পশ্চিমবঙ্গে আনলকে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ

কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গে সোমবার কনটেনমেন্ট জোনের বাইরে সর্বত্র স্বাভাবিক ছিল মানুষের যাতায়াত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গে সোমবার কনটেনমেন্ট জোনের বাইরে সর্বত্র স্বাভাবিক ছিল মানুষের যাতায়াত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

আনলক-১–এর প্রভাব লক্ষ করা গেছে কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে। গতকাল সোমবার কনটেনমেন্ট জোন ছাড়া মুক্তভাব দেখা গেছে গোটা রাজ্যে। গতকাল মনেই হয়নি, এই রাজ্যে করোনার মতো একটি মহামারি চলছে। তবে আনলক-১–এর মধ্যে রাজ্যে বেড়েই চলছে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার।

গত রোববার ভারতে শেষ হয় লকডাউনের চতুর্থ পর্ব। গতকাল থেকে শুরু হয় লকাডাউনের পঞ্চম পর্ব। এই পর্বের নাম আনলক-১। এই পর্বে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের কনটেন্টমেন্ট জোনে চলবে লকডাউন। কনটেন্টমেন্ট জোনে বহাল থাকবে কড়া বিধি।

কেন্দ্রীয় সরকার ৩০ জুন পর্যন্ত কনটেনমেন্ট জোনে লকডাউন বহাল রাখছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই রাজ্যের কনটেনমেন্ট জোনে লকডাউন বহাল রাখছে ১৫ জুন পর্যন্ত। এরপর পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রত্যাহার করা হতে পারে লকডাউন। কিংবা মেয়াদ বাড়িয়ে ৩০ জুনও করা হতে পারে।

গতকাল কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গে কনটেনমেন্ট জোনের বাইরে সর্বত্র স্বাভাবিক ছিল মানুষের যাতায়াত। রাজ্যে অফিস খুলেছে। মুক্ত এলাকায় চলাচলে কোনো বাধা ছিল না। সড়কে সরকারি বাস ছিল। ভাড়া নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিরোধের কারণে বেসরকারি বাস তেমন ছিল না। চালু হয় রাজ্যের বিভিন্ন নদীর ফেরিঘাট। তবে চলেনি লোকাল ট্রেন, মেট্রো।

বাসে আসন অনুযায়ী যাত্রী নেওয়ার কথা থাকলেও গতকাল তা মানেনি মানুষ। অফিসে যাওয়ার জন্য সব নিয়মকানুন ভেঙে বাসে উঠেছে মানুষ। দাঁড়িয়ে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও মানুষ তা তোয়াক্কা করেনি। মানা হয়নি সামাজিক দূরত্ব। বাসচালক ও সহকারীদের ভাষ্য, যাত্রীরা জোর করে বাসে উঠে দাঁড়িয়ে গেছে।

রাস্তায়ও দেখা গেছে প্রচুর ট্যাক্সি। তারাও বিধি না মেনে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলেছে। স্কুটার বা সিএনজিতে দুজন করে নেওয়ার কথা। কিন্তু চারজন যাত্রী নিয়ে চলতে দেখা গেছে কলকাতার বিভিন্ন স্থানে । গতকাল কলকাতার ধর্মতলা, শিলালদহ, হাওড়া, গড়িয়া, পার্ক সার্কাস, বড়বাজারসহ সর্বত্রই ছিল খোলামেলা। এসব জায়গায় ছিল না লকডাউনের বাধা।

গতকাল পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া বুলেটিনে জানানো হয়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছে ২৭১ জন। মারা গেছে ৮ জন। এই নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে করোনায় সংক্রমিত হলো ৫ হাজার ৭৭২ জন। মোট মারা গেছে ২৫৩ জন। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৭২ জন, যাঁরা অন্যান্য উপসর্গের সঙ্গে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে। করোনা থেকে সুস্থ ২ হাজার ৩০৬ জন।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বুলেটিনে বলা হয়, ভারতে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছে ৮ হাজার ৩৯২ জন। মোট সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার ৫৩৫ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ২৩০ জন। মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৯৪ জন। মোট সুস্থ হয়েছে ৯১ হাজার ৮১৯ জন।

ভারত এখন সংক্রমণের নিরিখে বিশ্বে সপ্তম স্থানে চলে এসেছে। ভারতে সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। এরপর রয়েছে যথাক্রমে গুজরাট, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তর প্রদেশ।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিপুলসংখ্যক মৌসুমী শ্রমিক পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে পড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাজ্য সচিবালয় নবান্ন সূত্রে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে রাজ্যে ৫ লাখ মৌসুমী শ্রমিক ঢুকে পড়েছে। তারা আরও আসতে পারে।মৌসুমী শ্রমিকদের করোনার নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য আরও ১০ থেকে ১৫টি কোভিড হাসপাতাল গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এখন রাজ্যে রয়েছে ৬৯টি সরকারি ও বেসরকারি কোভিড হাসপাতাল।

১০দিন আগেও রাজ্যের ২৩টি জেলার মধ্যে ৬টি জেলা ছিল করোনামুক্ত। এখন মাত্র একটি জেলা করোনামুক্ত। সেটি হলো কালিম্পং।