১৭ মের পর কী, সোনিয়ার প্রশ্ন

সোনিয়া গান্ধী
সোনিয়া গান্ধী

লকডাউন উঠে গেলে তারপর কী হবে, সরাসরি সেই প্রশ্ন তুলে দিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। একই প্রশ্ন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়েরও। আজ বুধবার কংগ্রেসশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও বিশিষ্ট নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স চলাকালে সোনিয়া এই প্রশ্ন তুলে জানতে চান, ১৭ মের পর কী হবে ও কেমন হবে, তার কোনো স্পষ্ট চিন্তাভাবনা কেন্দ্রের রয়েছে কি? কিসের ওপর ভিত্তি করে লকডাউন বারবার বাড়ানো হচ্ছে? উঠে যাওয়ার পরেইবা কী হবে? সরকারের তা জানানো দরকার।

সোনিয়ার মতো একই প্রশ্ন মনমোহন সিংয়েরও। তিনি বলেন, ‘তৃতীয় দফার লকডাউন শেষে কী হবে, তা আমাদের জানা দরকার। মুখ্যমন্ত্রীদের সেই প্রশ্ন ওঠাতে হবে।’

ভারতে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ৫০ হাজার ছুঁতে চলেছে। কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলোয় করোনা পরিস্থিতি কী রকম এবং কীভাবে তার মোকাবিলা করা হচ্ছে, সোনিয়া এই বৈঠকে তা পর্যালোচনা করেন। মুখ্যমন্ত্রীরা তাঁদের মতামত দেন। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং বলেন, বাস্তবিক পরিস্থিতি ঠিকভাবে খতিয়ে না দেখেই দিল্লি থেকে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। লাল-সবুজ এলাকা চিহ্নিত হচ্ছে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেন, অর্থনৈতিক প্যাকেজ দেওয়া না হলে রাজ্য চালানো অসম্ভব। ইতিমধ্যেই রাজস্থান ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বলেন, রাজ্যগুলোর নাভিশ্বাস উঠে গেলেও কেন্দ্র নির্বিকার। টাকা দিচ্ছে না।

ভারতের করোনা মোকাবিলা কীভাবে করা উচিত, সে বিষয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করছেন, যাতে সরকার তা থেকে উপকৃত হয়। কিছুদিন আগে তিনি কথা বলেছিলেন রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজনের সঙ্গে। রাজনের প্রস্তাব ছিল দরিদ্রদের হাতে ৬৫ কোটি টাকা সরাসরি দেওয়ার। তাতে চাহিদা বাড়বে। ফলে জোগান বাড়বে। সম্প্রতি রাহুল কথা বলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।

অভিজিৎ বলেছেন, ‘স্ট্রংম্যান দিয়ে করোনার মোকাবিলা সম্ভব নয়। এই তত্ত্বে বিশ্বাসীদের মোহমুক্ত হতে হবে। প্রয়োজন অর্থনীতি চনমনে করে তুলতে বড়সড় প্রণোদনা প্যাকেজ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার মোট জাতীয় উৎপাদনের ১০ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। ভারত দিচ্ছে মাত্র ১ শতাংশ! এতে লাভ হবে না। অন্তত ৬০ শতাংশ মানুষের হাতে নগদের জোগান দিতে হবে। ওই টাকা খরচ হলে অর্থনীতি চাঙা হবে।

অবশ্য অর্থনীতি চাঙা হওয়ার মতো ইঙ্গিত এখনো নেই; বরং তথ্য অনুযায়ী পরিস্থিতি খুবই খারাপ। দেশের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সংস্থা সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি (সিএমআইই) জানিয়েছে, ৩ মে শেষ হওয়া সপ্তাহে ভারতে বেকারত্বের হার হয়েছে ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ। কবে নাগাদ তা কমতে পারে, তার কোনো ইঙ্গিত নেই।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে বিশেষ ট্রেন চালানো হচ্ছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে প্রবাসী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানো। সে জন্য ৬৪টি বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই অবস্থায় কর্ণাটক সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যছাড়া না করতে বিশেষ ট্রেন বাতিল করে দিয়েছে। বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পার অনুরোধ, পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরে যাবেন না। রাজ্যে বন্ধ থাকা নির্মাণকাজ শুরু হতে চলেছে। অথচ আটক শ্রমিকেরা ঘরে ফিরতে চান। তাঁদের অভিযোগ, বকেয়া বেতন না দিয়ে তাঁদের জোর করে ধরে রাখা হচ্ছে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

কেন্দ্রীয় পরিবহনমন্ত্রী নিতিন গড়কড়ি আজ জানিয়েছেন, সরকারি যান চলাচল শিগগির শুরু হতে চলেছে। বিধিনিষেধ মেনেই তা চালানো হবে। শুরু হবে আন্তরাজ্য যান চলাচলও।
আজ সন্ধ্যায় ভারতের করোনার চিত্র এমন কিছু আশাপ্রদ নয়। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমিত ২ হাজার ৯৫৮। মোট সংক্রমণ ৪৯ হাজার ৩৯১।