তিস্তাপার থেকে চিরপ্রস্থান দেবেশ রায়ের

দেবেশ রায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি, কলকাতা
দেবেশ রায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি, কলকাতা

'বাঘারু তিস্তাপার ও আপলচাঁদ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। মাদারিও তার সঙ্গে যাচ্ছে। যে–কারণে তিস্তাপার আপলচাঁদ থেকে শালবন উৎপাটিত হবে—সেই কারণেই বাঘারু উৎপাটিত হয়ে গেল। ...এ বৃত্তান্ত এখানেই শেষ। এই প্রত্যাখ্যানের রাত ধরে বাঘারু মাতারিকে নিয়ে হাঁটুক, হাঁটুক, হাঁটুক...'

তাঁর 'তিস্তাপারের বৃত্তান্ত' উপন্যাস এখানেই শেষ হয়। কিন্তু প্রান্তজনের এসব লড়াই শেষ হয়েও শেষ হয় না। এসব পীড়িত, উৎপাটিত মানুষের কথা তিনি বলেছেন আমৃত্যু। এসব কথা বলতে বলতেই তিস্তাপার থেকে কোনো এক অজানা পথে পাড়ি জমালেন দেবেশ রায়। দেবেশ রায়, যিনি তিস্তাপারের মানুষ ছিলেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১০ টা ৫০ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দেবেশ রায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর তাঁর জন্ম বাংলাদেশের পাবনা জেলায়। কলকাতার বাগুইহাটি এলাকায় থাকতেন তিনি। বুধবার সকালে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে তাঁকে ভর্তি করা হয় একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে। রাখা হয় নিবিড় পরিচর্যা ওয়ার্ডে। কাল দুপুরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। রাতে তিনি মারা যান। তিনি কোভিড–১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলেন কি না, তা জানতে তাঁর লালারস পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তাঁর একমাত্র ছেলে থাকেন ভারতের গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদে। তাঁর সহধর্মিনী আগেই প্রয়াত হয়েছেন।

এই সাহিত্যিক ছিলেন বামপন্থী ঘরানার । বেড়ে ওঠা পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে। সেখানেই গড়ে ওঠে তাঁর বামপন্থী রাজনীতির ভিত। কলকাতার শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস ছিল 'যযাতি'। ৫০ বছর ধরে সাহিত্য অঙ্গনে অবদানরাখা এই সাহিত্যিক লিখেছেন প্রচুর উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ। ১৯৯০মালে তিনি 'তিস্তা পারের বৃত্তান্ত' উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন ভারতের সাহিত্য একডেমি পুরস্কার।

এই লেখকের লেখা অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে —উদ্বাস্তু, তিস্তাপুরাণ, বরিশালের যোগেন মন্ডল, নিরস্ত্রীকরণ কেন , কলকাতা ও গোপাল, সময় অসময়ের বৃত্তান্ত, শরীরে সর্বসতা', মানুষ খুন করে কেন, কর্পোারেট, প্রতিবেদন, উপন্যাসের নতুন ধরনের খোঁজে, নানাবিধ আত্মরক্ষা, রুরাল ইন্ডিয়া পারসপেক্টিভ-২০১৭ উল্লেখযোগ্য।

দেবেশ রায়ের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য অঙ্গনে। তারঁ মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন কলকাতার কবি ,সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিসেবীরা।