ভারতে লকডাউন বাড়ল দুই সপ্তাহ

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। ছবি: এএফপি
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। ছবি: এএফপি

ভারতে লকডাউনের মেয়াদ আরও দুই সপ্তাহের জন্য বাড়ানো হলো। যদিও নিষেধাজ্ঞাও অনেক শিথিল করা হয়েছে। ১৭ মে পর্যন্ত লকডাউন জারি থাকবে। বন্ধ থাকবে সাধারণ যাত্রীদের জন্য বিমান, ট্রেন, মেট্রো ও বাস পরিষেবাও। দেশের কোথাও খোলা যাবে না মল, সিনেমা-থিয়েটার, জিম। বন্ধ থাকবে স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে জনজীবন আগের তুলনায় অনেকটাই স্বাভাবিক করে তোলা হচ্ছে।

আগামী দুই সপ্তাহ সারা দেশের কোথাও কোনো রকমের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অন্য কোনো ধরনের সমাবেশ করা যাবে না। খোলা যাবে না কোনো হোটেল, রেস্তোরাঁ ও স্পোর্টস কমপ্লেক্স।
ভারতে দ্বিতীয় দফার লকডাউনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে পরশু ৩ মে রোববার। আজ শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার শীর্ষ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারপরেই সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লকডাউনের মেয়াদ আরও দুই সপ্তাহের জন্য বাড়ানোর নির্দেশিকা জারি করে। সেই নির্দেশিকায় ৩ মের পর থেকে কোথায় কী খোলা থাকবে, কী চালু করা যাবে তা বিস্তারিতভাবে জানানো হয়েছে। নির্দেশিকা থেকে বোঝা যাচ্ছে, এত দিন নিষেধাজ্ঞার যে বজ্র আঁটুনি ছিল, গোটা দেশেই তা বহুলাংশে শিথিল করা হচ্ছে।
সারা দেশকে ইতিমধ্যেই তিনটি রঙে ভাগ করা হয়েছে। লাল, কমলা ও সবুজ। সবুজ এলাকা, যেখানে কোনো করোনার রোগী নেই। কমলা এলাকা, যেখানে গত দুই-তিন সপ্তাহে নতুন করে কোনো সংক্রমণ ঘটেনি। লাল এলাকা, যেখানে রোগীর সংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে সংক্রমণ ঘটে চলেছে। এই লাল এলাকাতেই কিছু কিছু অঞ্চল নির্ধারিত রয়েছে 'কনটেনমেন্ট' এলাকা বলে। যা কিনা মারাত্মকভাবে সংক্রমিত। নিষেধাজ্ঞার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে এই সব এলাকার জন্য। কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি, আহমেদাবাদ, হায়দরাবাদ, পুনের মতো বেশ কয়েকটা বড় বড় শহর লাল এলাকার মধ্যে পড়ছে। তার মধ্যে অনেক জায়গা চিহ্নিত রয়েছে 'কনটেনমেন্ট' এলাকা হিসেবে।
লাল এলাকা এবং বিশেষ করে সেই এলাকার মধ্যে 'কনটেনমেন্ট' অঞ্চলে কড়াকড়ি থাকছে সবচেয়ে বেশি। সেখানকার পরিস্থিতি কারফিউয়ের মতোই থাকছে। কেউ ঢুকতে বেরোতে পারবে না। সবকিছু সরবরাহ করা হবে সরকারের পক্ষ থেকে। বাকি দুই এলাকায় অনেক কিছুই শিথিল করা হয়েছে। এলাকা ভিত্তিক সরকারি ও বেসরকারি যান চলাচলেও অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে স্কুটার একা চালাতে হবে। মোটর গাড়িতে চালক ও দুজনের বেশি থাকতে পারবে না। সরকারি অফিস যেমন কম কর্মী দিয়ে চালানো হচ্ছে তেমনই হবে। ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক, ১০ বছরের কম বয়সীদের অকারণে বেরোনো যাবে না। সবচেয়ে বড় কথা, সন্ধে ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ থাকবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশিকা আসার আগের দিন বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকার গুরুত্বপূর্ণ এক সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিক হয়, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজ নিজ রাজ্যে ফেরত পাঠানো হবে। সেই অনুযায়ী শুক্রবার কাকভোরে তেলেঙ্গানা থেকে ঝাড়খন্ড রওনা হয় এক বিশেষ ট্রেন। ১ হাজার ২০০ পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে সেই ট্রেন ছাড়ে। যাত্রীদের প্রত্যেকের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়। নেগেটিভরাই যাওয়ার অনুমতি পান। সন্ধ্যায় কেরালার এর্নাকুলাম থেকে ওডিশার ভুবনেশ্বরে রওনা হয় আরও একটা পরিযায়ী শ্রমিক বোঝাই বিশেষ ট্রেন। সামাজিক দূরত্বের প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে সেই ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা কমানো হয়। এমন আরও বেশ কয়েকটা ট্রেন বিভিন্ন রাজ্যে যাওয়া আসা করবে। এরই পাশাপাশি বিদেশ থেকেও ভারতীয় শ্রমিক-কর্মীদের দেশে ফেরানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই কাজে প্রয়োজনে নৌবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হবে।
লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা শিথিল না করে সরকারের উপায়ও ছিল না। টানা ৪০ দিন লকডাউনের ফলে দেশের অর্থনীতির হাল খুবই খারাপ। ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞরা বলতে শুরু করেছেন, এখনই অর্থনীতি সচল করা না গেলে না খেতে পেয়ে গরিব মানুষদের মরতে হবে। রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজন দুদিন আগে এই অভিমত দিয়েছেন। ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণ মূর্তিও বলেছেন, এইভাবে আরও কিছুদিন চললে করোনার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যাবে অনাহারে। নারায়ণ মূর্তি বলেছেন, করোনা এখন 'নিউ নরমাল'। এর সঙ্গে সহাবস্থানের বিষয়টি মেনে নিয়েই আমাদের চলতে হবে।
কৃষি ক্ষেত্র আগেই উন্মোচিত হয়েছিল। গ্রামীণ শিল্পও। এবার লকডাউন জারি রেখেও দেশ জুড়ে আনুষঙ্গিক আরও অনেক কিছু শিথিল করার নির্দেশিকা জারি হলো। সরকারের মূল লক্ষ, করোনার মোকাবিলার পাশাপাশি অর্থনীতি যতটা সম্ভব সচল রাখা যাতে সাধারণ মানুষের কষ্ট কিছুটা লাঘব করা যায়।