করোনার সঙ্গে সহাবস্থানের পথেই চলেছে ভারত

তাঁদের সবার বাড়ি উত্তর প্রদেশে। বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেন ধরতে অপেক্ষা করছেন মুম্বাইয়ের একটি স্টেশনে। ছবি: রয়টার্স
তাঁদের সবার বাড়ি উত্তর প্রদেশে। বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেন ধরতে অপেক্ষা করছেন মুম্বাইয়ের একটি স্টেশনে। ছবি: রয়টার্স

লকডাউন পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হচ্ছে না, আবার জনজীবনও সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক হচ্ছে না। ভারতে চতুর্থ দফার লকডাউনের মেয়াদ শেষ হওয়ার মুখে বোঝা যাচ্ছে, পঞ্চম দফাতেও নিষেধাজ্ঞাপর্ব বহাল রেখে করোনার সঙ্গে সহাবস্থানের নীতিই গৃহীত হতে চলেছে। অর্থাৎ অর্থনীতির স্বার্থে নিষেধাজ্ঞার পরিধি যেমন আরও কমানো হবে, তেমন সংক্রমিত এলাকাগুলোয় বাড়ানো হবে কড়াকড়ি।

লকডাউনের ৭০ দিন অতিক্রান্ত। অথচ সংক্রমণ নিত্যদিন রেকর্ড গড়ে চলেছে। এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ভারতে নতুনভাবে সংক্রমিত হচ্ছে সাত হাজারের বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ হাজার ৯৬৪ জন আক্রান্ত। এত কড়াকড়ি সত্ত্বেও সংক্রমণ কেন বেড়ে চলেছে, তার একটা ব্যাখ্যা যদি হয় প্রতিদিন আরও বেশি মানুষের পরীক্ষা, দ্বিতীয় ব্যাখ্যা তাহলে আরও বেশি মাত্রায় নিষেধাজ্ঞার শিথিলতা। স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত যাঁরা, তাঁদের সঙ্গে অর্থনীতিবিদদের এই সংঘাতের নিটফল, লকডাউনের ৭০ দিনের মাথায় দেশের মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ১ লাখ ৭৪ হাজার। এই উদ্বেগজনক পরিসংখ্যানের মধ্যে স্বস্তির বিষয় একটাই, সুস্থতার হারও ক্রমে বেড়ে চলেছে। শুক্রবার এক দিনে সুস্থ হয়েছেন ১১ হাজারের বেশি। সুস্থ হওয়ার মোট সংখ্যা ৮২ হাজারের বেশি।

সংক্রমণ এখনো মাত্রাছাড়া মহারাষ্ট্রে (৬২ হাজার ২২৮)। এই ঊর্ধ্বগামিতা কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না। দ্বিতীয় স্থান দখলে রেখেছে তামিলনাড়ু (২০ হাজার ২৪৬)। তৃতীয় স্থানে রাজধানী দিল্লি (১৭ হাজার ৩৮৬)। চতুর্থ স্থানে মোদির রাজ্য গুজরাট (১৬ হাজার)। সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে মৌসুমি শ্রমিকদের রাজ্যে রাজ্যে ফেরানোর সিদ্ধান্তে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৌসুমি শ্রমিকদের ট্রেনগুলোর নাম দিয়েছেন ‘করোনা স্পেশাল’। বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আম্পান এই রাজ্যের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

সব রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীরা লকডাউন কঠোরভাবে জারি রাখার পক্ষে হলেও কোনো সরকারেরই তা করার উপায় নেই অর্থনৈতিক কারণে। জীবন ও জীবিকার মধ্যে এই সংঘাতে কোনো একটিকে বেছে নেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সীমিত সংখ্যায় হলেও শুরু হয়েছে বিমান ও ট্রেন চলাচল। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে দেশের প্রবৃদ্ধির হার হয়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান রীতিমতো উদ্বেগের। কারণ, ওই সময়ে লকডাউনের প্রভাব পড়েছিল মাত্র এক সপ্তাহের জন্য। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে কৃষিক্ষেত্র ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্র প্রায় অচল। এই অবস্থা আরও চালিয়ে যাওয়া কেন্দ্র ও রাজ্য কোনো সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়। ফলে সরকারকে মধ্যপন্থী একটা ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এই পরিস্থিতিতে স্পষ্টই জানিয়েছেন, ‘করোনাকে ঠেকাতে লাগাতার লকডাউন চালানো সম্ভবপর নয়। জীবনকে থামিয়ে দেওয়া যায় না। সব সতর্কতা অবলম্বন করে করোনাকে সঙ্গী করেই আমাদের এগোতে হবে।’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটা ঠিক, সংক্রমণ মাত্রাছাড়া বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটাও ঠিক, করোনাকে পেছনে ফেলে দিল্লি চার ধাপ এগিয়ে গেছে। কেজরিওয়াল বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মৃত্যুর হার বাড়লে এবং হাসপাতালে চিকিৎসার ঘাটতি দেখা দিলে সেটাই উদ্বেগের বিষয়। এই দুই উদ্বেগের কোনোটাই দিল্লিতে নেই। গত সপ্তাহে দিল্লিতে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সাড়ে চার হাজার বেড ছিল। চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে হয়েছে ছয় হাজার। আগামী সপ্তাহে সেটা সাড়ে ৯ হাজারে দাঁড়াবে।