লকডাউনের রুশ কৌতুক

লকডাউন, জনস্রোত, বাজার খুলে দেওয়া, মধ্যবিত্তের লজ্জা ইত্যাদি নিয়ে যখন আপনি চিন্তিত, তখন একদল মানুষ এই সমস্তটাকেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছেন। মনে করছেন, জীবনকে দেখতে হয় হাস্যরসের মধ্য দিয়ে। যা–ই ঘটুক না কেন, জীবনানন্দই (জীবনে আনন্দ) বেঁচে থাকার সর্বোত্তম পথ।

আর এই পথ খোঁজার জন্য বরাবর রুশিরা অগ্রবর্তী দল গড়েই রাখে। কী তৈরি হচ্ছে রুশ মস্তিষ্কে, তা একটি জেনে নিই আমরা। এ কথা কে না জানে, কড়াভাবে যে দেশ শাসন করা হয়, সে দেশেই রসিকতা চলে বেশি। সোভিয়েত যুগেও জীবনকে কৌতুকময় করতে জুড়ি ছিল না রুশদের। এখনো তারা পিছিয়ে নেই।

যে কৌতুকগুলো বলব, তার ব্যাখ্যা দেব না। ব্যাখ্যার পর যদি কৌতুক বুঝতে হয়, তাহলে সে কৌতুকের কোনো মানে হয় না। কৌতুকটি পড়ার পর আপনার মনে যদি হাস্যরস এসে দোলা না দেয়, তাহলে আপনাকে আনন্দ দিতে ব্যর্থ হবে সে। তবে মনে রাখবেন, এই কৌতুকগুলো সৃষ্টি হয়েছে লকডাউনে অতিষ্ঠ মানুষের মস্তিষ্কে। সুতরাং, সে কথা বিবেচনায় রেখেই পড়তে বলব।

১.
‘একটা খেলা খেলবে?’

‘কেন খেলব না। খেলার নিয়মটা বলো।’

‘আমি দুহাতে আমার চোখ ঢেকে রাখব। সেই ফাঁকে তুমি পালিয়ে যাবে। এরপর আর কোনো দিন আমার জীবনে ফিরে আসবে না।’

২.
লকডাউনের পর ব্যবসার অবস্থা কী হবে, তা নিয়ে দুই বন্ধুর কথোপকথন:

‘এসো, ব্যবসা নিয়ে কথা বলি। তোমার কাছে যে টাকা আছে, সে টাকা দিয়ে তুমি কী খুলতে পারো?’

‘সে টাকা দিয়ে আমি শুধু জানালা খুলতে পারব!’

৩.
করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য যে কিটগুলো আনা হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে সন্দেহ জাগল এক দেশের প্রেসিডেন্টের। তিনি নকল নমুনাসহ পাঠিয়ে দিলেন করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাতে। কয়েক দিন পর যে ফলাফল পাওয়া গেল, তা ছিল এ রকম: পেঁপে, নারকেল আর ছাগলের শরীরে করোনাভাইরাস আছে। গাড়ির তেল থেকে যে নমুনা নেওয়া হয়েছে, তা করোনামুক্ত!

৪.
মাতালেরা আসলে ভালো মানুষ। টাকা ওদের নষ্ট করার আগেই ওরা মদ কিনে টাকাদের নষ্ট করে দেয়।

৫.
‘আহা! তুমি কী সুন্দর। সত্যিই সেই লোকটি ভাগ্যবান…’

‘তুমিই তো সেই ভাগ্যবান লোকটা হতে পারো!’

‘এর মধ্যে আবার আমাকে টেনে আনছ কেন?’

৬.
‘বিজ্ঞপ্তি

আমাদের বাগানবাড়ির সবজিখেত থেকে আগাছা পরিষ্কার করার জন্য কোনো মধ্যবিত্ত লাজুক দম্পতিকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমাদের বাগানবাড়িও পরিষ্কার হবে, তাদেরও পেট ভরবে।’

৭.
‘আপনার ছেলে একটা অলস, বদমাশ। ও বাড়ির কাজও অন্যের খাতা থেকে নকল করে নেয়।’

‘কী বলছেন আপনি? এখন তো অনলাইন ক্লাস হচ্ছে!’

‘আপনি কি জানেন না, আপনার ছেলে হ্যাকার?’

৮.
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কমানোর একটাই পথ আছে—আক্রান্ত মানুষের মধ্যে আর করোনার পরীক্ষা না করা।

৯.
প্রচণ্ড আশাবাদীরা চলে মাস্ক ছাড়া, হতাশাবাদীরা মাস্ক মুখ থেকে নামায়ই না, আর বাস্তববাদীরা বাড়ি থেকে বের হয় না।

১০.
কোয়ারেন্টিন শেষ হলে কিছু মানুষকে বলবই না যে কোয়ারেন্টিন শেষ হয়েছে!

১১.
রাশিয়ায় করোনাভাইরাসের মহামারি কখন শেষ হবে জানেন? যখন দেখবেন টেলিভিশনের টকশোগুলোয় করোনাভাইরাস নিয়ে কথা না বলে আবার ইউক্রাইন নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে।

১২.
মস্কোতে খুবই কড়া কোয়ারেন্টিন। পথচারী আর বাসযাত্রীদের জন্য স্পেশাল কার্ড রয়েছে। মাস্ক ছাড়া, কার্ড ছাড়া বাড়ি থেকে বের হলে বিশাল জরিমানা। কিন্তু দোকানগুলোতে ঢোকা যাবে মাস্ক ছাড়াই। কেন জানেন? মানুষ দেখুক, কাদের হাতে এখনো টাকা আছে।

১৩.
আগে যখন কেউ বন–জঙ্গলে হারিয়ে যেত, তখন তাকে খুঁজে বের করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করত পুলিশ। আর এখন লকডাউন ভাঙার অভিযোগে তাকে জরিমানা করা হয়।

১৪.
এখন থেকে ৩০ বা ৪০ বছর পর যখন আপনার আলঝেইমার রোগ হবে, তখনো আপনি ২০২০ সালের এপ্রিল–মে মাসে কী ঘটেছিল আপনার জীবনে, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করতে পারবেন, কোনো ভুল ছাড়াই!

১৫.
আপনি হয়তো ভাবছিলেন, ২০২০ সালের সবচেয়ে বাজে খরচ করেছেন শীতের জুতো কিনে। পরে দেখলেন, আপনার সবচেয়ে বাজে খরচ ছিল লিপস্টিক কেনাটা!

১৬.
এই সময়টা কেটে গেলে সিনেমা শুরু হওয়ার আগে লেখা উঠবে, ‘এই ছবিতে করমর্দন, শারীরিক স্পর্শ এবং কোনো কারণ ছাড়াই রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য রয়েছে।’

১৭.
এই লকডাউনের সময় যদি আপনার ওজন কয়েক কেজি বেড়ে যায়, তাহলে দয়া করে ওজন কমানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠবেন না। শরীরে জমে থাকা চর্বি আগামী বছর আপনার কাজে লাগবে।

১৮.
এখন বিমান কোম্পানিগুলো বিজ্ঞাপন দিয়ে বলছে, ‘আপনারা নিশ্চয়ই আমাদের হৃদয় দিয়ে বুঝবেন। এই কঠিন সময়টি যেন আপনাদের সহযোগিতায় পার হতে পারি, সে প্রার্থনা করবেন।’

ভুক্তভোগী যাত্রী তার উত্তরে লিখেছেন, ‘সহমর্মিতা চাইছেন ভালো কথা, কিন্তু কোথায় ছিলেন আপনি, যখন ২৩ কেজির চেয়ে মাত্র ১০০ গ্রাম বেশি হওয়ায় আপনারা আমাকে বেশি টাকা দিতে বাধ্য করেছিলেন?’