করোনা জয়ের পথে জার্মানিতে আরও শিথিলতা

আঙ্গেলা ম্যার্কেল
আঙ্গেলা ম্যার্কেল

জার্মানির চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল গতকাল বুধবার ১৬ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে করোনা সংকট মোকাবিলায় লকডাউন বিধিগুলো আরও শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর আগে জার্মানিতে লকডাউন দ্রুত শিথিল করার বিষয় নিয়ে কয়েকটি রাজ্য সরকার দাবি জানিয়ে আসছিল।

গত ১৬ মার্চ করোনা সংকটের প্রাদুর্ভাব হ্রাস করতে এবার নিয়ে দুই দফা জার্মানিতে আরোপিত নানা বিধি শিথিল করা হলো। তবে আরও কিছু বিধি আগামী ৫ জুন পর্যন্ত চালু থাকবে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল জানিয়েছেন, জার্মানিতে লকডাউন ব্যবস্থার কারণে এই যাবৎ যে সুফল পাওয়া গেছে, তা ধরে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।


আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেন, ‘জার্মানিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম পর্যায়ে ছিল। তবে এই ভাইরাসজনিত মহামারির সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিন লড়তে হবে। তদুপরি আমাদের নেওয়া নানা লকডাউনসংক্রান্ত বিধিগুলো জার্মানির জনগণ মেনে চলার জন্য ও আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কারণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। সংক্রমণ হ্রাস পাওয়ার কারণে আমরা কিছুটা সাহস করেই বিধি ব্যবস্থা শিথিল করছি, তবে সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে।’
যেসব বিষয়গুলো লকডাউন ব্যবস্থায় আপাতত শিথিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো হলো:

১. দুটি পৃথক পরিবারের সদস্যরা এখন পার্কে বা বাইরে দেখা করতে পারবেন। তবে তাঁদের মধ্যে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

২. স্কুলের শিক্ষার্থীরা ধাপে ধাপে গ্রীষ্মকালীন ছুটির আগেই তাদের শিক্ষাঙ্গনে ফিরে আসবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরাও ইতিমধ্যে ফিরে এসেছে। তবে নতুন শিডিউল অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সবুজ ও লাল ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। অর্থাৎ একটি শ্রেণিতে ৩০ জন শিক্ষার্থী রইলে প্রথম ১৫ জন সবুজ শিক্ষার্থী দল যেদিন তাদের শ্রেণিতে যাবে, তার পরদিন দ্বিতীয় ১৫ জন বা লাল দল তাদের শ্রেণিকক্ষে যাবে।

৩. ডে কেয়ার বা কিন্ডারগার্টেনগুলো আপাতত বন্ধ থাকবে। তবে অভিভাবকদের জরুরি অবস্থার কথা বিবেচনা করে বর্ধিত ব্যবস্থা চালু থাকবে।
৪. রেস্টুরেন্টগুলো আবার ৯ মে থেকে চালু হবে। তবে রেস্টুরেন্টের ভেতরে টেবিলে বসার বিষয়ে ন্যূনতম এক মিটার দূরত্ব বিধি বজায় রাখতে হবে।

৫. বাস, ট্রাম, ট্রেনে বা দোকানপাট ও সুপারমার্কেটগুলোতে আবশ্যকীয়ভাবে মাস্ক পরতে হবে এবং রাস্তঘাটসহ সর্বত্র আগে ঘোষিত দেড় মিটার দূরত্ব বজায়ের ব্যবস্থা ১১ জুন পর্যন্ত চালু থাকবে।
৬. সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আবার খুলতে পারবে। পূর্বঘোষিত শুধু ৮০০ বর্গমিটার আয়তনের দোকান খোলার নিয়মটি আর থাকছে না। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দূরত্ব বিধি মানার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৭. জার্মানির জনপ্রিয় ফুটবল বুন্দেশলীগা মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে প্রথম বিভাগ এবং দ্বিতীয় বিভাগের খেলাগুলো পুনরায় শুরু হবে। তবে ফুটবল লিগ শুরু হওয়ার আগে দলগুলোর খেলোয়াড় ও সংশ্লিষ্টদের দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে থেকেই প্রশিক্ষণের পর্ব সারতে হবে। করোনা–পরবর্তী প্রথম খেলগুলো সম্ভবত দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে।

৮. বৃদ্ধাশ্রম ও হাসপাতালগুলোতে আবার সীমিত আকারে একান্তজনেরা দেখা করার সুযোগ পাবেন।

জার্মানির কিছু কিছু রাজ্য যেমন বাভ্যারিয়া, লোয়ার স্যাক্সনি ও মেক্লেনবুর্গ ফর পোমেন এরই মধ্যে ক্যাটারিং খাত ও পর্যটনশিল্প ক্রমে খোলার জন্য তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে। এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা জানিয়েছেন, আগামী গ্রীষ্মের জন্য পর্যটনশিল্পে বুকিংয়ের অনুরোধের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। তবে এই বছর গ্রীষ্মে জার্মানি থেকে বিদেশে ছুটি কাটাতে যাওয়া সম্ভব হবে কি না, সেই বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত জার্মানিজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৬৮ হাজার ৮৬৫। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৭১ জন। এই ভাইরাসে মারা গেছেন ৭ হাজার ৪০৩ জন। জার্মানিতে মোট আক্রান্তদের মধ্য প্রায় অধিকাংশ মানুষই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। উল্লেখ্য, গত দুই দিন জার্মানিতে কোনো করোনাজনিত মৃত্যু ঘটেনি।