সংঘর্ষে বিরতি, ফের আলোচনায় ভারত ও চীন

ভারতীয় সেনার ট্রাক আজ বুধবার (১৭ জুন) কাশ্মীর থেকে লাদাখের দিকে যাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
ভারতীয় সেনার ট্রাক আজ বুধবার (১৭ জুন) কাশ্মীর থেকে লাদাখের দিকে যাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

লাদাখে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দায় ভারত ও চীন দুই দেশ একে অপরের ওপর চাপালেও উত্তেজনা প্রশমনে সচেষ্ট হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে ভারত ও চীনের দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী যথাক্রমে এস জয়শঙ্কর ও ওয়াং ই নিজেদের মধ্যে ফোনে কথা বলেন। তার আগেই লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে মেজর জেনারেল পর্যায়ে শান্তি বৈঠক শুরু হয়। বুধবারই চীন জানিয়ে দেয়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় আর কোনো সংঘর্ষ তারা চায় না। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, সমস্যার সমাধানে দুই দেশের সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা শুরু হয়েছে।

সোমবার দিবাগত রাতে লাদাখের গলওয়ান অঞ্চলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত ও চীনের সৈন্যদের মধ্যে হাতাহাতিতে ভারতের ২০ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়। ৪৫ জন চীনা সৈন্য ওই সংঘর্ষে হতাহত হন বলে ভারতের দাবি। চীনের পক্ষ থেকে সংঘাতের কথা বলা হলেও এই ঘটনায় হতাহত নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করা হয়নি।

সংঘর্ষের জন্য ভারত ও চীন একে অপরকে দায়ী করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর ফোনে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, ৬ জুন দুই দেশের সামরিক কমান্ডারদের মধ্যে সমঝোতা সত্ত্বেও ভারতীয় ভূখণ্ডে চীন একটা কাঠামো খাড়া করতে যায়। ওটা ছিল চীনের পূর্বপরিকল্পিত প্ররোচনা। ওই থেকেই সংঘর্ষ, রক্তপাত ও প্রাণহানি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জয়শঙ্কর বলেন, চীনের প্রয়োজন ভুল শোধরানো ও তার পুনরাবৃত্তি না করা। কারণ, এই ঘটনা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। দুই দেশেরই ৬ জুনের সমঝোতা অনুযায়ী চলা উচিত।

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর নতুন করে সংঘর্ষ না চাওয়ার কথা বললেও চীন কিন্তু গলওয়ানের দাবি থেকে সরেনি। ওই এলাকাকে তারা তাদের ভূখণ্ড বলে দাবি করেছে। ঝাও লিজিয়ান বিবৃতিতে বলেছেন, গলওয়ানের সার্বভৌমত্ব চীনের। ভারতীয় বাহিনী তা লঙ্ঘন করেছে। চীনা ভূখণ্ডেই সংঘর্ষ হয়েছে। সে জন্য চীনকে দোষী ঠাওরানো যাবে না।

লাদাখ সংঘর্ষ ভারত-চীন সম্পর্কে একটা বড় ধাক্কা, সন্দেহ নেই। হাতাহাতি ও মুখোমুখি সংঘর্ষে এতজনের মৃত্যু অভূতপূর্ব। ভারতের চলমান রাজনীতিতেও এই ঘটনা প্রভাব ফেলেছে। গত ছয় বছরে এই প্রথম সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। লাদাখ নিয়ে কংগ্রেস বেশ কিছুদিন ধরে সরব। সোনিয়া ও রাহুল গান্ধী বারবার টুইট করে প্রকৃত অবস্থা জানতে চেয়েছেন। চীন কী করে ভারতের জমি কবজা করল, সেই প্রশ্ন রেখেছেন। মোদি গুরুত্ব দেননি। সংঘর্ষ ও প্রাণহানির পর রাহুল প্রধানমন্ত্রীর নীরবতাকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেন। টুইট করে জানতে চান, ‘প্রধানমন্ত্রী নীরব কেন, কেন তিনি মুখ লুকোচ্ছেন?’ সমালোচনায় মুখর হন অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও। সম্মিলিত এই চাপের মুখে শুধু বিবৃতিই নয়, সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতেও মোদি বাধ্য হলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, আগামী শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় ভিডিও কনফারেন্স মারফত প্রধানমন্ত্রী বিরোধী নেতাদের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষ নিয়ে বৈঠকে বসবেন।

মঙ্গলবার নীরবতার পর বুধবার প্রথমে মুখ খোলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ও শোক প্রকাশ করে তিনি বলেন, জওয়ানদের মৃত্যু গভীর বেদনার। তাঁদের বলিদান দেশ ভুলবে না। তারপর বিবৃতি দেন প্রধানমন্ত্রী। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে তিনি হিন্দিতে বলেন, সেনাদের বলিদান বৃথা যাবে না। ভারত বরাবরের শান্তিপ্রিয় দেশ। কিন্তু যেকোনো প্ররোচনার উপযুক্ত ও কড়া জবাব দিতে সদা প্রস্তুত। মোদি বলেন, ‘বীর জওয়ানেরা মারতে মারতে প্রাণ দিয়েছেন। দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো সমঝোতা করব না।’ সংক্ষিপ্ত এই মন্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী শহীদ জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানান নীরবতা পালনের মাধ্যমে।

সেনা সূত্রের খবর, সংঘর্ষের সময় চীনারা যেসব লাঠি ও লোহার রড ব্যবহার করে, সেগুলোর ডগায় কাঁটাতার ও পেরেক পোঁতা ছিল। হাড় হিম ঠান্ডায় দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত জওয়ান গলওয়ান নদীতে পড়ে যান।

ভারত ২০ জন জওয়ানের মৃত্যু স্বীকার করেছে। আরও ৪ জন গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, চীনে হতাহতের সংখ্যা অন্তত ৪৫। কিন্তু চীনের দিক থেকে হতাহতের কোনো সংখ্যা বুধবারেও জানানো হয়নি।