আম্পানে পশ্চিমবঙ্গে গেল ২০ জনের প্রাণ

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অন্তত ২০ জনের প্রাণ গেছে। প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কলকাতার বেহালায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে একজন। কলকাতার রিজেন্ট পার্ক এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন মা-ছেলে। হাওড়ায় ঘরের চাঁই মাথায় পড়ে মারা গেছে এক কিশোরী। ব্যারাকপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন এক নারী। বসিরহাট ও মিনাখাঁয় গাছ ভেঙে মাথায় পড়ে মারা গেছে দুজন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজে পানির মধ্যে থাকা ছিঁড়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারের স্পর্শে মারা গেছে চারজন। নদীয়ার চাকদায় গাছ ভেঙে মারা গেছে দুজন। পূর্ব মেদিনীপুরে গাছ পড়ে মারা গেছে দুজন। হুগলির চুঁচুরায় দেয়াল ধসে মারা গেছে একজন। হুগলির বাঁশবেড়িয়ায় গাছ চাপা পড়ে দুজন আর শ্রীরামপুরে মারা গেছে দুজন।

কর্তৃপক্ষ বলছে, রাজ্যের সব এলাকার ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানির তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। সব তথ্য পাওয়া গেলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

আম্পানের তাণ্ডবে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া জেলা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। অনেক এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় নেই বিদ্যুৎ। বিচ্ছিন্ন টেলিফোন ও ইন্টারনেটের সংযোগ।

বিশেষ করে কলকাতা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখানে নেই বিদ্যুৎ। ফলে ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে কলকাতা। কলকাতার অনেক এলাকায় টেলিফোন ও ইন্টারনেটের সংযোগও নেই।

পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পান সবকিছু একেবারে লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেছে। সর্বত্র গাছ পড়ে অবরুদ্ধ দশার সৃষ্টি হয়েছে। বহু এলাকা পানিবন্দী হয়ে আছে।
গোটা রাজ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে হাজার হাজার কাঁচাবাড়ি। ভেঙে গেছে অনেক পুরোনো বাড়িঘর। জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। উপড়ে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি, মোবাইল টাওয়ার। ভেঙেছে সুন্দরবন অঞ্চলের বহু নদীর বাঁধ। প্লাবিত হয়েছে অনেক গ্রাম। ডুবে গেছে সড়ক, সেতু, বাড়িঘর। পানির তোড়ে ভেসে গেছে বহু গবাদিপশু।

কলকাতার অনেক এলাকা ডুবে গেছে। কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে আছে ভাঙা ও উপড়ে পড়া গাছ।

আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার বেলা আড়াইটায় পশ্চিমবঙ্গে প্রথম আঘাত হানে আম্পান। কলকাতা ছাড়া অন্য এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার। কলকাতায় সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ১৩৩ কিলোমিটার।
আম্পানের তাণ্ডবে উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার হলদিয়া, দিঘা, মন্দারমণি, শংকরপুর, তাজপুর, কুলপি, কাকদ্বীপ পাথর প্রতিমা, নামখানা, ঝড়খালী, ক্যানিং, হিঙ্গলগঞ্জ, বকখালী, বাসন্তী , ডায়মন্ড হারবার, গোসাবা, বজবজ, চাকদা কার্যত লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।

দিঘা ও বকখালীতে জলোচ্ছ্বাসে বহু বাড়িঘর-দোকানপাট ভেসে গেছে। ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ঘাটে বাঁধা নৌকা, লঞ্চ ও ট্রলার। ক্যানিংয়ের হাসপাতালের টিনের ছাদ উড়ে গেছে। সুন্দরবন এলাকায় পুলিশের এসপি অফিস বিধ্বস্ত হয়েছে। হাওড়ার ফেরিঘাট ভেসে গেছে।
আম্পানের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড কলকাতার মানুষ বলছেন, গত ৫০ বছরে শহরে এমন ঘূর্ণিঝড় তাঁরা দেখেননি। দেখেনি এমন ভয়ংকর তাণ্ডব।

কলকাতা শহরে তিন হাজার গাছ পড়ে সড়ক যোগাযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে গোটা শহর।

কলকাতার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, চাঁদনি চক, কলেজ স্ট্রিট, বালিগঞ্জ, টালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট, টেংরা, বেহালা, ক্যামাক স্ট্রিট, শ্যামবাজার, পার্ক স্ট্রিট, পার্ক সার্কাস, নিউ টাউন, বারাসাত, মধ্যমগ্রাম , মানিকতলা, বেলেঘাটা, ফুলবাগান, বাগবাজার, রাজাবাজার, ঠাকুরপুকুর, মিলেনিয়াম পার্ক এলাকায় প্রচুর গাছপালা ভেঙেছে। গাছ এসে পড়েছে ট্রাক ও গাড়ির ওপরও। ভেঙেছে বিদ্যুতের খুঁটি। ফলে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে গোটা শহর।

আম্পান তাণ্ডব চালিয়েছে মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান ও নদীয়াতেও।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজে নেমে পড়েছে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা দল বা এনডিএফ। আরও নেমেছেন স্থানীয় মানুষজনসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও ক্লাবের সদস্যরা।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘এমন ঝড় আমি কখনো দেখিনি। এখন আমি এক বিরাট ধ্বংস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। বাংলায় করোনার চেয়েও আম্পান বেশি বিপর্যয় ডেকে এনেছে। বাংলার ৫ লাখ মানুষকে সরাতে না পারলে কী যে হতো? ভাবতেই পারছি না। ধ্বংসলীলার সার্বিক তথ্য পাওয়ার পরই আমরা বুঝতে পারব কত ক্ষতি হয়েছে রাজ্যের।’