উহানে করোনো এসেছিল 'আগস্টে'

উহানের তিয়ানউ হাসপাতালের গাড়ি পার্কিয়ের স্যাটেলাই ইমেজ। অক্টোবর ২০১৮ (বাঁ দিক) ও অক্টোবর ২০১৯। ছবি: হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি
উহানের তিয়ানউ হাসপাতালের গাড়ি পার্কিয়ের স্যাটেলাই ইমেজ। অক্টোবর ২০১৮ (বাঁ দিক) ও অক্টোবর ২০১৯। ছবি: হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি

চীনের উহানে গত বছরের আগস্টেই নতুন করোনাভাইরাসের সূত্রপাত হয়েছিল বলে দাবি করেছেন একদল গবেষক। তাঁরা স্যাটেলাইট ইমেজ ও সার্চ ইঞ্জিনের ডেটা ব্যবহার করে এই গবেষণা করেছেন।

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, বোস্টন ইউনিভার্সিটি অব পাবলিক হেলথ ও বোস্টন চিলড্রেন হাসপাতালের একদল গবেষক এই গবেষণায় অংশ নেন। স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা যায়, উহানের প্রধান হাসপাতালগুলোয় গত আগস্টে গাড়ি পার্কিংয়ের পরিমাণ বাড়তে থাকে। পাশাপাশি ওই সময়ে ‘ডায়রিয়া’ ও ‘কফ'’ সম্বন্ধে জানতে ইন্টারনেটে সার্চ দেওয়া হয় প্রচুর পরিমাণে।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষকেরা উহানের বড় হাসপাতালগুলোর ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত গাড়ি পার্কিংয়ে স্যাটেলাইট ইমেজ সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে উহানের ছয়টি বড় হাসপাতালের মধ্যে পাঁচটির পার্কিংয়ের ছবি বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের আগস্ট থেকে হাসপাতালগুলোর গাড়ি চলাচলের মাত্রা বেড়ে যেতে শুরু করে, যা ডিসেম্বরে গিয়ে চরমমাত্রা লাভ করে। অন্যদিকে, আগস্ট থেকেই চীনের সার্চ ইঞ্জিন ‘বাইডু’তে ‘ডায়রিয়া’ ও ‘কফ’ শব্দ খোঁজার পরিমাণ বেড়ে যায়। ডায়রিয়া ও কফের মতো ইনফ্লুয়েঞ্জাগুলো করোনারোগীদের অন্যতম লক্ষণ হওয়ায় গবেষকদের দাবি, উহানে আগস্ট থেকে করোনা সংক্রমণের সূত্রপাত হয়েছে।

তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই গবেষণা প্রত্যাখ্যান করা হয়। তারা এটিকে ‘অত্যান্ত অর্থহীন’ বলে দাবি করছে।

হার্ভার্ডের এই গবেষণার কিছু দুর্বল দিকও আছে বলে কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন। এডিবার্গ ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট পল ডিগার্ড বলেন, সার্জ ইঞ্জিনের ব্যবহার ও হাসপাতালের গাড়ি পার্কিয়ের স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে করোনা সূত্রপাত চিহ্নিত করার বিষয়টির কিছুটি বৈধতা রয়েছে। গবেষণায় এমন পদ্ধতি ব্যহারের ধারণাটি বেশ মজার। তাঁর ভাষ্য, উহানের হাসপাতালগুলোর সঙ্গে চীনের অন্যান্য এলাকার হাসপাতালগুলোর সমসাময়িক ডেটা তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে এই গবেষণা আরও অনুপ্রেরণামূলক হতে পারে।

করোনাভাইরাস (কোভিড–১৯) গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম ধরা পড়ে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। বলা হচ্ছিল, সেখানকার সিফুড মার্কেট থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এটি চীন ছাপিয়ে বিশ্বে মহামারি আকার ধারণ করে। জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্তত ১৮৮ দেশ ও অঞ্চলে কোভিড–১৯ ছড়িয়ে পড়েছে। এর সংক্রমণে ইতিমধ্যে বিশ্বে চার লাখের বেশি মানুষ মারা গেছে।