আত্মনির্ভরতার পথে ভারতে স্বদেশি পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত

নরেন্দ্র মোদি
নরেন্দ্র মোদি

আত্মনির্ভর ভারত গড়ার সংকল্প ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সরকারি পদক্ষেপ শুরু হলো। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বুধবার জানিয়ে দিলেন, ১ জুন থেকে দেশের সর্বত্র আধা সামরিক বাহিনীর ক্যানটিনে শুধুই দেশি পণ্য বিক্রি করা হবে।

গত মঙ্গলবার জাতির প্রতি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০ লাখ কোটি রুপির আর্থিক প্যাকেজের কথা ঘোষণা করেন। করোনায় আক্রান্ত অর্থনীতি চাঙা করাই ওই বরাদ্দের উদ্দেশ্য। প্যাকেজের ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তুলতে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র ওপর জোর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘লোকাল’য়ের (স্থানীয়) জন্য ‘ভোকাল’ হতে হবে। প্রকারান্তরে তিনি বিদেশি পণ্য বর্জনের প্রয়োজনীয়তার ওপরই জোর দিয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার টুইট করে বলেন, আধা সামরিক বাহিনীর ক্যানটিনগুলোয় এবার থেকে শুধুই দেশি পণ্য বিক্রি করা হবে।

টুইটে অমিত শাহ বলেন, দেশে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর যত ক্যানটিন রয়েছে, সব জায়গায় ১ জুন থেকে শুধুই দেশি পণ্য বিক্রি করা হবে। এই ক্যানটিনগুলোয় বছরে মোট ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়। এর ফলে প্রায় ১০ লাখ বাহিনীর পরিবারের ৫০ লাখ সদস্য এবার থেকে শুধুই দেশি পণ্য ব্যবহার করবেন। অমিত শাহ অন্যদের অনুরোধ করেছেন, তাঁরাও যেন এভাবে দেশি পণ্য ব্যবহারের ওপর জোর দেন, আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলেন।

কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে রয়েছে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স বা ‘সিআরপিএফ’, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স বা ‘বিএসএফ’, সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স বা ‘সিআইএসএফ’, ইন্দো টিবেট বর্ডার পুলিশ বা ‘আইটিবিপি’, সশস্ত্র সীমা বল বা ‘এসএসএফ’, অসম রাইফেলস ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড বা ‘এনএসজি’।

ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী মোদি মেক ইন ইন্ডিয়ার ওপর জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু বিদেশি নির্ভরতা বিশেষ কমানো যায়নি, বরং চীনা পণ্যের ওপর ভারতের নির্ভরতা দিন দিন বেড়েই গেছে। দুই দেশের বাণিজ্যের সিংহভাগ চীনের অনুকূলে। এই নির্ভরতা কমাতে দুই বছর আগে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ চীনা পণ্য ব্যবহার নিষিদ্ধ করার কথা বলে। প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, এই আহ্বান বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠন অনুমোদন করবে না। তা ছাড়া ভারতীয় অর্থনীতিকে চীন সমৃদ্ধ করছে। করোনার দরুন গোটা বিশ্ব চীনকে দায়ী করছে।

জাপান সরকার ৯৮৯ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা বলেছে সেই সব শিল্পকে, যারা চীন থেকে তাদের কারখানা সরিয়ে আনবে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ ও তাদের অনুমোদিত স্বদেশি মঞ্চও নতুন করে চীনা পণ্য বর্জনের দাবি জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, করোনা–উত্তর পৃথিবীতে ভারতকে ‘গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন’–এর অংশীদার হতে হবে। আধা সামরিক বাহিনীর ক্যানটিন থেকে শুধু দেশি পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত সেই লক্ষ্য পূরণেরই অঙ্গ।