ভারতের এক ইঞ্চি জমিও চীনের কবজায় নেই: মোদি

লাদাখে চীনা আগ্রাসন নিয়ে ভারত সরকার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন। সেখানে বক্তব্য রাখেন নরেন্দ্র মোদি। ছবি: এনডিটিভি
লাদাখে চীনা আগ্রাসন নিয়ে ভারত সরকার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন। সেখানে বক্তব্য রাখেন নরেন্দ্র মোদি। ছবি: এনডিটিভি

বিরোধীদের আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার সর্বদলীয় বৈঠকে জানালেন, ভারতের সীমানায় ঢুকে চীনা সেনারা কোনো ছাউনি বা পোস্ট দখল করেনি। এক ইঞ্চি জমিও কবজা করতে পারেনি। বরং ভারতের জওয়ানেরা আগ্রাসী চীনাদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, চীন যা করেছে, তাতে সারা দেশ আহত, ক্ষুব্ধ। ভারতীয় সেনা জল, স্থল ও অন্তরিক্ষ সব দিক রক্ষা করতে প্রস্তুত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনকে কূটনৈতিক স্তরে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভারত শান্তি চায়। কিন্তু সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোনো পদক্ষেপই নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হবে না। তিনি জানান, সীমান্তে সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ গত পাঁচ বছরে সরকার করেছে। নিজেদের সব দিক থেকে প্রস্তুত রেখেছে। দেশ আমাদের কাছে সবার আগে। কোনো চাপের কাছে ভারত মাথা নোয়াবে না। যা প্রয়োজন, সব করবে। সেনারা সীমান্ত রক্ষায় পূর্ণ ক্ষমতা রাখে। তাদের সব ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গোটা দেশ এই সংকটে এক। এই একতা গোটা পৃথিবীর কাছে বার্তাবহ।

লাদাখে চীনা আগ্রাসন নিয়ে সরকার এই সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন। চীনা আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা করে কংগ্রেসসহ সব বিরোধী দল এই সংকটে দৃঢ়ভাবে সরকারের পাশে থাকার কথা জানায়। যদিও সমর্থনের কথা জানানো সত্ত্বেও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী সরকারের সমালোচনা করেন।

বৈঠক শুরুর আগেই বিতর্কের শুরু। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদব আমন্ত্রিত না হওয়ায়। তেলেঙ্গানার এআইএমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়াইসিও ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ পাননি। এই উপেক্ষার পেছনে ‘শাসক দলীয় রাজনীতি’ কারণ কি না, সেই সমালোচনার মুখে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, যে মাপকাঠির ভিত্তিতে এই আমন্ত্রণ তাতে ওই দলগুলো পড়ে না। সরকারি সূত্রের মতে, বৈঠকে ডাকা হয়েছে স্বীকৃত জাতীয় দল, যে দলগুলোর লোকসভায় পাঁচজন সদস্য রয়েছেন অথবা যে দলের নেতা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য, তাদেরই। ব্যতিক্রম শুধু দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় দলগুলো। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং নিজে আমন্ত্রিত দলের নেতাদের ফোন করে বলেন, তাঁরা যেন নিজেরা আসেন। প্রতিনিধিদের যেন না পাঠান।

ভিডিও কনফারেন্স মারফত বৈঠক শুরু হয় বিকেল পাঁচটায়। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া সরকারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বিজেপির পক্ষে সভাপতি জে পি নাড্ডা। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, এনসিপির শরদ পাওয়ার, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, বহুজন সমাজ পার্টির মায়াবতী, সিপিআইয়ের ডি রাজা, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী টিআরএস নেতা কে চন্দ্রশেখর রাও, ডিএমকের এম কে স্ট্যালিন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপারসন তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেডি সভাপতি ও ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ও শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জেডিইউ নেতা নীতিশ কুমার। সরকারি সূত্রে বলা হয়, ২০ দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী রাতে বলেন, প্রতিটি দল দৃঢ়ভাবে সরকারের পাশে। দেশ এক। ঐক্যবদ্ধ।

বৈঠকের শুরুতেই রাজনাথ সিং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পরিস্থিতি ও ভারতের প্রস্তুতির কথা জানান। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় প্রস্তুত। জয়শঙ্কর কূটনৈতিক তৎপরতার কথা বলেন।

বিরোধী নেতাদের মধ্যে প্রথম ভাষণ দেন সোনিয়া গান্ধী। নিহত জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি এই পরিস্থিতির জন্য সরাসরি সরকারকে দায়ী করেন। দলের পক্ষ থেকে সভানেত্রীর ভাষণ সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়। সরকারের সমালোচনা করে সোনিয়া বলেন, লাদাখ পরিস্থিতি নিয়ে সরকার দেশবাসীকে অন্তত এক মাস অন্ধকারে রেখেছে। এই বৈঠক গত ৫ মে ডাকা উচিত ছিল। কিন্তু বিরোধীদের প্রবল দাবি সত্ত্বেও সরকার আদৌ গা করেনি। এই জাতীয় বিপর্যয়ে দেশ সব সময় দৃঢ়ভাবে সরকারের পাশে থাকে। আছেও। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকার বহু কিছু গোপন রেখেছে। বহু বিষয়ে বিরোধীরা অন্ধকারে। যেমন, কোন তারিখে চীন ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকেছে? কবে সরকার তা জানতে পারে? ৫ মে, না তারও আগে? সরকার কি সীমান্ত এলাকার উপগ্রহ চিত্র নিয়মিত পায় না? গোয়েন্দারা কি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ করেনি? সরকার গোয়েন্দা ব্যর্থতা স্বীকার করে কি? তিনি আরও বলেন, ৫ মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা মাস অযথা নষ্ট হয়েছে। ৬ জুনের পর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে সরাসরি চীনের সঙ্গে কথা বলা সরকারের উচিত ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। ফলে খামোখা ২০ জনের প্রাণ গেল। সোনিয়া বলেন, সরকার এই আশ্বাস দিক যে হারানো জমি পুনরুদ্ধার হবে। চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় তাদের স্বীকৃত অবস্থানে ফেরত যাবে।