এমন দাতাও আছেন এখনো!

ক্যালিফোর্নিয়ার ৪০ শিক্ষার্থীর শিক্ষাঋণ পরিশোধ করেছেন এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি। প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
ক্যালিফোর্নিয়ার ৪০ শিক্ষার্থীর শিক্ষাঋণ পরিশোধ করেছেন এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি। প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

বলা হয়ে থাকে যে ‘দান যদি ডান হাতে করো, তো বাম হাতও যেন না জানে।’ এখনকার যুগে এই কথাকে ভীষণ সেকেলে মনে হওয়ার কথা। হয়ও। এখন তো দুই টাকা দিলেও ঢাকঢোল পিটিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ। আর এই রেওয়াজের বিপরীতে এক ভীষণ বেমানান গল্প হাজির হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে, যা শুরুর উপদেশ বাক্যটিকে মনে করিয়ে দেয়।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম গুডনিউজনেটওয়ার্ক জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের নিম্ন আয়ের ৪০০ কলেজ পাস করা শিক্ষার্থীর ঋণ শোধ করে দিয়েছেন এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের নেওয়া ৮ মিলিয়ন বা ৮০ লাখ ডলারের বেশি শিক্ষাঋণ পরিশোধ করেন তিনি। ঋণ পরিশোধ হওয়ার খবর পেয়ে ওই শিক্ষার্থীরা ভীষণভাবে আনন্দিত হন।

অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তি নিম্ন আয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাঋণ পরিশোধের জন্য সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান স্টুডেন্টস রাইজিং অ্যাবাভের (এসআরএ) তহবিলে ৮ মিলিয়ন (৮০ লাখ) ডলার দান করেন। এসআরএ দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা, তাঁদের ক্যারিয়ার তৈরিতে সহায়তা, প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ নানা ধরনের সাহায্য করে থাকে।

এসআরএর কাছ থেকে সহায়তা নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৬২ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার নির্ধারিত দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করে। শিক্ষাজীবন শেষে করার পর দেখা যায়, সংস্থাটির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু গড় ঋণের পরিমাণ অন্তত ৮ হাজার ডলার। এই ঋণ পরিশোধসহ ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে প্রবেশ ও সেখানে সফল হতে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের সহায়তা দেয়।

নিজেদের কার্যক্রমের বিষয়ে এসআরএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এলিজাবেথ ডিভানি বলেন, ‘শিক্ষাঋণ ক্রমেই আর্থিক বোঝা হয়ে উঠছে। এখানকার সাবেকদের অনেকেই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, যাঁরা এর তহবিল গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এসআরএ তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।’

ক্যালিফোর্নিয়ার সদ্য শিক্ষাঋণ থেকে মুক্তি পাওয়া ৪০০ শিক্ষার্থীকে সুসংবাদটি জানিয়েছিলেন এলিজাবেথ ডিভানিই। তিনি শিক্ষার্থীদের ফোনের মাধ্যমে এই সুখবর দেন, যা সে সময় অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। এমনই একজন কিম্বারলি আর্মস্ট্রং। ল স্কুলে নিজের ৩ লাখ ডলারের ঋণ শোধ হওয়ার সুখবরটি শোনার পর নিজের অবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা সত্যি বিস্ময়কর ছিল। আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। এ যে কত বড় মুক্তি...সত্যিই বিরাট এক ভার নেমে গেল।’

একই রকম অনুভূতি হয়েছে ড. জাচারি ট্যাবের। এই চিকিৎসকের শিক্ষাঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার ডলার। নিজের অনুভূতি সম্পর্কে ট্যাব বলেন, ‘জীবনটাই যেন বদলে গেল। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকে সব সময় মাথায় ঋণের বোঝা নিয়েই চলেছি। যেখানেই যাই, এই ঋণ যেন আমাকে অনুসরণ করে। এর প্রভাব হয়তো পরবর্তী প্রজন্মেও সঞ্চারিত হতো। পুরোপুরি ভারমুক্ত হওয়াটা বিরাট ব্যাপার। ঋণের এই ভারের কারণে আমাদের অনেকেই সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সমাজে তেমন ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে না।’