অস্ট্রেলিয়ায় করোনা বিধিনিষেধ শিগগিরই শিথিল হবে

কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়ার জীবনযাত্রা। ছবিটি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিডনির হাইড পার্কের চার্চের কাছে তোলা। ছবি: প্রথম আলো
কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়ার জীবনযাত্রা। ছবিটি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিডনির হাইড পার্কের চার্চের কাছে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর চারদিকে অনেকটা যুদ্ধ জয়ের আনন্দ দেখা যাচ্ছিল। তেমনটা এখনো থাকলেও গতকাল সংক্রমণের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে দেশটিতে। গত কয়েক দিনে ৪ থেকে ৯, ৯ থেকে ১১, ১১ থেকে ১৮ জন এবং আজ ২৫ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন শিগগিরই করোনাবিষয়ক বিধিনিষেধ শিথিল করার আভাস দিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৬ হাজার ৮৪৯ জন। এ পর্যন্ত ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫ হাজার ৮৮৯ জন। দেশটিতে আজ পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা হয়েছে ৬ লাখ ৬৫ হাজার। অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি কেউ এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন বলে জানা যায়নি।

প্রমোদতরি রুবি প্রিন্সেসের ঘটনা নিয়ে গতকাল গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তাঁরা রুবি প্রিন্সেসের ঘটনায় সরকারি বিভাগের ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চান। ক্ষমা চাওয়ার এক পর্যায়ে মহামারি বিশেষজ্ঞ কেলি-অ্যান রিসেলার কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রমোদতরি রুবি প্রিন্সেস গত মাসের শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়ার জলসীমা ছেড়ে গেছে।

তবে সিডনিতে এর আগমনের পরিস্থিতি সম্পর্কে তদন্ত শুরু হয়েছে। বিশেষ তদন্ত ছাড়াও পুলিশ জাহাজটির বিষয়ে পৃথক অপরাধ তদন্ত করছে। ১৯ মার্চ জাহাজটির যাত্রীদের করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা ছাড়াই নামতে দেওয়া হয়েছিল সিডনিতে। এতে বিপুল সংক্রমণ ঘটে অস্ট্রেলিয়ায়। এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্তের ১০ জনের ১ জন ওই প্রমোদতরির যাত্রী। সিডনির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরতলির অ্যাংলিকেয়ারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বয়স্ক পরিচর্যাকেন্দ্র নিউমার্চ হাউসে করোনাভাইরাসে মৃত্যু নিয়ে চিন্তিত দেশটির সরকার। এ পর্যন্ত সেখানে ১৬ জন মারা গেছেন। কেন্দ্রটির ৬০ জনেরও বেশি কর্মী ও বাসিন্দা সংক্রমিত হয়েছেন।

তবে সংক্রমণ কিছুটা বাড়লেও কিছু রাজ্যে বিধিনিষেধ ইতিমধ্যে শিথিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ঘোষণা করেছেন, অস্ট্রেলিয়া তার করোনাভাইরাস নিষেধাজ্ঞাগুলো সহজতর করার থেকে ‘খুব বেশি দূরে নয়’। তবে কর্মক্ষেত্র অবশ্যই নিরাপদ করে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি সপ্তাহে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ব্যয় হচ্ছে চার বিলিয়ন ডলার। তিনি জনগণকে কোভিড নিরাপদ ট্র্যাকিং ‘কোভিডসেফ’ অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিতে বলেন। এটি কোভিড-১৯ বিধিনিষেধকে নিয়ন্ত্রণ করতে ভূমিকা রাখতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ায় শীত মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। প্রতিবছর অস্ট্রেলিয়ায় এই শীতে ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লুতে আক্রান্ত হয় হাজার হাজার মানুষ। মৃত্যুবরণও করে অনেক মানুষ। সরকার সেদিকে কঠোর নজর রাখছে। দ্রুত সবাইকে ফ্লুর টিকা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ।

ধারণা করা হচ্ছে, ৮ মে থেকে অনেকটায় শিথিল হবে অস্ট্রেলিয়ার বিধিনিষেধ। তবে প্রতিষেধক না আসা পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা অধ্যাপক ব্রেন্ডন মারফির ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রেখে ভাইরাসটিকে নির্মূল করার চেষ্টা এবং তারপর এর সঙ্গে ‘বাঁচতে শেখা যতটুকু সম্ভব’ই হবে অস্ট্রেলিয়ার জীবনযাত্রার মুল স্লোগান।

অস্ট্রেলিয়া তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ থেকে আরেকটি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে। ফ্লাইটটি ৭ মে ঢাকা থেকে মেলবোর্নের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে। বাংলাদেশ তার নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন থেকে একটি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে। ৮ মে বেলা ১টায় মেলবোর্ন থেকে বিশেষ ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।

শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা মূল্যে খাবারের আয়োজন করে অস্ট্রেলিয়ার মূল গণমাধ্যমে প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশি কমিউনিটি। এ ই দুর্যোগ পরিস্থিতিতে প্রবাসী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সিডনির বাংলাদেশি কমিউনিটির কিছু তরুণ-তরুণী। এক মাস ধরে বাঙালিপাড়াখ্যাত লাকেম্বার এক রেস্তোরাঁয় দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত প্রবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা মূল্যে খাবারের আয়োজন করছেন তাঁরা।