লকডাউন আর সীমান্ত-বাণিজ্য নিয়ে সংঘাতে পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লি

বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত। প্রথম আলোর ফাইল ছবি
বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত। প্রথম আলোর ফাইল ছবি

ভারতে এখন তৃতীয় পর্যায়ের লকডাউন চলছে। এই লকডাউন শেষ হওয়ার কথা ১৭ মে। কিন্তু এই লকডাউন পশ্চিমবঙ্গে তেমন মান্যতা দেওয়া হচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি তারা আরও অভিযোগ তুলেছে, সীমান্ত–বাণিজ্য শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হলেও তা মানছে না পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ফলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থলবাণিজ্য শুরু হলেও তা বন্ধ হয়ে গেছে।

এতে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গত মঙ্গলবার অবিলম্বে সীমান্ত–বাণিজ্য শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহার কাছে লেখা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের এক চিঠিতে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় সরকার গত ২৪ এপ্রিল জানিয়েছিল, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান সীমান্ত দিয়ে জরুরি পণ্য আমদানি–রপ্তানিতে ছাড় দিতে হবে। এবং এ–সংক্রান্ত নির্দেশ রূপায়ণে একটি প্রতিবেদনও পাঠাতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন আসেনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে। চিঠিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানতে পেরেছে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে শুরু করা হয়নি বাণিজ্য। ফলে অসংখ্য ট্রাক জরুরি জিনিসপত্র নিয়ে আটকে পড়েছে সীমান্তে। বহু ট্রাকচালক ফিরতে পারছেন না। অনেকেই আটকে আছেন সীমান্তে।

স্বরাষ্ট্রসচিব তাঁর চিঠিতে বলেছেন, ১ মে লকডাউন বিধি–সংক্রান্ত এক নির্দেশে জানানো হয়েছিল, কোনো রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নিজেদের এলাকার সীমান্ত দিয়ে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে পণ্য চলাচল বা স্থলবাণিজ্য বন্ধ করতে পারবে না। বিষয়টি উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজ্যের মুখ্যসচিবকে লেখেন, এক তরফাভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সীমান্তপথে জরুরি পণ্য চলাচল বন্ধ রেখেছে। এটা দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আইনি বাধ্যবাধকতার ওপর বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে। রাজ্য সরকারের এহেন পদক্ষেপ দেশের বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ও সংবিধানে দেওয়া অধিকার অমান্য করার শামিল। স্বরাষ্ট্রসচিব এরপর মুখ্যসচিবকে অনুরোধ জানান সীমান্ত–বাণিজ্যে পণ্য চলাচলে ছাড় দিতে।

যদিও পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল বুধবার রাজ্য সচিবালয় নবান্নে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, সব দিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত পথে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলবাণিজ্য শুরু হয়েছিল। কিন্তু গত রোববার স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ ও অবরোধের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় এই বাণিজ্য।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের লকডাউন দিয়ে মোদি-মমতার সংঘাত চলছেই। কেন্দ্রীয় সরকারের দুটি বিশেষজ্ঞ দল কলকাতায় এসে করোনা চিকিৎসা ও লকডাউন প্রশ্নে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে কার্যত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে করোনা চিকিৎসায় অবহেলা, লকডাউন সঠিকভাবে না মানা এবং করোনা চিকিৎসার নমুনা পরীক্ষা সঠিকভাবে না হওয়া–সংক্রান্ত এক চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় দলের নেতা ও ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অপূর্ব চন্দ্র। যদিও এই প্রতিনিধিদল কলকাতায় এসে রাজ্যের মুখ্য সচিবকে ১১টি চিঠি দিলেও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে তারা প্রয়োজনীয় সাহায্য পাননি বলেও রাজ্য সরকারকে জানিয়েছেন।

চিঠিতে তাঁরা বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে করোনায় মৃত্যুর হার দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। করোনা আক্রান্তদের খুঁজে বের করতে ঠিকমতো টেস্ট করা হচ্ছে না। শুধু তা–ই নয়, রাজ্যের বহু স্থানেই মানা হচ্ছে না লকডাউন। মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে রাস্তায়। ক্রিকেট, ফুটবল খেলে রাস্তায়। হাটবাজারে প্রচুর মানুষের সমাগম হচ্ছে। ফলে লকডাউন মানা হচ্ছে না।

এই চিঠি পাওয়ার পর রাজ্য সরকার খেপে যায়। রাজ্য সরকার বলেছে, এটা কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ। রাজ্য সরকারকে হেয় করার এক প্রয়াস কেন্দ্রীয় সরকারের। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই লকডাউন কার্যকর করার জন্য এখনো মাঠে রয়েছে। বাড়ি বাড়ি ঘুরছে। সাহায্য–সহযোগিতা করছে, পরামর্শ দিচ্ছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, কলকাতা ও হাওড়ায় লকডাউন সেভাবে মানা হয়নি। মাস্ক পরার বালাই নেই। ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষ। রয়েছে নজরদারির অভাব। বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু এটা মানছে না রাজ্য সরকার। ফলে এই লকডাউন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় মোদি সরকারের সংঘাত বাড়ছেই।