মোদি সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার পথ ধরলেন কেজরিওয়াল

অরবিন্দ কেজরিওয়াল (রয়টার্স ফাইল ছবি)
অরবিন্দ কেজরিওয়াল (রয়টার্স ফাইল ছবি)

সংঘাত নয়, বরং কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতার রাস্তাতেই হাঁটা শ্রেয় মনে করছেন দিল্লির আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তাই উপরাজ্যপালের সঙ্গে বিবাদে না জড়িয়ে সহযোগিতার সিদ্ধান্তই নিল তাঁর সরকার।

করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী নাজেহাল। ১০-১২ দিনে রাজধানী-রাজ্যে করোনায় সংক্রমণের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। হাসপাতালগুলোয় হাহাকার নিত্য। বেডের অভাবে রোগীর মৃত্যু হচ্ছে পথে ও অ্যাম্বুলেন্সে। এই অবস্থায় কেজরিওয়াল জানিয়েছিলেন, দিল্লির সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো শুধু দিল্লিবাসীর জন্য সংরক্ষিত থাকবে।

বিবাদ এই সিদ্ধান্ত ঘিরে। দুদিন আগে এই ঘোষণার পরদিনই কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম প্রশ্ন তুলেছিলেন, দিল্লিবাসী কারা? পরের দিন দিল্লির উপরাজ্যপাল অনিল বাইজাল সরকারের ওই নির্দেশ বাতিল করে জানান, হাসপাতাল কারও জন্য সংরক্ষিত থাকবে না। এই সঙ্গে তিনি এই নির্দেশও দেন, যাঁদের শরীরে উপসর্গ নেই এবং যাঁদের ঝুঁকি প্রবল, তাঁদেরও করোনা পরীক্ষা করা হবে। কেজরিওয়াল সরকারের নির্দেশ ছিল, শুধু লক্ষণযুক্ত মানুষেরই পরীক্ষা করার।

দিল্লির হাল মুম্বাইয়ের মতো অতটা খারাপ না হলেও সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সরকারি অনুমান, যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে তাতে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রাজধানীতে রোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে সাড়ে ৫ লাখ। প্রয়োজন হবে দেড় লাখ বেড। এ কারণেই রাজ্য সরকার দিল্লির হাসপাতাল দিল্লিবাসীদের জন্য সংরক্ষণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু উপরাজ্যপাল নির্দেশ বাতিল করার পর রাজ্য সরকার এ নিয়ে সংঘাতের রাস্তায় না যাওয়াই শ্রেয় মনে করেছে। কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী বুধবার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘রাজ্য বিধানসভায় ৭০টির মধ্যে আমরা ৬২ আসনে জিতেছি। আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। উপরাজ্যপাল তা বাতিল করে অন্য নির্দেশ জারি করেছেন। আমরা তা মেনে নিচ্ছি। এটা বিবাদের সময় নয়।’ কেজরিওয়াল বলেন, ‘আমরা ঝগড়া করলে করোনা জিতবে। আমরা তা হতে দিতে চাই না। গোটা দেশের একজোট হওয়া প্রয়োজন।’

বুধবার ভারতে মোট সংক্রমণের সংখ্যা পৌনে ৩ লাখ পেরিয়ে গেল। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। সংক্রমণের ক্ষেত্রে মুম্বাই শহর (৫১ হাজার) চীনের উহানকেও ছাড়িয়ে গেল। দুশ্চিন্তার মধ্যে আশার ঝিলিক একটাই। যত জন এখনো চিকিৎসাধীন, তার চেয়ে বেশি মানুষ সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন।

অবশ্য চিন্তার অন্য একটি কারণ দেখা গেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু), ইউনিসেফ ও তৃতীয় বিশ্বে টিকাকরণ কর্মসূচির তদারকি সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন্স অ্যান্ড ইমিউনাজেশন বা গ্যাভির সাম্প্রতিক যৌথ জরিপের ফলে। দেখা গেছে, করোনার জন্য বিশ্বের এসব দেশে টিকাকরণ কর্মসূচি মারাত্মক ব্যাহত হয়েছে। ফলে হাম, পোলিও, কলেরা, ডিপথিরিয়ার মতো সংক্রামক ব্যাধিগুলো ফিরে আসতে পারে বলে আশঙ্কা। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপালসহ এশিয়া, আফ্রিকা ও তৃতীয় বিশ্বের ৮ কোটি শিশুর জীবনই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবারও স্পষ্ট জানিয়েছে, দিল্লিতে এখনো গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়নি। কিন্তু সংক্রমণের উৎস সম্পর্কে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার অন্ধকারে।

কোনো কোনো মহলের ধারণা, সারা দেশে সংক্রমণ বাড়ার একটা কারণ পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার আগ্রহ। পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা কমাতে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছেন, যাঁরা ঘরে ফিরতে চান, তাঁদের চিহ্নিত করে ১৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্র ও রাজ্যকে ব্যবস্থা নিতে হবে। লকডাউন ভাঙার জন্য শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে হবে। রাজ্য চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমিকদের সর্বতোভাবে সাহায্য করতে হবে। সে জন্য প্রয়োজনে ‘হেল্প ডেস্ক’ তৈরি করতে হবে। কাউন্সেলিং কেন্দ্রও খুলতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারদের পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘ডেটা বেস’ বা তথ্যভান্ডার তৈরিরও নির্দেশ দিয়েছেন, যা কেন্দ্র বা রাজ্য কারও কাছে ছিল না।