ইউরোপের দেশগুলোতে শিথিল হচ্ছে লকডাউন

নির্দিষ্ট দূরত্বে ভ্রমণে আর অনুমতি লাগবে না ফ্রান্সের বাসিন্দাদের। ছবি: রয়টার্স
নির্দিষ্ট দূরত্বে ভ্রমণে আর অনুমতি লাগবে না ফ্রান্সের বাসিন্দাদের। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রের পর ইউরোপের দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন। যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্সে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। লকডাউনের প্রায় সাত সপ্তাহ পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশটির পরবর্তী ধাপের পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ইউরোপের অন্যান্য দেশও দীর্ঘ লকডাউন পরবর্তী ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে। শিথিল করা হচ্ছে বিধিনিষেধ। খুলে দেওয়া হচ্ছে ব্যবসা–প্রতিষ্ঠান। অনেক দেশে স্কুলে যেতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা।

বিবিসি অনলাইনের খবরে তুলে আনা হয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের লকডাউন শিথিল করার তথ্য। এখানে সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হলো।

জার্মানি
জার্মানিতে লকডাউন শিথিল হচ্ছে। লকডাউন তুলে নেওয়ার নিয়ন্ত্রণ এখন থাকবে ১৬টি ফেডারেল রাজ্যের।তবে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, নতুন সংক্রমণ দেখা দেওয়া মাত্র জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জার্মানিতে সব দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষা রয়েছে, তাদের জন্য স্কুল আংশিকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে। ক্লোজড ডোরে আগামী ১৬ মে অনুষ্ঠিত হবে ইউরোপীয় লিগের বড় আসর বুন্দেসলিগা ফুটবল ম্যাচ। দুটি করে পরিবার একে অপরের সঙ্গে দেখা করতে পারবে। আগস্টের শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের উৎসব, সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।

ফ্রান্স
ফ্রান্সে ১৭ মার্চ থেকে কঠোরভাবে লকডাউন আরোপ করা হয়। খুব জরুরি প্রয়োজনে ভ্রমণের অনুমতি নিয়ে শহরের বাইরে যেতে পেরেছেন বাসিন্দারা। ওই বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। তিন সপ্তাহ পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। বাসিন্দাদের এখন বাইরে যেতে ভ্রমণের অনুমতিপত্র লাগবে না। বাড়ি থেকে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করা যাবে। প্রাথমিক ও নার্সারি স্কুল আজ সোমবার থেকে খুলে যাচ্ছে। বার ও রেস্তোরাঁ ছাড়া সব দোকানপাট খোলা যাবে। ১০ জনের কম সংখ্যক লোক হতে চাইলে অনুমতি নিতে হবে।

আয়ারল্যান্ড
আয়ারল্যান্ডে কঠোরভাবে লকডাউন আরোপ করা হয়।বাসিন্দাদের এখন বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে ঘোরাফেরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে ১৮ মে থেকে সব কিছু খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে পাঁচ ধাপের রোডম্যাপ নেওয়া হয়েছে। প্রতি তিন সপ্তাহে বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে।

বেলজিয়াম
বেলজিয়ামে রোববার থেকে একই পরিবারের লোকজন চারজন পর্যন্ত লোককে বাড়িতে দেখা করতে আসতে দিতে পারবেন। তবে এই লোকজন আবার অন্য কোথাও যেতে পারবেন না। ৪ মে থেকে কাপড়ের দোকান খুলে দেওয়া হয়েছে।গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে ১২ বছর বা এর বেশি বয়সী মানুষকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আজ থেকে অন্যান্য দোকানপাট খুলে দেওয়া হবে। ১৮ মে থেকে স্কুল খোলা হলেও একেকটি শ্রেণিকক্ষে ১০ জনের বেশি শিক্ষার্থী বসতে পারবে না। ৮ জুন থেকে ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ খুলে দেওয়া হবে।

নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসে লকডাউন শুরু থেকেই ঢিলাঢালা। আজ থেকে দেশটিতে লকডাউন শিথিলের পাঁচ ধাপের পরিকল্পনা কার্যকর হচ্ছে। স্কুলগুলো আংশিক খুলেছে। বার ও রেস্তোরাঁগুলো ১ জুন থেকে তাদের খোলা জায়গায় ক্রেতাদের বসতে দিতে পারবে।

অস্ট্রিয়া
অস্ট্রিয়া শুরুতে লকডাউন শিথিল করা দেশগুলোর একটি। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে ছোট ছোট দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়। দেশটির সরকার জানিয়েছে, দোকান খুলে দেওয়ার পর সংক্রমণের হার সেভাবে বাড়েনি। নতুন সংক্রমণের হার মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।

এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে লকডাউন শিথিল ডেনমার্কে। ছবি: রয়টার্স
এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে লকডাউন শিথিল ডেনমার্কে। ছবি: রয়টার্স

ডেনমার্ক
লকডাউন কার্যকর করা ইউরোপের প্রথম দেশ হচ্ছে ডেনমার্ক। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশটিতে লকডাউন শিথিল করা শুরু হয় এবং দেশটি লকডাউন রোডম্যাপের দ্বিতীয় ধাপের দিকে যায়। ১৪ এপ্রিল থেকে দিবাযত্নকেন্দ্র ও প্রাথমিক স্কুল খুলে দেওয়া হয়। তবে অভিভাবকেরা স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন না। শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ছুটি দেওয়া হয়। ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী পরীক্ষার্থীরা ১৮ মে থেকে স্কুলে যেতে পারবে। নির্দেশনা মেনে শপিং সেন্টার, ক্যাফে ও রেস্টুরেন্ট আজ থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে।

স্পেন
লকডাউন শিথিলের জন্য স্পেন চার ধাপের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে গত ৪ মে। ১৪ বছর বয়সী শিশুদের ছয় সপ্তাহের জন্য বাড়িতেই থাকতে হবে।সংক্রমণ পরিস্থিতির ওপর দুই সপ্তাহ পর বিধিনিষেধ শিথিল হবে ১০ জুন পর্যন্ত। ২৬ মে থেকে স্কুলগুলো আংশিকভাবে খুলে দেওয়া হবে। ১০ জুন পর্যন্ত রেস্তোরাঁ ও বার পুরোপুরি খুলবে না। ২৬ মে থেকে সিনেমা, থিয়েটার, প্রদর্শনী খুলে দেওয়া্ হবে। তবে তারা ধারণক্ষমতার মাত্র ৩০ শতাংশ পরিচালনা করার সুযোগ পাবে।

ইতালি
ইতালিতে কঠোর ও দীর্ঘ লকডাউন চলেছে। তবে এখন সৎকারের ক্ষেত্রে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।সবোর্চ্চ ১৫ জন অংশ নিতে পারবেন। বাড়ি থেকে ২০০ মাইলের মধ্যে লোকজনের চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মে মাসের শুরুতে কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। লোকজন এখন কিছুটা দূরে যেতে পারছে এবং অল্প সংখ্যক স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারছে। তবে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে ভ্রমণের ওপর এখনো নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ১ জুন থেকে রেস্টুরেন্ট ও বার খুলে দেওয়া হচ্ছে। ১৮ মে থেকে খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

রাশিয়া
ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো লকডাউন শিথিলে প্রস্তত নয় রাশিয়া। দেশটিতে সংক্রমণ এখনো বাড়ছে এবং গত সপ্তাহে কমপক্ষে ১০ হাজার নতুন সংক্রমণ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন লকডাউনের ব্যাপারে যা করলে সবচেয়ে ভালো হয়, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার স্থানীয় সরকারগুলোর ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মস্কোয় ৩১ মে পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ বহাল রাখা হয়েছে।রাজধানীর দোকানে যেতে ও গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে কাল মঙ্গলবার থেকে প্রত্যেকের মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে।সেখানে শুধু খাবারের ও ওষুধের দোকান খোলা।