নিজস্ব পন্থায় লকডাউন প্রত্যাহার করবে উত্তর আয়ারল্যান্ড

সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করলেও পাঁচ ধাপে লকডাউন তুলে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে উত্তর আয়ারল্যান্ড। ছবি: রয়টার্স
সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করলেও পাঁচ ধাপে লকডাউন তুলে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে উত্তর আয়ারল্যান্ড। ছবি: রয়টার্স

মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে বিভিন্ন দেশ লকডাউন তুলে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন তো কোনো দিকে না তাকিয়ে যেনতেনভাবে লকডাউন প্রত্যাহার করতে চায়। একই রকম প্রবণতা বেশ কিছু দেশের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় আজ মঙ্গলবার উত্তর আয়ারল্যান্ড পাঁচ ধাপে লকডাউন প্রত্যাহারের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে। যদিও তারা কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেনি।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে আরোপিত লকডাউন তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে উত্তর আয়ারল্যান্ড। পাঁচ ধাপে এই লকডাউন প্রত্যাহার করা হবে। তবে এই প্রত্যাহার কত দিনের মধ্যে হবে, সে সম্পর্কে ঘোষণায় কিছু বলা হয়নি।

ঘোষণায় উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রাদেশিক সরকার জানায়, কৃত্রিমভাবে কোনো তারিখ নির্ধারণের বদলে, তারা বিজ্ঞানের ওপর নির্ভর করবে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, চিকিৎসকদের পরামর্শ এবং এই অনুযায়ী মহামারি মোকাবিলায় যা দরকার, তা-ই করা হবে। এক ধাপ থেকে অন্য ধাপে যাওয়ার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে করা পর্যালোচনার ওপর নির্ভর করা হবে। এখন পর্যন্ত ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা কাজ করেছে। এভাবে একযোগে কাজ করলে ক্রমে বিধিনিষেধ শিথিল করা সম্ভব হবে। কতটা শিথিল করা হবে বা আদৌ করা হবে কি না, তার পুরোটাই নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর।

উত্তর আয়ারল্যান্ড যুক্তরাজ্যের অংশ হলেও স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের মতোই কিছুটা স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে। আজ মঙ্গলবার পাঁচ ধাপে লকডাউন প্রত্যাহারের যে ঘোষণা তারা দিল, তাতে প্রয়োজনীয়তা, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রামাণ্য বিষয়কে আস্থায় নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কিত সক্ষমতা ও বিস্তার প্রতিরোধ—এই বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।

১২ পাতার এই ঘোষণায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রথম ধাপে যাঁরা ঘর থেকে কাজ করতে পারছেন না, তাঁদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে এটি অবশ্যই হবে বিভিন্ন ধাপে ভাগ করে। একযোগে সব খাত নয়। বড় বড় খুচরা দোকান, বহিরাঙ্গন ও ক্রীড়া প্রাঙ্গণ খুলে দেওয়া হবে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চার থেকে ছয়জন করে মানুষ বাইরে পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবে। গির্জায় গণজমায়েত থাকবে না। তবে ব্যক্তিগত প্রার্থনা করা যাবে।

দ্বিতীয় ধাপে, খাদ্যসামগ্রী বিক্রির সঙ্গে যুক্ত নয় এমন খুচরা দোকানগুলো খোলার অনুমতি পাবে। তবে তার আগে তাদের অবশ্যই ক্রেতাদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো ব্যবস্থা করতে হবে। এই ধাপে উন্মুক্ত স্থানে ১০ জন পর্যন্ত মানুষ পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবে। বদ্ধ স্থানে এ সংখ্যা দু থেকে চারজনে সীমাবদ্ধ থাকবে এবং তা–ও ১০ মিনিটের জন্য। কিছু পাঠাগার ও জাদুঘর খুলে দেওয়া হবে। স্পর্শের প্রয়োজন হয় না, এমন খেলাধুলার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা যাবে। এই ধাপে আরও কিছু খাতের কর্মীদের কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার অনুমতি মিলবে।

তৃতীয় ধাপে অফিস-আদালত খুলবে। তবে আগের মতোই যেসব কাজ ঘরে করা সম্ভব, সেগুলো ঘরেই করতে হবে। স্কুলসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম সীমিত পরিসরে শুরু করতে পারবে। সীমিত পরিসর বলতে, শিক্ষার্থীদের গ্রুপ করে দেওয়া হবে। এই গ্রুপগুলোর মধ্যে একটি যদি স্কুলে আসে, তবে অন্যটি বাসায় বসে অনলাইন ক্লাস করবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে সর্বোচ্চ ৩০ জনের জমায়েতের অনুমতি মিলবে। জাদুঘর, গ্যালারি ও কনসার্ট আবার চালু হবে। বদ্ধ স্থানে স্বল্প সময়ের জন্য ইভেন্ট বা মিটিং আয়োজন করা যাবে।

চতুর্থ ধাপে সেলুন, ট্যাটু পারলারের মতো ব্যবসাগুলো চালু করা যাবে। সব শিক্ষার্থীর জন্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। গির্জাগুলো চালু করা হবে পূর্ণমাত্রায়। উন্মুক্ত স্থানে কনসার্ট আয়োজনের অনুমতি মিলবে পুরোদমে। তবে অবশ্যই কিছু বিধিনিষেধ মেনে। পঞ্চম ধাপে পর্যটন খাতের প্রতিটি ধাপ খুলে দেওয়ার অনুমতি মিলবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোদমে চলবে। গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হবে। নাইট ক্লাবসহ বিভিন্ন বিনোদন খাতগুলো চালু হয়ে যাবে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর আয়ারল্যান্ড কর্তৃপক্ষ বলেছে, আগের ধাপে সফল হলেই কেবল পরের ধাপে উত্তরণ করা যাবে। আর এই সাফল্যের বিষয়টি নির্ধারণ করবে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেল।