করোনায় কাঁপছে লাতিন অঞ্চল

লাতিন আমেরিকার দেশ মেক্সিকোতে এক দিনে সর্বোচ্চ পরিমাণ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দেশটিতে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৪০৯ জন। আর ব্রাজিলে ওই দিন মারা গেছেন ৮৩৫ জন। এই দুই দেশের পাশাপাশি লাতিন আমেরিকার বাকি দেশগুলোতে ব্যাপক হারে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। 

এই অঞ্চলের দেশগুলোর শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম, করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফো ও যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেমস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে রোগীর সংখ্যা ছিল সাড়ে ৪ লাখ। এই অঞ্চলে মারা গেছেন প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার। আর সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৭১ হাজারের বেশি করোনা রোগী। মেক্সিকোর বর্তমান পরিস্থিতি উল্লেখ করে দেশটির কর্মকর্তারা গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, করোনা সংক্রমণের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে দেশটি। ওই দিন প্রথম এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে। দেশটিতে সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যুও বাড়ছে। বৃহস্পতিবার দেশটিতে করোনায় মারা যান প্রায় ৩০০ জন। দেশটিতে বর্তমানে রোগী রয়েছেন প্রায় সাড়ে ৪২ হাজার।

>মেক্সিকোতে এক দিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত
ব্রাজিলে বেড়েই চলছে মৃত্যু ও সংক্রমণের সংখ্যা

মেক্সিকোতে এমন সময় রোগী বাড়তে শুরু করল, যখন দেশটি লকডাউন শিথিল করে জনজীবন স্বাভাবিক করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকার চাইছে, দেশটির স্থবির হয়ে থাকা অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে। তারা চাইছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লাগোয়া সীমান্ত এলাকার কারখানাগুলো চালু করতে। তবে মেক্সিকোর অ্যাসিস্ট্যান্ট হেলথ সেক্রেটারি হুগো লোপেজ-গ্যাতেল বলেন, করোনাভাইরাসের প্রথম ধাক্কার সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে তাঁদের দেশ। এই পরিস্থিতিতে পুরো দেশে, বিশেষ করে যেসব এলাকায় এই ভাইরাস দ্রুত বিস্তার লাভ করছে, সেই সব এলাকায় লকডাউন শিথিল করে জনজীবন স্বাভাবিক করা নাও যেতে পারে। যদিও পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে আগামী সোমবার থেকে খনি খনন, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ এবং গাড়ির যন্ত্রাংশ সংযোজনের কাজ আংশিকভাবে শুরু হওয়ার কথা। 

যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে কিছু তথ্য দিয়েছে মেক্সিকো সরকার। সরকার জানিয়েছে, দেশটির রাজধানী মেক্সিকো সিটির প্রায় অর্ধেক হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। যদিও এপ্রিলের শেষ দিকেও এই হাসপাতালগুলো করোনা রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিল না সরঞ্জামের অভাবে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ২০০ ভেন্টিলেটর পেয়েছে তারা। 

লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছে ব্রাজিলে। দেশটিতে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪ হাজারের বেশি। বৃহস্পতিবার মারা গেছেন ৮৫৩ জন। দেশটিতে সুস্থ হয়েছেন প্রায় ৮০ হাজার রোগী। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী মারা গেছেন এই দেশটিতে। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৪ হাজারের বেশি রোগী। এ ছাড়া সংক্রমণও ব্যাপক হারে বাড়ছে দেশটিতে। বৃহস্পতিবার নতুন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার। যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম গার্ডিয়ান–এর খবরে বলা হয়েছে, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো করোনাকে একটি ছোটখাটো ফ্লু হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার রাতে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এই ভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেছেন ৮৮১ জন। 

ব্রাজিল সরকারের অবস্থান নিয়ে আরও কিছু বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক নার্স দিবসে ব্রাসিলিয়া নার্সরা বিক্ষোভ করেছিলেন। কারণ, দেশটিতে এ পর্যন্ত ১০৯ জন নার্স করোনায় মারা গেছেন। কিন্তু ওই দিন বলসোনারো এক টুইট বার্তায় নার্সদের অভিনন্দন জানিয়েছেন সম্মুখসমরের যোদ্ধা হিসেবে। এ ছাড়া দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের ২৭ জন গভর্নর সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন।