চীনের নিরাপত্তা প্রস্তাবে হংকংয়ে নতুন করে বিক্ষোভ

হংকংয়ে বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি। গত সপ্তাহে প্রস্তাবিত এ বিতর্কিত আইনের বিরুদ্ধে আজ রোববার বিক্ষোভ করছে শত শত গণতন্ত্রপন্থী। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে এবং পিপার স্প্রে করে বলে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়।

হংকংয়ের জন্য নতুন যে নিরাপত্তা আইন হতে যাচ্ছে, সেখানে রাষ্ট্রদ্রোহ, বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের মতো বিষয়গুলো কঠোর হাতে দমন করার কথা রয়েছে। মানবাধিকার কর্মীদের আশঙ্কা, এ আইন হংকংয়ে রাজনৈতিক স্বাধীনতার টুঁটি চেপে ধরতে পারে।

আসামি প্রত্যর্পণ আইনের প্রতিবাদে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে গত বছরের পুরোটা সময় হংকং ছিল অস্থিতিশীল। ওই বছরের শেষের দিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর বিক্ষোভ থেমেছিল। কিন্তু আবার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে বিশ্ববাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হংকং। চীন তার আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটিতে নতুন জাতীয় নিরাত্তা আইন জারির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এতে ফুঁসে উঠেছে হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থীরা। গত শুক্রবার তারা এই আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভের ডাক দেয়।

প্রস্তাবিত আইনে নগরের বহুমূল্য স্বাধীনতার অবসান ঘটাবে, এমন কথা বলে প্রচারকারীরা সমর্থকদের সমাবেশ করার আহ্বান জানানোর পর শত শত সমর্থক ব‌্যস্ত কজওয়ে বে ও ওয়ান চাই এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেছে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। দাঙ্গা পুলিশ তাদের সমাবেশের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে।

বিক্ষোভকারী ২৫ বছর বয়সী ভিনসেন্ট এএফপিকে বলেন, স্রেফ কথার জন্য বা বিরোধী মত প্রকাশের জন্য সরকার তাঁদের অপরাধীর তালিকায় ফেলতে পারবে।

ভিনসেন্ট বলেন, ‘আমি মনে করি, হংকংবাসী খুব হতাশ। কারণ, আমরা আশা করিনি যে এটি এত দ্রুত এতটা কঠোর হবে। তবে আমরা এত বোকা নই যে বেইজিং কেবল হাত গুটিয়ে বসে থাকবে বলে বিশ্বাস করব। এখানে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’

বর্তমানে করোনাভাইরাস–সংক্রান্ত বিধিনিষেধে আটজনেরও বেশি লোকের সমাবেশ করা যাবে না। নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের আগের সতর্কতার পর অননুমোদিত সমাবেশে ঠেকাতে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

রোববারের এ সমাবেশের সঙ্গে গত বছরের সমাবেশের মিল রয়েছে। গত বছর প্রায় টানা সাত মাস বেইজিংয়ের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলেছিল হংকংয়ে। বেইজিং কয়েকবার কঠোর বার্তা দিলেও সেভাবে কঠোর দমননীতি তখন আরোপ করা হয়নি। কিন্তু বছরের শুরুতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে সেই বিক্ষোভে ভাটা পড়েছিল খানিকটা। বন্ধ ছিল জমায়েত। চলতি মাস থেকে হংকং ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করেছিল। ফিরে আসছিল বিক্ষোভও। ঠিক তখনই চিনা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে নতুন নিরাপত্তা আইনের প্রস্তাব এল।

ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (এনপিসি) সিলমোহর পড়লেই তা আইনে পরিণত হবে।

গতকাল শুক্রবার চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (এনপিসি) বার্ষিক অধিবেশনের শুরুতেই আইনটির খসড়া তোলা হয়। এই খসড়া আইনটি উপস্থাপন করার আগে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা একাধিকবার হুঁশিয়ার করেছেন, হংকংয়ের ভিন্নমতকে আর সহ্য করা হবে না। এনপিসির সংসদীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াং চেন এই আইনকে চীনের শত্রুদের প্রতিহত করার বড় হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করেন।