আহা রে, মা হারিয়ে শিশুগুলোর কত কষ্ট

ফিরোজা ওমার। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
ফিরোজা ওমার। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

জন্মের পরই মা হারাল শিশুগুলো, কীভাবে বাঁচবে ওরা—এই চিন্তা যেন একটুও শান্তি দিচ্ছিল না ফিরোজা ওমারকে। কীভাবে দেবে? কারণ, ২৭ বছর বয়সী ফিরোজা ওমার নিজেও যে একজন মা। চার মাস বয়সী সন্তানকে পাখির ছানার মতো সারাক্ষণ বুকে আগলে রাখেন তিনি। তাই তো ভাবতেই পারছিলেন না ওই শিশুগুলোর কষ্ট।

১২ মে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একটি হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে জঙ্গি হামলা হয়। ওই হামলায় নবজাতক শিশু, ওয়ার্ডের শিশুদের মা, নার্সসহ ২৪ জন নিহত হন। মা–হারা এই নবজাতকদের কষ্ট যেন সহ্য করা যায় না।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, পেশায় মনোচিকিৎসক ফিরোজা ওমার বলেন, আমার নিজেরও চার মাসের একটি শিশু আছে। সে বুকের দুধ খায়। এই ঘটনা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। আমি যেন ওদের দুর্ভোগ অনুভব করতে পাচ্ছি।

এই আবেগ থেকেই ওই শিশুদের সাহায্য করার কথা ভাবেন ফিরোজা। ওই বাচ্চাদের সেবা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এই কাজে পুরোপুরি সহযোগিতা করেন তাঁর স্বামী। তিনি যখন ওই শিশুদের কাছে যান, তখন নিজের সন্তানের দেখভাল করেন তাঁর স্বামী।

ওই হামলা থেকে উদ্ধার পাওয়া শিশু, মাসহ ১০০ জনকে নিয়ে যাওয়া আতাতুর্ক চিলড্রেনস হাসপাতালে। সেখানেই যান ফিরোজা। যদিও হাসপাতালটি তাঁর বাড়ি থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে। তবে অস্থিতিশীল কাবুলে এতটুকু রাস্তাও যেন আতঙ্কের, ঝুঁকির। সব সময় তটস্থ থাকতে হয়, কখন না জানি হামলা হয়।

হাসপাতালে যাওয়ার পর ২০টি শিশুকে দেখতে পান ফিরোজা। এদের কেউ কেউ ছিল আহত। সেবাকর্মীরা তাদের গুঁড়া দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করছিলেন, তবে অনেক শিশুই তা খেতে চাইছিল না।

ফিরোজা বলেন, ‘আমি নার্সদের সঙ্গে কথা বললাম। তাঁরা আমাকে একটি শিশুর কাছে নিয়ে গেলেন।’

ছোট্ট নবজাতকটি ক্ষুধায় খুব কেঁদেছে। তাকে বুকের দুধ খাওয়ান ফিরোজা। প্রথম রাতে চারটি শিশুকে দুধ খাওয়ান ফিরোজা। শিশুদের জন্য কিছু করতে পেরে ফিরোজার মনটা শান্ত হয়ে আসে।

গত কয়েক দিনই বাড়িতে নিজের সন্তান ও হাসপাতালে এই শিশুদের খাওয়াচ্ছেন ফিরোজা। তিনিই এখন এসব শিশুর মা।

পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ফিরোজা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন। আগ্রহী মায়েদের তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। শুধু এতটুকু করেই থেমে নেই তিনি। বন্ধু, স্বজনসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ওই শিশুদের জন্য ন্যাপি, দুধ ও প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে আনছেন তিনি। এত কিছু করেও তাঁর মনে হচ্ছে, আহা রে, মা হারিয়ে শিশুগুলোর কত কষ্ট! অচেনা এক মানুষের দুধ খেয়ে বেঁচে রয়েছে তারা।