করোনাকালে অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতি আলাদা নাম আন্ড্রুস

ড্যানিয়েল আন্ড্রুস। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
ড্যানিয়েল আন্ড্রুস। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিক। আতঙ্কে থমথম, কিছুটা দিগবিদিক অবস্থা। দুর্যোগ মোকাবিলায় বাড়ি-ঘর থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় কাউন্সিল, রাজ্য সরকার, ফেডারেল সবাই সবার মতো। সমন্বয়হীন বিধিনিষেধ, প্রতিরোধ, পরামর্শ। উন্নত দেশের প্রেক্ষাপটে বলা চলে, এক বিভ্রান্তকর পরিবেশ।

রাজ্য ও ফেডারেল সরকারের মধ্যে আপাতদৃষ্টে করোনাভাইরাস ভালো করে সামলানোর প্রতিযোগিতা মনে হলেও ভেতরে দলীয়-উপদলীয় প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন দল যেমন ক্ষমতায় রয়েছে, তেমনি স্থানীয় সরকারেও রয়েছেন আলাদা আলাদা দলের ক্ষমতাসীন মেয়র, কাউন্সিলর। রাজ্যের বিধিনিষেধ থাকলেও কাউন্সিলও কম যায় না। দেখা যায়, স্থানীয় সরকারের এই সিটি কাউন্সিলগুলো রাজ্যকে টপকে নিজেদের মতো মহামারির কিছু বিধিনিষেধ তুলে দেয়, কিংবা আবার জারি করে।

যখন সবেমাত্র অস্ট্রেলিয়ায় প্রাদুর্ভাব একটু কমার দিকে, তখনই সিডনির পূর্বাঞ্চলীয় সিটি কাউন্সিল র‍্যান্ডউইক তার তিন সমুদ্রসৈকতের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল হঠাৎ করে। তারপর পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে আবার বন্ধ করে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী ওয়েভার্লি সিটি কাউন্সিল আবার খুলে দেয় বিখ্যাত বন্ডাইসহ তাদের তিনটি সমুদ্রসৈকত।

 ফেডারেল সরকারে রয়েছে লিবারেল পার্টি জোট। এবং রাজ্য ও অঞ্চল সরকারে রয়েছে দেশটির বিরোধী দল অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার। আটটি রাজ্য ও অঞ্চলের পাঁচটিই লেবার পার্টির দখলে। তার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম শহর মেলবোর্নের ভিক্টোরিয়া রাজ্যের ক্ষমতায়ও লেবার পার্টি। বলা হয়, ওই রাজ্যের ড্যানিয়েল আন্ড্রুস হচ্ছেন দেশটির সবচেয়ে চৌকস প্রিমিয়ারদের (মুখ্যমন্ত্রী) একজন।

ড্যানিয়েল আন্ড্রুস প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন। কেন্দ্রীয় লেবার পার্টির দুরবস্থার মধ্যেও ২০১৮ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় দারুণভাবে জয় লাভ করেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়ায় রাজ্য ও অঞ্চল সরকার অনেক কিছুতেই স্বাধীন। আইন, ব্যবসা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা—সবকিছুতেই তাদের নিজস্ব অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। ফেডারেল সরকারের নির্দেশনা তারা নিজেদের মতো করে প্রয়োগ করতে পারে। আবার ফেডারেল সরকারের নির্দেশনার বাইরেও তারা প্রয়োজন অনুসারে বিধিনিষেধ দিতে পারে।

এবার যখন করোনাভাইরাসের মহামারি শুরু হয়, তখন কিছু ক্ষেত্রে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাপিয়ে ড্যানিয়েল আন্ড্রুসের মতামত প্রণিধানযোগ্য হয়ে ওঠে। শুধু তা–ই নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে লিবারেল পার্টির প্রিমিয়ারও আন্ড্রুসের কার্যক্রম দ্বারা প্রভাবিত হন।

ফলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই আন্ড্রুসের সঙ্গে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের লিবারেল পার্টির ক্ষমতাসীন প্রিমিয়ার গ্ল্যাডিস বেরেজিক্লিয়ান তাঁর রাজ্যে বিধিনিষেধ ঘোষণা করে দেন। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা নিয়েও ফেডারেল সরকারের সঙ্গে বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। একই দলের সরকার হয়েও একপর্যায়ে ফেডারেল ও রাজ্য সরকার বিধিনিষেধের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াতে থাকে রাজ্যজুড়ে।

এমন অবস্থায় ভিক্টোরিয়া রাজ্যের ড্যানিয়েল আন্ড্রুস হয়ে ওঠেন অনেকটা ছায়া প্রধানমন্ত্রীর মতো। যে ভূমিকায় থাকার কথা বিরোধী দল লেবার পার্টির প্রধান অ্যান্থনি অ্যালবানিজের, সে ভূমিকায় চলে আসেন আন্ড্রুস।

গত নির্বাচনে লেবার পার্টি হেরে গেলে বিল শর্টেন দলটির প্রধানের পদ হারান। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের খুব কাছাকাছি তিন সাংসদীয় এলাকার নেতা অ্যান্থনি অ্যালবানিজ, ক্রিস বুয়েন্স ও টনি বার্কের নাম উঠে আসে সম্ভাব্য প্রধান হওয়ার প্রতিযোগিতায়।

পরে যদিও প্রায় সমঝোতার মধ্য দিয়েই তিন নেতার মাঝে থেকে অ্যান্থনি অ্যালবানিজ বিরোধী দলের প্রধান হন। কিন্তু রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, অ্যালবানিজের চেয়ে আন্ড্রুস বেশি আলোকিত হয়ে উঠছেন।

আন্ড্রুসের বিপুল জনপ্রিয়তা ও নেতৃত্বের ক্যারিশমার কারণে লেবার পার্টির পরবর্তী নেতা নির্বাচনে তাঁকে ঠেকানো চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে অ্যালবানিজদের কাছে।

সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে আলাদা করেই আলোচিত হচ্ছে ড্যানিয়েল আন্ড্রুসের নাম। তিনি অনেক দূর যাবেন বলেই মনে করেন দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।