করোনা মোকাবিলায় ভারতে ২০ লাখ কোটির আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা

নরেন্দ্র মোদি
নরেন্দ্র মোদি

করোনার মোকাবিলা করে আগামী দিনে আত্মনির্ভর ভারত গঠনের উদ্দেশে ২০ লাখ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজের কথা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ মঙ্গলবার রাতে জাতির প্রতি ভাষণে এই প্যাকেজের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, একুশ শতকে বিশ্বের নেতৃত্ব ভারতই দেবে। তিনি বলেন, এই প্যাকেজ দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের ১০ শতাংশ। এইভাবে ভারত ‘গ্লোবাল সাপ্লাই চেন’এর অংশীদার হয়ে উঠবে। আত্মনির্ভর ভারত গড়ে উঠবে।

এই সঙ্গে মোদি জানান, চতুর্থ দফার লকডাউনের চরিত্র কী হবে তা ১৮ মের আগেই জানানো হবে। রাজ্যগুলোর কাছ থেকে মতামত নিয়ে তা জানানো হবে। তৃতীয় দফার লকডাউন ১৭ মে শেষ হচ্ছে। তিন দফায় মোট ৫৪ দিন ধরে ভারত অবরুদ্ধ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আর্থিক প্যাকেজে কৃষি, শ্রমিক, মৎস্যজীবী, মধ্যবিত্ত, শিল্পপতি সবার জন্য এমন কিছু থাকবে যা ভারতকে আগামী দিনে আত্মনির্ভর করে তুলবে। এই প্রসঙ্গে তিনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি স্থানীয় উৎপাদনের ওপর বিশেষ জোর দেন। বলেন, স্থানীয় উৎপাদনকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাঁর কথায়, ‘লোকালের (দেশি) জন্য ভোকাল হতে হবে।’

করোনা আক্রান্ত পৃথিবীতে চীনা নির্ভরতা কমানোর একটা উদ্যোগ সরকারি ও বেসরকারি স্তরে শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে শিল্প মহলের সঙ্গে কথাও বলেছেন। চীনা পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন বিজেপি ও সংঘ সমর্থিত সংগঠন। শিল্প মহলের সঙ্গে বৈঠকে মোদি জানতেও চেয়েছেন, কোন কোন ক্ষেত্রে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প সফল হতে পারে। মঙ্গলবার রাতে আত্মনির্ভরতার ওপর জোর দিয়ে বিদেশি নির্ভরতা কমানোর কথাই আরও একবার তিনি মনে করিয়ে দেন। বলেন, পাঁচটি খিলানের ওপর জোর দিয়ে আত্মনির্ভর ভারত গড়ে উঠবে। অর্থনীতি, অবকাঠামো, প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থা, গণতন্ত্র ও জনসংখ্যা এবং চাহিদা-জোগানে সমতা। মোদি বলেন, গত ৬ বছরের সংস্কারের দরুন ভারত এখন অনেক বেশি সমর্থ। জনধন, আধার ও মোবাইল ক্ষমতায় ভর দিয়ে সরকার গরিবের ঘরে পুরো টাকা পৌঁছে দিয়েছে। কেউ এমন কথা কল্পনাও করেনি।

চতুর্থ দফাতেও যে লকডাউন কোথাও কোথাও বহাল থাকবে, সোমবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সেই ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন। মঙ্গলবারও বুঝিয়ে দেন, লকডাউন অব্যাহত থাকবে যদিও জনজীবন থমকে থাকবে না। সেই লকডাউনের চরিত্র রাজ্যের সঙ্গে কথার ভিত্তিতে ঘোষিত হবে।

সরকারস্তরীয় কিছু সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, দেশ জুড়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আসা শুরু হচ্ছে। একটি সিদ্ধান্ত দিল্লি থেকে দেশের ১৫টি বড় শহরে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর। মঙ্গলবার থেকে তা শুরু হয়েছে। অন্যটি বিমান পরিষেবা শুরু করা নিয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ। যাত্রীবাহী বিমান পরিষেবা শুরুর যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, তাতে পরিষ্কার, সরকার আপাতত অনেক সাবধানতার সঙ্গে বিমান চালাবে। যেমন, কেবিন ব্যাগ নেওয়া যাবে না। আরোগ্য সেতু অ্যাপ থাকতে হবে। যাত্রার দুই ঘণ্টা আগে বিমান বন্দরে পৌঁছতে হবে এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরেই বিমানে ওঠার ছাড়পত্র দেওয়া হবে। তার আগে প্রত্যেক যাত্রীকে নিজের সম্পর্কে বিস্তারিত একটি ফরম পূরণ করতে হবে।

সোমবারের বৈঠকে বেশ কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, রাজ্যের কোন জেলার কোন কোন অঞ্চল ‘হট স্পট’ তা ঠিক করার ভার রাজ্যের হাতেই থাকা উচিত। দিল্লি থেকে নিয়ন্ত্রিত হওয়া ঠিক নয়। এতে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।