ভারতে ট্রেনে ঘরে ফেরা শুরু পরিযায়ী শ্রমিকদের

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজনৈতিক ও মানবিক চাপের কাছে মাথা নোয়াল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। লকডাউনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে শুরু হলো ট্রেন চলাচল। আজ শুক্রবার কাকভোরে তেলেঙ্গানা থেকে ঝাড়খন্ডের শ্রমিকদের নিয়ে রওনা হলো এক বিশেষ এই ট্রেন।

ওই ট্রেনে সওয়ারি হয়েছেন মোট ১ হাজার ২০০ শ্রমিক। তাঁরা সবাই করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ সার্টিফিকেট পেয়েছেন। ২৪ কামরার প্রতিটিতে যেখানে ৭২ জন করে যাত্রী বহন করা হয়, সেখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে নেওয়া হয়েছে ৫৪ জন করে যাত্রী। দ্বিতীয় ট্রেনটি ছাড়ে সন্ধে ছয়টায়। কেরালার এর্নাকুলাম থেকে। গন্তব্য ওডিশার রাজধানী ভুবনেশ্বর।

বিদেশে আটকে থাকা ভারতীয়দের বিশেষ বিমানে দেশে ফেরানো হলে কেন রাজ্যে রাজ্যে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানো হচ্ছে না? রাজস্থানে আটকে যাওয়া হাজার হাজার পড়ুয়াকেও বিভিন্ন রাজ্যে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তবে কেন পরিযায়ী শ্রমিকদের মনুষ্যত্বের জীবনযাপনে বাধ্য করা হচ্ছে? এই সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছিল কেন্দ্রীয় সরকার। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফার লকডাউন শেষ হওয়ার আগেই পরিযায়ীদের ঘরে ফেরাতে বিশেষ ট্রেন চালানোর অনুমতি দেওয়া হলো। পাঞ্জাব, বিহার, ঝাড়খন্ড, মহারাষ্ট্র ও দক্ষিণের রাজ্যগুলো থেকে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করার জোরালো দাবি জানানো হচ্ছিল।

রোববার মাঝরাতে লকডাউনের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সোমবার, ৪ মে থেকে সর্বভারতীয় লকডাউনের চরিত্র কেমন হবে বা হওয়া উচিত, তা ঠিক করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার শীর্ষ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেই জানিয়েছে, ৩ মের পর কিছুতেই গোটা দেশ নিষেধাজ্ঞামুক্ত হতে পারে না। হটস্পট এলাকাগুলো, যা ‘রেড জোন’ বলে চিহ্নিত, সেখানে কড়াকড়ি জারি থাকবে। কোনো কোনো রাজ্য অন্তত আরও দুই সপ্তাহের জন্য স্পর্শকাতর এলাকা বন্ধ রাখার পক্ষে। ফলে ‘গ্রিন জোন’ ও ‘অরেঞ্জ জোন’ এলাকায় কীভাবে জনজীবন চালু করা যায়, বিমান ও রেল পরিষেবা চালু হবে কি না, হলেও কতটা, সে সব নিয়ে কথা হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত ১৫ দিনে সারা দেশে রেড জোনের সংখ্যা ২৩ শতাংশ কমেছে। ছিল ১৭০, কমে হয়েছে ১৩০। অবশ্য গ্রিন জোনও কমেছে। ছিল ৩৬৫, কমে হয়েছে ৩১৯। অরেঞ্জ জোনের সংখ্যা বেড়েছে। ছিল ২০৭, হয়েছে ২৮৪। অনেক জেলায় ২৮ দিনে কোনো সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। ওই জেলাগুলোর কোনো কোনোটায় এখন দেখা যাচ্ছে, সংক্রমণ হচ্ছে ২১ দিন পর। অর্থাৎ, সংক্রমণ সর্বস্তরে একভাবে কমছে না। মুম্বাই, দিল্লি, কলকাতা, আহমেদাবাদ, পুনেসহ সাতটি বড় শহর এখনো রেড জোনে রয়েছে। ফলে সাধারণের জন্য ট্রেন ও বিমান কীভাবে চালানো যায় সেটা বড় চিন্তা।

লকডাউন চালানো নাকি জনজীবন স্বাভাবিক করা—কোনটি বেশি প্রয়োজনীয়, তা নিয়ে দেশ মোটামুটি দ্বিধাবিভক্ত। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং লকডাউন ১৫ মে পর্যন্ত বাড়ানোর পক্ষে। চিকিৎসক মহলের অভিমতও মোটামুটি তা–ই। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজন ধীরে ধীরে লকডাউন তুলে নেওয়ার পক্ষে। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণ মূর্তিও বলেছেন, লকডাউন অব্যাহত থাকলে খিদের জ্বালায় বেশি মানুষ মারা যাবেন। তাঁর সুপারিশ, করোনা এখন ‘নিউ নরমাল’। এর সঙ্গে সহাবস্থানের বিষয়টি সবাইকে মেনে নিতে হবে।