জাপানকে সফল বলল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হয়েছে। তাই রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার সেরে নিচ্ছেন রাজধানী টোকিওর কয়েকজন বাসিন্দা। ছবি: রয়টার্স
জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হয়েছে। তাই রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার সেরে নিচ্ছেন রাজধানী টোকিওর কয়েকজন বাসিন্দা। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাস সংক্রমণ সামাল দেওয়ায় প্রায় সাত সপ্তাহ ধরে কার্যকর থাকা জরুরি অবস্থা জাপান তুলে নেওয়ার এক দিন পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জাপানের চালানো প্রচেষ্টাকে সফল ও দৃষ্টান্তমূলক আখ্যায়িত করেছে। জাপানে সারা দেশ থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস জাপানের পরিস্থিতির মূল্যায়ন করে নতুন সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা—দুটোই সীমিত পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম হওয়ায় জাপানের চালানো প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। তবে একই সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ছাড়াও মৌলিক অন্যান্য সতর্কতামূলক পদক্ষেপ বহাল রাখার ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।

একই সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেটাকে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সম্ভাব্য কার্যকর অস্ত্র হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন, করোনাভাইরাস রোগীদের ওপর সেই হাইড্রোক্লোরোকুইনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখবে। চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ‘ল্যানসেটে’ প্রকাশিত গবেষণামূলক নিবন্ধের উল্লেখ করে সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সেখানে তুলে ধরা হিসাবে দেখা যায় যে এই ইনজেকশন যাঁদের দেওয়া হয়েছে তাঁদের মধ্যে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার, যাঁদের তা দেওয়া হয়নি তাঁদের চেয়ে বেশি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর আগে গর্বের সঙ্গে দাবি করেছিলেন যে ভাইরাসকে দূরে সরিয়ে রাখতে হাইড্রোক্লোরোকুইন তিনি ব্যবহার করেছেন। তবে গত সপ্তাহে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ওষুধটি আর ব্যবহার না করার উল্লেখ তিনি করেন।

অন্যদিকে গতকালের সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান মাইকেল রায়ান বলেছেন আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ছাড়াও লাতিন আমেরিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হওয়া এবং মৃত্যু—দুটোই বেড়ে চলায় বিশ্বের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এখনো প্রথম আঘাতের মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে। তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা দেশগুলো সতর্কতা বজায় না রাখলে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় আরেকটি আঘাত সেই সব দেশের ওপর অচিরেই আসতে পারে।

এদিকে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার এক দিন পর জাপানে আজ ২১টি নতুন ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ১০টি শনাক্ত করা হয় রাজধানী টোকিওতে। আজকের হিসাব নিয়ে জাপানে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত হওয়া সংক্রমণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩০৫টি এবং মৃত্যুর সংখ্যা হচ্ছে ৮৬৫টি। জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ঘোষণা প্রচারিত হওয়ার পর দেওয়া এক বিবৃতিতে টোকিওর গভর্নর ইয়ুরিকো কোইকে বলেছেন, জরুরি অবস্থা–পরবর্তী সময়ে মেট্রোপলিটন সরকার সংক্রমণ বিস্তারের ওপর নজর রেখে যাওয়ার পাশাপাশি মানুষের ঘরবন্দী থাকা ও ব্যবসা বন্ধ রাখার জন্য জানানো অনুরোধ স্থানীয় সরকার ধাপে ধাপে সহজ করে নেবে।

জরুরি অবস্থা শেষ হওয়ার প্রথম দিনে জাপানের রাজধানীতে আজ অনেক দোকানপাট, রেস্তোরাঁ ও অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্র ধীরে ধীরে ঝাঁপ তুলে নিতে শুরু করেছে। পথেঘাটে মানুষের ভিড় কিছুটা বাড়লেও স্বাভাবিক হয়ে আসার ইঙ্গিত তা এখনো দিচ্ছে না। এ অবস্থা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

অনুমোদন পেল না জাপানের ওষুধ আভিগান

জাপানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কাৎসুনোবু কাতো আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় জাপানের ফুজি ফিল্ম হোল্ডিংয়ের উদ্ভাবিত ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ আভিগান ব্যবহার অনুমোদনের প্রক্রিয়া মন্ত্রণালয় স্থগিত রাখবে। জাপান সরকার এর আগে চলতি মাসের মধ্যে ওষুধের ব্যবহার অনুমোদনের লক্ষ্য ধরে নিয়েছিল।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন আভিগানের ক্লিনিক্যাল ও প্রয়োগ পরীক্ষা জুন মাসের পরও অব্যাহত রাখা হবে এবং এর নিরাপদ কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলে দ্রুত এটা ব্যবহারের অনুমতি মন্ত্রণালয় দেবে। একই সঙ্গে ফাভিপিরাভির নামে পরিচিত এই ওষুধ করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ব্যবহারযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছিল এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে চলতি মাসের মধ্যে এই ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন লাভ প্রত্যাশা করছিলেন।

তবে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়া যাওয়ার আগে এটার অনুমোদন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আপাতত অনুমোদন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওষুধের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে নবজাত শিশুর জন্মগত ত্রুটির আশঙ্কা থেকে যাওয়ায় ওষুধটি অনুমোদিত হলেও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের বেলায় এটা প্রয়োগের অনুমতি হয়তো দেওয়া হবে না।