আফ্রিকায় শনাক্তকরণে এগিয়ে ছোট দেশগুলো

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো করোনাভাইরাসের সংক্রমণে কাবু হলেও আফ্রিকাতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ এখনো কম। জনসংখ্যার হিসাবে থেকে দেখা যাচ্ছে, এই অঞ্চলে ৫৪টি দেশে মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৩৪ কোটি। এর বিপরীতে আক্রান্ত রোগী ৪৪ হাজার। আর এ পর্যন্ত মারা গেছেন প্রায় ১ হাজার ৮০০ এবং সুস্থ হয়েছেন প্রায় ১৫ হাজার। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, করোনা শনাক্তের পরীক্ষায় এই অঞ্চলের বড় দেশগুলোর তুলনায় আয়তনে ছোট দেশগুলো এগিয়ে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেমস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফোর তথ্য অনুসারে, আফ্রিকার একমাত্র দেশ লেসোথোতে কোনো করোনা রোগী নেই। ১ হাজারের বেশি রোগী রয়েছেন ১২ দেশে। সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়, প্রায় সাড়ে ছয় হাজার। এই অঞ্চলে প্রথম রোগী ধরা পড়েছিল মিসরে। দেশটিতে গতকাল রোববার পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার।

করোনার সংক্রমণ রোধের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে রোগী শনাক্তের ওপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে কোন দেশের পরিস্থিতি কী, সেটা জানা যেমন সহজ হয়, তেমনি এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, সেটা নির্ধারণও সহজ হয়। তবে আফ্রিকা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানিয়েছে, জনসংখ্যার হিসাবে দেশে দেশে এই রোগী শনাক্তের ক্ষেত্রে যে পার্থক্য, তা অনেক বেশি। সংস্থাটি এই অঞ্চলে মহামারি ঠেকাতে দেশগুলোর বিভিন্ন পদক্ষেপের সমন্বয়ে কাজ করছে।

আফ্রিকার যে দেশগুলো জনসংখ্যা অনুপাতে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা করেছে, সেগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে জিবুতি ও মরিশাস। এরপরই রয়েছে ঘানা। দেশটির সরকারের ভাষ্য, লকডাউন তুলে নেওয়ার পর সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করবে এই পরীক্ষা।

আফ্রিকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটিতে এ পর্যন্ত রোগী শনাক্তে পরীক্ষা করা হয়েছে দুই লাখের বেশি। যদিও মোট জনসংখ্যার তুলনায় এই পরীক্ষার সংখ্যা অতি নগণ্য। কারণ, দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ছয় কোটি।

এদিকে আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়া। বিবিসির নাইজেরিয়া প্রতিনিধি চি চি ইজুনদু বলেন, জনসংখ্যার তুলনায় দেশটিতে পর্যাপ্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই পরীক্ষার পরিমাণ বাড়ানো হবে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, প্রতিদিন পাঁচ হাজার পরীক্ষা। যদিও এখনো এক হাজার পরীক্ষাও করা হচ্ছে না।

প্রতিদিন কতজন রোগী পাওয়া গেছে, সেই তথ্য দিলেও কী পরিমাণ পরীক্ষা করা হচ্ছে, সেই তথ্য দিচ্ছে না ইরিত্রিয়া ও আলজেরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ। আর তানজানিয়া কদিন পরপর তথ্য দিচ্ছে। এমনও দিন আছে, যেদিন শুধু কজন সুস্থ হয়েছেন, সেই তথ্য দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক দেশই রয়েছে, যাদের করোনা পরীক্ষার সক্ষমতাই নেই।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এর খবরে বলা হয়েছে, আফ্রিকায় দরিদ্র মানুষের কথা বিবেচনা করে লকডাউন তুলে দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। এ ছাড়া অনেক দেশের জনগণের বাসা থেকে কাজ করার মতো ব্যবস্থা নেই। লকডাউনের কারণে অনেকের চাকরি চলে যাচ্ছে, বেতন কাটা হচ্ছে। যেসব দেশ লকডাউন শিথিল করেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কেনিয়া, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ঘানা, মিসর, আলজেরিয়া ও প্রজাতন্ত্রী কঙ্গো।