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার। পরীক্ষাকরণে এটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ হার।


এ ছাড়া, কোভিডসেফ নামে একটি বিশেষ অ্যাপ চালু হয়েছে অস্ট্রেলীয় সরকারের অনুমোদনে। যেটা দিয়ে সহজেই করোনাভাইরাস–সংক্রান্ত বিষয়াদি দ্রুত বের করা যায়। কেউ যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না জেনেও এসে থাকে, তাহলে এই অ্যাপের কল্যাণে দ্রুত কোয়ারেন্টিন ইত্যাদি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আবার কোনো ব্যক্তি যদি একটি এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় ওই এলাকায় আক্রান্ত কেউ থাকে, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সতর্ক বার্তা পাঠাবে এই অ্যাপ। আবার আক্রান্ত ব্যক্তির জটিলতার অথবা নতুন কারও সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলে স্বাস্থ্যকর্মীরা দ্রুত যোগাযোগ করতে পারবেন। ফলে, পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং কমিউনিটির মধ্যে ভাইরাসটি ছড়ানোর আশঙ্কা হ্রাস হবে এই অ্যাপটি ব্যবহার করলে। গত দুদিনে প্রায় ২৫ লাখ অস্ট্রেলিয়ান এই অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধিত হয়েছেন।

অন্যদিকে, কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের দু'জন পুলিশ কর্মকর্তাকে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মানতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রত্যেককে ১ হাজার ১৩৪ ডলার করে জরিমানা করা হয়েছে। তাঁরা দায়িত্বরতহীন অবস্থায় এক জায়গায় কয়েকজন সমাবেত হয়েছিলেন। এ ছাড়া, অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত এনআরএল রাগবি লিগের দুজন জনপ্রিয় খেলোয়াড়কে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে। তাঁরা সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখা এবং বেআইনিভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে শিকার করায় অভিযুক্ত হন। তাঁদের ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হলে তাঁদের একজনকে ৫০ হাজার এবং অন্যজনকে ১০ হাজার ডলার করে জরিমানা করা হয়। জরিমানা ছাড়াও তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় মোট শনাক্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৭৩১ জন এবং এর মধ্যে ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অন্যদিকে, এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫ হাজার ৬২৬ জন।

অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি কেউ এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা যায়নি।