মৃত্যুতেও চীনকে ছাড়িয়ে সংক্রমণে শীর্ষ দশে ভারত

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় কিছুদিন আগেই চীনকে ছাড়িয়েছে ভারত। এবার মৃত্যুর সংখ্যায়ও চীনকে পেছনে ফেলল দেশটি। করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যায় বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে ভারত এখন নবম অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে গতকাল শুক্রবার ৮ হাজার ৭২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যা সেখানে এক দিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের রেকর্ড। গতকাল মৃত্যুও হয়েছে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৬৯ জনের।

শুধু ভারতই নয়, দক্ষিণ এশিয়াজুড়েই বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। বাংলাদেশে গতকাল শুক্রবার ২ হাজার ৫২৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যা এ পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্তের রেকর্ড। পাকিস্তানেও এদিন সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্ত এবং মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে গতকাল ২ হাজার ৮০১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল দেশটিতে মারা গেছেন ৬৩ জন, যা এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু।

করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফো। এই ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, গতকাল বাংলাদেশ রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ৫৯ লাখ ৭০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৩ লাখ ৬৪ হাজারের বেশি। সুস্থ হয়েছে ২৬ লাখ ৩০ হাজার।

কিছুদিন আগেও করোনা মহামারির বিস্তার কমে আসার আভাস পাওয়া গেলেও তা আবার ফিকে হতে শুরু করেছে। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার বিশ্বজুড়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বুধবার শনাক্ত হন ১ লাখ ৬ হাজার ৪৭৫ জন নতুন রোগী। আর বৃহস্পতিবার শনাক্ত হন ১ লাখ ১৬ হাজার ৩০৪ জন রোগী। এ দিন বিশ্বজুড়ে মারা গেছেন ৫ হাজার ৮৬১ জন করোনা রোগী।

দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী এখন ভারতে। এনডিটিভি জানায়, গতকাল রাত পর্যন্ত ভারতে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭৩ হাজারের বেশি। করোনা মহামারি যে চীন থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানে এ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৯৯৫ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮ হাজার ৬৩৪ জন। ভারতে মোট রোগীর সংখ্যা চীনকে ছাড়িয়ে যায় ১৫ মে। আর করোনায় মৃত্যুতে ভারত চীনকে পেছনে ফেলল গত বৃহস্পতিবার। গতকাল রাত পর্যন্ত ভারতে মৃত্যু ৪ হাজার ৯৮০ জনের বেশি। গতকাল মারা গেছেন ২৬৯ জন। এটি ভারতে করোনায় এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে গত বুধবার দেশটিতে সর্বোচ্চ ১৯০ জন মারা যান। ভারতে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮২ হাজারের বেশি রোগী।

সংক্রমণ বেড়ে চললেও ভারতে ক্রমেই লকডাউন শিথিল করছে সরকার। এনডিটিভি জানায়, গতকাল দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে আগামী ১ জুন থেকে সব উপাসনালয় খুলে দেওয়া হবে। তবে উপাসনালয়ের ভেতরে ১০ জনের বেশি মানুষ জড়ো হতে পারবেন না। ভারতে চতুর্থ দফায় লকডাউনের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই দিন আগে মমতা এই ঘোষণা দিলেন।

পাকিস্তানেও রোগী বাড়ছে। দেশটির ইংরেজি ভাষার সংবাদপত্র ডন-এর অনলাইন জানায়, সেখানে শনাক্ত হওয়া মোট রোগীর সংখ্যা ৬৪ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ৩৪৬ জন। সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়লেও দেশটি সবকিছু শিথিলের পথেই হাঁটছে।

রোগী বাড়ছে আফগানিস্তানেও। সেখানে এ পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু ২৫০ ছুঁই ছুঁই। আফগানিস্তানে গতকাল করোনায় ১১ জন মারা গেছেন। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৬২৩ জন। শ্রীলঙ্কায় প্রথম দফায় রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও তা দেড় হাজারেই আটকে গেছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মালদ্বীপেও একই অবস্থা। এই দেশেও করোনা রোগীর সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন পাঁচজন। ভুটানে এখন রোগীর সংখ্যা ৩১। তবে এ পর্যন্ত সেখানে করোনায় কারও মৃত্যু হয়নি।

তবে করোনা মোকাবিলায় প্রথম দিকে ভুটানের মতো নেপালও সাফল্য দেখালেও সেখানে এখন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। নেপালে রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে গতকালই শনাক্ত হয়েছেন ১৭০ জন। দেশটিতে এ পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্ত হলো এদিনই। এর আগে বৃহস্পতিবার নেপালে রোগী শনাক্ত হন ১৫৬ জন। এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ছয়জন।

দক্ষিণ এশিয়ার বাইরেও করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এই মহামারির নতুন উপকেন্দ্র এখন আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু এক লাখ ছাড়িয়েছে দুই দিন আগেই। দেশটিতে বৃহস্পতিবারও ১ হাজার ২০০ জনের বেশি করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মোট রোগীর সংখ্যা ১৮ লাখ ছুঁই ছুঁই।

লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলেও লাফিয়ে বাড়ছে রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। দেশটিতে দুই দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি সংখ্যায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে ব্রাজিলে মোট রোগীর সংখ্যা বেড়ে সাড়ে চার লাখ ছুঁই ছুঁই। মৃত্যু ২৭ হাজার ছাড়িয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, রাশিয়ায় গতকাল ৮ হাজার ৫৭২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ছুঁই ছুঁই। রাশিয়ায় গতকাল মারা গেছেন ২৩২ জন, যা দেশটিতে এক দিনে করোনায় সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু। এ নিয়ে রাশিয়ায় মারা গেলেন ৪ হাজার ৩৭৪ জন।