স্বাভাবিক হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার জীবনযাত্রা

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় স্বাভাবিক হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার জীবনযাত্রা। এক সপ্তাহ ধরে কোভিড-১৯–এর সংক্রমণ হার অত্যন্ত কম দেশটিতে। গত সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ছয়জন করে নতুন শনাক্ত হয়েছে পুরো অস্ট্রেলিয়ায়। দেশটির কোনো কোনো রাজ্যে অনেকদিন ধরেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা শূন্য।

সব মিলিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যেতে দেশটির রাজ্যগুলোতে কিছুদিন ধরেই বিধিনিষেধ আস্তে আস্তে তুলে দিচ্ছে সরকার। অন্যতম শহর সিডনির রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলস ও মেলবোর্নের রাজ্য ভিক্টোরিয়াতে বিধিনিষেধ আরও সহজ করা হচ্ছে জুনের ১ তারিখ থেকে।

মানুষের চলাচলের সীমিত আকারের পরিধি আরও বিস্তৃত হচ্ছে। তিন পর্যায়ের বিধিনিষেধ শিথিল করার ঘোষণার প্রথম পর্যায়ে খুলে দেওয়া হয়েছিল দেশটির রেস্তোরাঁ, ক্যাফে ও দোকানপাট। বিয়েতে একসঙ্গে জড়ো হতে পারবেন ১০ জনের পরিবর্তে ২০ জন আর জানাজা বা এ ধরনের কাজে ৫০ জন এবং ক্যাফে, রেস্তোরাঁ ও পাবে (মদালয়) ৫০ জন একসঙ্গে হতে পারবেন নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে।

এ ছাড়া সীমিত আকারে লাইব্রেরি ও খেলার মাঠ ব্যবহার করা যাবে। তবে সব ক্ষেত্রেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। দেশটির অন্যান্য রাজ্যগুলো এখনো সীমান্ত না খুললেও নিউ সাউথ ওয়েলস ও ভিক্টোরিয়া এই দুই রাজ্য তাদের সীমান্ত খুলে দিচ্ছে আগামী সোমবার থেকে। কিন্তু কুইন্সল্যান্ড ও ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া করোনাভাইরাসের মারাত্মক সংক্রমণ বিস্তারকে থামাতে আগামী কয়েক মাস পর্যন্ত তাদের রাজ্যসীমান্ত বন্ধ রাখার পক্ষে অটল রয়েছে। যদিও দেশটির আন্তরাজ্য সীমান্ত কেন বন্ধ থাকবে, এ নিয়ে রাজ্যের ধনাঢ্য এক ব্যবসায়ী রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

আজ শুক্রবার অস্ট্রেলিয়াজুড়ে নতুন করে সংক্রমণ হয়েছে ২৪ জনের। সংক্রমিত মানুষের মোট সংখ্যা ৭ হাজার ১৭৩ জন। এ পর্যন্ত ১০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬ হাজার ৫৮৩ জন। দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা হয়েছে ১৩ লাখ ৯৭ হাজারের ওপরে। হাসপাতালে ২৩ জন ও ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি ৪ জন। অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৮০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশিদের বসবাস। এখন পর্যন্ত এই বাংলাদেশিদের কেউ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। 

অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল সরকার করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশের চাকরিজীবীদের রক্ষা করতে ‘জবকিপার’ নামের যে প্রণোদনার বাজেট ঘোষণা করেছিল সেখানে ৬ হাজার কোটি ডলার প্রত্যাশার চেয়ে কম ব্যয় হচ্ছে। তবে এত গরমিল কী করে হলো খোঁজ করতেই বেরিয়ে এল ভুল। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে দেশটিতে। প্রশ্ন উঠে, এত বড় ভুল কী করে হয়। যদিও সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা যশ ফ্রাইডেনবার্গ বলেন, সরকারের নয়, যাঁরা ফরম পূরণ করেছেন, তাঁদের ভুলে এমনটি হয়েছে।

এদিকে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য সরকার তার রাজ্যের সব সরকারি চাকরিজীবীর পরবর্তী ১২ মাস কোনো বেতন বৃদ্ধি করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। ফলে রাজ্যের প্রায় ৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর আড়াই শতাংশ বেতন বৃদ্ধি রোধ হবে। এতে সরকারের প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলার খরচ কম হবে। ইতিমধ্যে রাজ্যের প্রায় ২ লাখ ২২ হাজার লোক চাকরি হারিয়েছেন। এই বেকারত্ব সামাল দিতে এই টাকা সহায়ক হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের সরকার।

এ ছাড়া দেশটির প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা অধ্যাপক ব্রেন্ডন মারফি আজ বলেন, ‘কীভাবে কোভিড-১৯ থেকে নিরাপদ থাকতে পারি, তা আমরা শিখলাম। সামাজিক দূরত্ব, গণশনাক্তকরণ পরীক্ষা এবং সীমান্ত বিধিনিষেধের মাধ্যমে আনুমানিক ১৪ হাজার জীবন আমরা রক্ষা করতে পেরেছি।’

এবার করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে পার্শ্ববর্তী দুই দেশের বন্ধুত্বের সম্পর্কে আবার নতুন ‘ট্রান্স তাসমান বাবল’ নামে অভিহিত করে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড। এই সপ্তাহের প্রথম দিকে অস্ট্রেলিয়া তাদের আন্তরাজ্য সীমান্ত খোলা নিয়ে দেশটির রাজ্য সরকারগুলোর মধ্যে তীব্র বাগ্‌যুদ্ধ শুরু হলে দৃশ্যপটে চলে আসে নিউজিল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে দ্রুত সীমান্ত খুলে দেওয়ার আভাস পাওয়া যায় তখন। ধারণা করা হয়, অস্ট্রেলিয়ার আন্তরাজ্য সীমান্ত খোলার আগেই এই দুই দেশের সীমান্ত খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু গতকাল জেসিন্ডা জানিয়েছেন, সীমান্ত খুলবে সেপ্টেম্বরে। ‘ট্রান্স তাসমান বাবল’–এর এই সম্পর্কের আওতায় এই দুই দেশের নাগরিক কোয়ারেন্টিন ছাড়াই চলাচল করতে পারবে।

দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া সাধারণ ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়েই সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ের বেগ সামলিয়ে উঠছে এর মধ্যে রাজ্যের ফ্রি মেন্টাল বন্দরের নোঙর করতে আসা আল কুয়েত নামের পশুবাহী জাহাজ নিয়ে পড়েছে বিপাকে রাজ্য সরকার। কোথাও জাহাজের বিষয় এলেই মধ্য মার্চে সিডনিতে নোঙর করা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বহনকারী রুবি প্রিন্সেসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই জাহাজ থেকে প্রায় সাড়ে ছয় শ মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল এবং আক্রান্তদের ২১ জন মৃত্যুবরণ করেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাহাজ আল কুয়েতের অবস্থাও ভালো না। ইতিমধ্যে জাহাজটির ক্রুদের ২০ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। বাকিদের পরীক্ষার মুখোমুখি করা হচ্ছে। জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অস্ট্রেলিয়া আসে প্রায় ৫৬ হাজার ভেড়া নিতে।