বিশ্বজুড়ে করোনা রোগী ৫০ লাখ ছাড়াল

গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ৫০ লাখ ৪০ হাজার ছাড়ায়। ছবি: রয়টার্স
গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ৫০ লাখ ৪০ হাজার ছাড়ায়। ছবি: রয়টার্স

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু প্রতিদিনই বাড়ছে। এর মধ্যে মৃত্যুর হার একটু কমতির দিকে মনে হলেও সংক্রমণের হার কোনোভাবেই কমছে না। বরং, দিনে দিনে তা বাড়তির দিকে। এরই মধ্যে গতকাল বুধবার বিশ্বজুড়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু ছাড়িয়েছে সোয়া ৩ লাখ।

চীনের উহানে গত ৩১ ডিসেম্বর মানুষের অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সে হিসাবে সংক্রমণ ছড়ানোর ১৪২ দিনে বিশ্বজুড়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়াল।

করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফো। এই ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ৫০ লাখ ৪০ হাজার ছাড়ায়। সংক্রমণ ছড়িয়েছে বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে। ওই সময় পর্যন্ত এই মহামারিতে মৃত্যু ৩ লাখ ২৬ হাজার ছাড়িয়েছে। সুস্থ হয়ে উঠেছেন প্রায় ১৯ লাখ ৯০ হাজার রোগী।

করোনা মহামারির বিস্তারের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শনাক্তের তারিখের ৬৭ দিনের মাথায়, গত ৬ মার্চ বিশ্বজুড়ে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ছাড়ায়। এর ২০ দিনের মাথায় রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়। তার আট দিন পর, গত ২ এপ্রিল সংক্রমিত রোগী ১০ লাখ হয়ে যায়। ১৫ এপ্রিল, অর্থাৎ ১৪ দিনের মাথায় রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়ায়। ২১ এপ্রিল রোগী ২৫ লাখ হয়। তার ঠিক ৩০ দিনের মাথায়, গতকাল ২০ মে রোগীর সংখ্যা ৫০ লাখ হলো।

বিশ্বজুড়ে করোনায় দৈনিক মৃত্যু কিছুটা কমবেশি হলেও সংক্রমিত রোগী শনাক্তের হার কমছে না। এটি বিবেচনায় নিয়েই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসার জোরালো আভাস এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। দৈনিক সংক্রমিত রোগী শনাক্তের হার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১২ মে থেকে এই সংখ্যা ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজারের ঘরে। এর মধ্যে ১৫ মে দৈনিক রোগী শনাক্তের সংখ্যা প্রায় লাখ ছুঁয়ে যায়। ওই দিন শনাক্ত হয়েছিলেন ৯৯ হাজার ৪০১ জন। অবশ্য এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছেন গত ২৪ এপ্রিল, ১ লাখ ১ হাজার ৮৮৪ জন।

অঞ্চল হিসেবে করোনার রোগী সবচেয়ে বেশি রয়েছে ইউরোপে। এই অঞ্চলে গতকাল পর্যন্ত ১৮ লাখ ২৫ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার। এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি রোগী এখন রাশিয়ায়। দেশটিতে গতকাল রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়েছে। 

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, রাশিয়ায় গতকাল রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৭৬৪ জন। মারা গেছেন ১৩৫ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যু ৩ হাজার ছুঁই ছুঁই। তবে ইউরোপের অন্য দেশগুলোয় সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসছে ধারাবাহিকভাবেই। 

বিবিসি জানায়, স্পেনে মঙ্গলবার মারা গেছেন ৬৯ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার ৮০০ করোনা সংক্রমিত রোগীর। ইতালিতে ওই দিন মারা গেছেন ১৬২ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যু ৩২ হাজার ছাড়িয়েছে। যুক্তরাজ্যে মঙ্গলবার আবার মৃত্যু বেড়েছে। ওই দিন দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ৫৪৫ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যু ৩৫ হাজার ছাড়িয়েছে। ফ্রান্সে মৃত্যু ছাড়িয়েছে ২৮ হাজার।

ইউরোপের পর সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছে উত্তর আমেরিকায়। এই অঞ্চলে গতকাল পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ। মারা গেছেন ১ লাখের বেশি। এর মধ্যে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রেই রোগী রয়েছেন ১৫ লাখ ৭০ হাজারের বেশি। মারা গেছেন প্রায় ৯৪ হাজার। মঙ্গলবারই দেশটিতে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি। ওই দিন দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ১ হাজার ৫৫২ জন। এ ছাড়া এই অঞ্চলের দেশ কানাডায় শনাক্ত হওয়া ৭৯ হাজারের বেশি রোগীর মধ্যে মারা গেছেন প্রায় ৬ হাজার। মেক্সিকোতে রোগী ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে, মারা গেছেন ৫ হাজার ৩০০ জনের বেশি।

এশিয়া মহাদেশে রোগী রয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ। এ পর্যন্ত মারা গেছেন সাড়ে ২৫ হাজার। রোগীর সংখ্যার দিক থেকে এই অঞ্চলে শীর্ষে রয়েছে তুরস্ক। দেশটিতে রোগী শনাক্ত হয়েছে দেড় লাখের বেশি। মারা গেছেন ৪ হাজারের কিছু বেশি। তবে মৃত্যুর হিসাবে এই অঞ্চলে শীর্ষে রয়েছে ইরান। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৭ হাজারের বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছে। রোগী শনাক্ত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার। এর পরেই তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। এই দেশে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার ছাড়িয়েছে সোমবারই। গতকাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৪০০ জনের বেশি রোগী মারা গেছেন। পাকিস্তানে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪৭ হাজার। মৃত্যু ১ হাজার ছাড়িয়েছে গতকাল। তবে এশিয়ার যে দেশ থেকে করোনা মহামারি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, সেই চীনে এক মাসের বেশি সময় ধরে করোনায় কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

লাতিন আমেরিকায় রোগী আছে প্রায় ৫ লাখ। এর মধ্যে মারা গেছেন প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার। এর মধ্যে ব্রাজিলেই রোগী শনাক্ত হয়েছেন প্রায় পৌনে ৩ লাখ। মারা গেছেন প্রায় ১৮ হাজার। দেশটিতে মঙ্গলবার মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ১৩০ জনের। ব্রাজিলে করোনা মহামারিতে এ পর্যন্ত এ দিনই সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। লাতিন আরেক দেশ পেরোতে রোগী লাখ ছুঁই ছুঁই। দেশটিতে মারা গেছেন প্রায় ৩ হাজার রোগী।

আফ্রিকায় শনাক্ত হয়েছেন ৯৩ হাজারের কিছু বেশি। মারা গেছেন প্রায় ৩ হাজার। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি ১৭ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছেন। দেশটিতে মারা গেছেন তিন শতাধিক। মৃত্যুতে এই অঞ্চলে শীর্ষে রয়েছে মিসর। দেশটিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন প্রায় ৭০০ রোগী। মিসরে রোগী শনাক্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার। এ ছাড়া আলজেরিয়ায় মারা গেছেন পাঁচ শতাধিক।

ওশেনিয়া অঞ্চলে রোগী শনাক্ত হয়েছেন সাড়ে ৮ হাজারের কিছু বেশি। মারা গেছেন ১২১ জন। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায়ই মারা গেছেন ১০০ জন। দেশটিতে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৭ হাজারের বেশি। নিউজিল্যান্ডে শনাক্ত হওয়া দেড় হাজার রোগীর মধ্যে মারা গেছেন ২১ জন। এই দেশে এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৫ জন রোগী। বাকিরা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ওশেনিয়ার বাকি দেশগুলোয় রোগী শনাক্ত হলেও করোনায় গতকাল পর্যন্ত কারও মৃত্যু হয়নি।