বিশ্বে করোনার সংক্রমণ থামছে না, মৃত্যু কমতির দিকে

বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩৭ লাখ। ছবি: রয়টার্স
বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩৭ লাখ। ছবি: রয়টার্স

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার কিছুটা কমে এলেও সংক্রমণ কিছুতেই কমছে না। এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রতিদিনই গড়ে ৮০ হাজার রোগী শনাক্ত হচ্ছে। একই সময়ে দৈনিক মৃত্যু হচ্ছিল ৬ হাজারের মতো। তবে সপ্তাহখানেক ধরে মৃত্যুর সংখ্যা বেশ কমে এসেছে।

করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফো। এই ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার। এর মধ্যে মারা গেছেন প্রায় ২ লাখ ৫৫ হাজার ৭১৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ১২ লাখ ২৫ হাজারের মতো।

ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্যমতে, দৈনিক সংক্রমণ ৮০ হাজার ছাড়িয়েছিল গত ২ এপ্রিল। সেখান থেকে গত সোমবার ৪ মে পর্যন্ত ৩৩ দিনে দৈনিক শনাক্ত হওয়া সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৮০ হাজারের ওপরে ছিল ২১ দিনই। ৮০ হাজারের কম ছিল মাত্র ১২ দিন। এই ১২ দিনের মধ্যে এক দিন বাদে সব দিনই এ সংখ্যা ছিল ৭০ হাজারের ওপরে।

২ এপ্রিল শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ২০ হাজার। এরপর ৪ মে পর্যন্ত সেই সংখ্যা বেড়ে ৩৬ লাখ ৪৩ হাজার হয়েছে। অর্থাৎ এই ৩৩ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ লাখ ২৩ হাজার। গড়ে প্রতিদিন আক্রান্ত হয়েছে ৭৯ হাজার ৫০০ জন। অর্থাৎ এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রতিদিন ৮০ হাজারের মতো মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। সর্বশেষ গত পাঁচ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন যথাক্রমে ৮৫ হাজার ৬৪৩ জন, ৯৪ হাজার ৫৫০ জন, ৮৩ হাজার ৩৩৫ জন, ৮২ হাজার ২৬০ জন এবং ৭৯ হাজার ৫৮২ জন।

অন্যদিকে, বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর হার ধীরে ধীরে কমছে বলেই মনে হচ্ছে। যেমন গত ২ এপ্রিল দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা প্রথমবার ৬ হাজার ছাড়িয়েছিল। ওই দিন মারা গিয়েছিলেন ৬ হাজার ২৭০ জন। সেখান থেকে গত ৩৩ দিনে এর চেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন ১৫ দিন। বাকি ১৮ দিন মৃত্যুর সংখ্যা ২ এপ্রিলের মৃত্যুর সংখ্যার চেয়ে কম ছিল। ৩৩ দিনে প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৯৬১ জনের। এর মধ্যে সর্বশেষ পাঁচ দিন ধরে সংখ্যাটা গড় হিসাবের বেশ কম। যেমন গত ৩০ এপ্রিল মারা যান ৫ হাজার ৭৯৫ জন, ১ মে ৫ হাজার ৬২৪ জন, ২ মে ৫ হাজার ২১৭ জন, ৩ মে ৩ হাজার ৪৮০ জন এবং ৪ মে ৪ হাজার ৯৬ জন।

করোনা মহামারিতে নাকাল দেশগুলোয় কয়েক দিন ধরেই দৈনিক মৃত্যুর হার বেশ কম। এর মধ্যে স্পেন ও ইতালিতে তো এই সংখ্যা তিন দিন ধরে ২০০ জনের কম। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, স্পেনের কর্তৃপক্ষ গতকাল বলেছে, পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আরও ১৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যু সাড়ে ২৫ হাজার ছাড়াল। দেশটিতে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা আড়াই লাখ ছুঁই ছুঁই।

বিবিসি জানায়, ইতালিতে সোমবার মারা গেছেন ১৯৫ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যু ২৯ হাজার ছাড়িয়েছে। ইতালিতে এ দিন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ২০০ জনের কিছু বেশি। সব মিলিয়ে সেদিন পর্যন্ত দেশটিতে রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ১২ হাজার ছুঁই ছুঁই। ফ্রান্সেও মৃত্যু অনেকখানি কমে এসেছে। সোমবার দেশটিতে মারা গেছেন ৩০৬ জন। আগের দুই দিন অবশ্য মৃত্যু ২০০ জনের কম ছিল। ফ্রান্সে এ নিয়ে মোট মারা গেছেন ২৫ হাজারের বেশি রোগী। দেশটিতে সোমবার পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার।

করোনা মহামারিতে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হওয়া যুক্তরাষ্ট্রেও গত দুই দিন মৃত্যু কমেছে। সোমবার সেখানে মারা গেছেন ১ হাজার ৩২৪ জন। আর রোববার মারা যান ১ হাজার ১৫৩ জন। অবশ্য ১ মে থেকেই দেশটিতে দৈনিক মৃত্যু ২ হাজারের নিচে নেমেছে। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যু ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। রোগী শনাক্ত হয়েছে ১২ লাখের বেশি।

তবে পরিস্থিতি এখন খারাপ হচ্ছে ব্রাজিল, রাশিয়াসহ অন্য কয়েকটি দেশে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, রাশিয়ায় গতকালও ১০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে টানা তিন দিন রাশিয়ায় দৈনিক রোগী শনাক্তের সংখ্যা ১০ হাজারের ওপরে। সব মিলিয়ে দেশটিতে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা এখন ১ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি। মৃত্যু দেড় হাজার ছুঁই ছুঁই। এর মধ্যে সোমবার থেকে গতকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৯৫ জন। ব্রাজিলে রোগী লাখ ছাড়িয়েছে রোববারই। সোমবার দেশটিতে শনাক্ত হয়েছেন ৭ হাজারের বেশি রোগী। মারা গেছেন ৩১৮ জন। দেশটিতে এ নিয়ে করোনায় মৃত্যু হলো ৭ হাজার ৩৪৩ জনের।

এনডিটিভি জানায়, প্রতিবেশী ভারতে গতকাল বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৯৫ জন। দেশটিতে এক দিনে এটিই সর্বোচ্চ মৃত্যু। এ নিয়ে ভারতে মৃত্যু দেড় হাজার ছাড়াল। ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৮৭৫ জন। দেশটিতে শনাক্ত হওয়া মোট রোগীর সংখ্যা এখন ৪৬ হাজারের বেশি। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৩ হাজার ১৬১ জন।

এএফপি জানায়, ইরানেও শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা এক লাখ ছুঁই ছুঁই। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩২৩ জন। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৬৩ জনের। সব মিলিয়ে দেশটিতে মারা গেছেন ৬ হাজার ৩৪০ জন।