সিডনিতে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছেন আদালত

জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদ অস্ট্রেলিয়ায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: এএফপি
জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদ অস্ট্রেলিয়ায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: এএফপি

জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল নিষিদ্ধ করেছেন দেশটির আদালত। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দেন।

আগামীকাল শনিবার সিডনি শহরে 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' নামে এই বিক্ষোভ মিছিল হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধের কারণে এই বিক্ষোভকে 'অবৈধ' দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলস (এনএসডব্লিউ) রাজ্যের পুলিশ।

রায়ে বলা হয়, মহামারি করোনাভাইরাসের এই সময়ে এই বিপুলসংখ্যক মানুষের বিক্ষোভ মিছিল দেশটির জনগণের বৃহত্তর স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ফেলবে। তাই সংহতি প্রকাশের এই বিক্ষোভ মিছিল নিষিদ্ধ করা হলো। তবে রায়ের ফলাফল যা-ই আসুক, বিক্ষোভ সমাবেশ হবেই—এ রকমটি শুনানির আগেই আয়োজকেরা ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। বিক্ষোভে ইতিমধ্যে প্রায় ১০ হাজার মানুষ উপস্থিত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

১ জুন থেকে সিডনি শহরের রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলসে করোনাভাইরাস বিধিনিষেধ সহজ করা হলেও এখনো বিশেষ অনুষ্ঠানে রাজ্যটির সামাজিক দূরত্ব আইনে ৫০০ জনের বেশি লোকের জমায়েত অবৈধ। তবে সিডনিতে ডাক দেওয়া বিক্ষোভ সমাবেশটি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে হলেও অস্ট্রেলিয়ায় পুলিশি হেফাজতে নিহত হওয়া দেশটির আদিবাসী মানুষের ক্ষোভ প্রকাশের সমাবেশে মোড় নিচ্ছে বলে দেশটির সাধারণ মানুষের ধারণা। এ জন্য সরকার সমাবেশ নিয়ে বিশেষ চিন্তিত। অস্ট্রেলিয়ার রয়্যাল কমিশন ইনটু অ্যাবরিজিনাল ডেথসের জাতীয় প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ১৯৯১ সাল পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে দেশটির ৪৩২ জন আদিবাসী নিহত হন।

এদিকে, নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের পুলিশের সহকারী কমিশনার মাইকেল উইলিং এক বার্তায় বিক্ষোভকারীদের আগামীকাল বাড়িতে থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন, 'যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য শহরে উল্লেখযোগ্য পুলিশ থাকবে। এই সময়ে আপনাদের মতামতকে অন্য রকমভাবে প্রকাশ করুন।' তিনি আরও বলেন, কেউ যদি সুপ্রিম কোর্টের রায় অমান্য করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তাদের জানা দরকার যে তারা বেআইনি কাজ করছে এবং পুলিশ সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

সমাবেশটি নিয়ে এনএসডব্লিউ রাজ্যের প্রিমিয়ার (মুখ্যমন্ত্রী) গ্ল্যাডিস বেরেজিক্লিয়ান বলেন, বিক্ষোভ সমাবেশটি অবৈধ কারণ বিক্ষোভকারীরা স্বাস্থ্য–সংক্রান্ত আদেশের সামাজিক দূরত্বের ব্যবস্থার নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। গ্ল্যাডিস বলেন, 'আমরা কারও জন্য ব্যতিক্রম হতে পারি না।'

এর আগে গত মঙ্গলবারও সিডনিতে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে ছোট আকারে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।

২০১৫ সালে সিডনির ল্যাং বে জেলখানায় মারা যান অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী ডেভিড ডুঙ্গয়ে। ডেভিড ডুঙ্গয়ের মা ল্যাটোনা ডে আদালতের সিদ্ধান্ত হস্তান্তরের আগে একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আগামীকালের সমাবেশে তাঁকে পদযাত্রা থেকে কোনো কিছুই থামাতে পারবে না। 'আমরা এই ভূমির মালিক এবং আপনারা আমাদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে অতীত থেকে আজ অবধি যা ঘটছে, তা দেখতে পেয়েছেন...বর্ণবাদ এখনো এখানে বিদ্যমান...এবং এটাই আমার ছেলেকে হত্যা করেছে।'

আদিবাসী সক্রিয় কর্মী মারিয়া ক্ল্যাগ বলেন, তিনি জনস্বাস্থ্যের গুরুত্বটা বোঝেন। তবে মানুষ তাঁর স্বাধীনতা ব্যবহার করে ন্যায়বিচারের পাশে দাঁড়ানো দরকার। তিনি বলেন, যখন সমুদ্রসৈকত ভরে উঠল, তখন পুলিশ কী করছিল? জাহাজ ভিড়তে দেওয়ায় দেশে যখন করোনাভাইরাস ছড়িয়েছিল, তখন কারা নীরব ছিল?

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' প্রতিবাদে অংশ না নেওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়ানদের প্রতি অনুরোধ করে বলেন, 'আসুন, প্রতিবাদ করার আরও একটি ভালো উপায় খুঁজে বের করি।'

উল্লেখ্য, আমেরিকার মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক আফ্রো-আমেরিকানকে গত ২৫ মে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে নির্যাতন করেন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চাওভিন। এতে সাবেক এই বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের মৃত্যু হয়। এক প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ১০ মিনিটের ভিডিও ফুটেজে চাওভিন ফেঁসে যান। সেখানে দেখা যায়, গলায় হাঁটু চেপে ধরায় ফ্লয়েড বারবার কাতর স্বরে বলছেন, 'আমি শ্বাস নিতে পারছি না।' তারপর জর্জ ফ্লয়েড মৃত্যুবরণ করেন। ভিডিওটি ভাইরাল হলে চাওভিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। মিনেসোটা থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন ছড়িয়ে পড়েছে অস্ট্রেলিয়াসহ পুরো বিশ্বে।