তবু লকডাউন তুলে নিতে ইউরোপীয় নেতাদের ওপর চাপ

ইউরোপের দেশ ইতালিতে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা এখনো কাটেনি। তবে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে এসেছে। ছবি: রয়টার্স
ইউরোপের দেশ ইতালিতে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা এখনো কাটেনি। তবে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে এসেছে। ছবি: রয়টার্স

ইউরোপে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশগুলোর কয়েকটিতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমে এসেছে। এরপরও প্রতিটি দেশে প্রতিদিন কয়েক শ করে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এর মধ্যেই কিছু দেশ বিধিনিষেধ শিথিল করতে শুরু করেছে। কিন্তু লকডাউন আরও দ্রুত তুলে নিতে ইউরোপীয় নেতাদের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে।

এদিকে এক মাসের লকডাউনের পর গতকাল মঙ্গলবার নিউজিল্যান্ডে জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। পাঁচ সপ্তাহ বন্ধ রাখার পর খুলে দেওয়া হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বন্ডি সৈকত। তবে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় মিসরের মতো কিছু দেশ বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্যমতে, চীন থেকে গত জানুয়ারির শুরুর দিকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৩১ লাখ ৫ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ২ লাখ ১৪ হাজারের বেশি। সুস্থ হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৯ লাখ। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৩ লাখের বেশি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বাসিন্দা। এই মহাদেশে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষের। তবে এখন পরিস্থিতির ‍উন্নতি ঘটছে। ইতালি, স্পেন, ফ্রান্সের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোয় সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে এসেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, দ্রুত লকডাউন তুলে নিতে ইউরোপীয় নেতাদের ওপর চাপ বেড়েই চলেছে। বিধিনিষেধ কবে ও কীভাবে শিথিল করা হবে, তা নিয়ে জার্মানিতে একধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের আশঙ্কা, সময়ের আগে বিধিনিষেধ তুলে নিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। গত সপ্তাহেই দেশটির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সতর্ক করে বলেছেন, জার্মানির ১৬টি রাজ্য লকডাউন তুলে নিতে তড়িঘড়ি করছে। দেশটির অর্থমন্ত্রী পিটার আল্টমায়ের বলেন, ‘আমি সবাইকে অনুরোধ করছি, বিধিনিষেধ শিথিল করার ক্ষেত্রে খুব সতর্কভাবে অগ্রসর হতে হবে।’

সুইজার‌ল্যান্ডে করোনা ঠেকাতে গত মাসে লকডাউন আরোপ করা হয়। গত সোমবার দেশটিতে চিকিৎসক, দাঁতের চিকিৎসকেরা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখার অনুমতি পেয়েছেন। খুলেছে প্রাক্‌–প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো, ফুলের দোকান, সেলুন, ম্যাসাজ পারলার ও বিউটি স্যালনগুলো। নরওয়েতেও শিশুরা ফিরেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, চেক প্রজাতন্ত্রে অনেক দোকান খুলেছে। দেশটি প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার আগেই জরুরি অবস্থা জারি করেছিল। সোমবার চেক প্রজাতন্ত্রের সরকার লকডাউন তুলে নিতে পাঁচ স্তরের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে।

ইউরোপের দেশ ইতালিতে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা এখনো কাটেনি। তবে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে এসেছে। এরই মধ্যে দেশটিতে আরোপ করা বিধিনিষেধ শিথিল করতে শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। আগামী ৪ মে খুলছে সেখানকার কারখানা ও নির্মাণ খাত। দেশটিতে গতকাল পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৭ হাজার ৩৫৯ জনের।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ফ্রান্স ও স্পেনের কর্তৃপক্ষের গতকাল লকডাউন তুলে নিতে পরিকল্পনা উপস্থাপনের কথা ছিল। অবশ্য স্পেনে এরই মধ্যে বিধিনিষেধ শিথিল করা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে দেশটিতে শিশু-কিশোরেরা অভিভাবকের সঙ্গে সীমিত সময়ের জন্য ঘরের বাইরে পা রাখতে পারছে। দেশটিতে মৃত্যু ২৪ হাজার ছুঁই–ছুঁই।

ফ্রান্সের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশটিতে বিধিনিষেধ শিথিল হবে আগামী ১১ মে। বিবিসি জানায়, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এদোয়ার্দো ফিলিপ বিধিনিষেধ শিথিলের পরিকল্পনা উপস্থাপনের সময় বলেন, লকডাউনের কারণে এক মাসে দেশটিতে ৬২ হাজার মানুষের জীবন রক্ষা পেয়েছে। ফ্রান্সে সোমবার পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ২৩ হাজারের বেশি মানুষ।

তবে যুক্তরাজ্যের সরকার এরই মধ্যে জানিয়েছে, দেশটিতে চলমান বিধিনিষেধ শিগগিরই শিথিল করার পরিকল্পনা নেই। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন করোনার সংক্রমণ থেকে সেরে উঠে সোমবার কাজে যোগ দিয়েছেন। ‍যুক্তরাজ্যে মৃত্যু ২১ হাজার ছাড়িয়েছে সোমবার। দেশটিতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার। 

রয়টার্স জানায়, করোনা মোকাবিলায় জাপানে চলমান জরুরি অবস্থার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৬ মে। এরপর মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না, সে বিষয়ে দেশটির অর্থমন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরা গতকাল বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে করোনা–সম্পর্কিত তথ্য নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের পরই।

এএফপি জানায়, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি গতকাল তাঁর দেশে চলমান জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়িয়েছেন। এবার তিনি করোনা মহামারি ও নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ালেন। ২০১৭ সালে গির্জায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জোড়া বোমা হামলার পর থেকে মিসরে জরুরি অবস্থা চলছে। দেশটিতে সোমবার পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছেন সাড়ে ৪ হাজারের বেশি। মারা গেছেন ৩৩৭ জন।

যুক্তরাষ্ট্রে গতকাল পর্যন্ত ১০ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মৃত্যু ৫৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তবে দেশটিতে পরিস্থিতির ‍উন্নতির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিনকার মৃত্যুর সংখ্যা এখনো অনেক বেশি হলেও তা কমতির দিকে। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩৮৪ জনের। সেখানেও বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে লকডাউন তুলে নেওয়ার দাবিতে ক্ষোভ বাড়ছে।

রয়টার্স জানায়, নিউজিল্যান্ডের সরকার দেশটিতে এক মাস ধরে চলমান লকডাউন প্রত্যাহার করেছে। গতকাল দেশটিতে জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেছেন, তাঁর দেশে এখন আর করোনার স্থানীয় সংক্রমণ নেই। নিউজিল্যান্ডে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪৭২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৯ জন।