করোনা নিয়ে ফের মোদি-কেজরিওয়াল সরকার কাজিয়া

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল

করোনার মোকাবিলায় রাজধানী-রাজ্য দিল্লিতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র বাদানুবাদ। বিবাদের একদিকে আম আদমি পার্টির রাজ্য সরকার, অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকার। এই বিবাদের মধ্যে সাধারণ মানুষকে পড়তে হয়েছে এক চূড়ান্ত বিভ্রান্তিকর অবস্থার মধ্যে। ইতিমধ্যে সংক্রমণের নিরিখে তামিলনাড়ুকে টপকে দিল্লি চলে এসেছে দুই নম্বরে। সংক্রমণের তালিকায় এক নম্বর স্থান মহারাষ্ট্রের।

কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ঠিক করেছে, আগামী ৬ জুলাইয়ের মধ্যে রাজধানী-রাজ্যের প্রতিটি বাড়ির প্রত্যেক সদস্যকে করোনা নমুনা পরীক্ষা করা হবে। রাজ্যের কনটেনমেন্ট এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের পরীক্ষা শেষ করা হবে চলতি মাসেই।

দিল্লির সংক্রমণ মাত্রাছাড়া হয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি হস্তক্ষেপ করে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একাধিক বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে। কীভাবে সংক্রমণের মোকাবিলা ঠিকমতো করা যায়, সে বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার একযোগে কয়েকটি সিদ্ধান্তও নেন।

অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, রাজধানী-রাজ্যে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে দৈনিক ১৭ হাজার করা হবে। রাজ্য সরকারও বেসরকারি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার খরচের অঙ্ক সাড়ে ৪ হাজার রুপি থেকে কমিয়ে ২ হাজার ২০০ রুপিতে বেঁধে দেয়। বেসরকারি হোটেল ও ব্যাঙ্কোয়েট হলগুলোকে সাময়িকভাবে কোভিড কেন্দ্রে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবে অতিরিক্ত ২০ হাজার বেড করোনা আক্রান্তদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কিন্তু এর পরেই শুরু হয় বিপত্তি।

দিল্লির উপরাজ্যপাল অনিল বৈজাল সম্প্রতি এক নির্দেশ জারি করে বলেন, সব করোনা আক্রান্তকে বাধ্যতামূলকভাবে পাঁচ দিন কোয়ারেন্টিন সেন্টারে থাকতে হবে। নির্দেশ জারি হতেই মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল আপত্তি জানান। তিনি আরও বলেন, নির্দেশ মানতে গেলে এই মুহূর্তে দিল্লিতে ৯০ হাজার বেড প্রয়োজন, যা জোগাড় করা অসম্ভব। মুখ্যমন্ত্রীর প্রবল আপত্তির পর উপরাজ্যপাল নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু বিবাদ বাধায় অমিত শাহের নির্দেশ।

উপরাজ্যপালের নির্দেশই একটু বদলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার জানান, পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ ধরা পড়লেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কোভিড সেন্টারে যেতে হবে। সেখানে চিকিৎসকেরা রোগীকে পরীক্ষা জানাবেন, কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রে তাঁকে থাকতে হবে নাকি বাড়িতেই চিকিৎসা করা যাবে। দিল্লি সরকার সঙ্গে সঙ্গেই এই নির্দেশের বিরোধিতা করে। উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া ওই নির্দেশ খারিজ করে অমিত শাহকে এক চিঠি লেখেন। তাতে বলেন, দিল্লিতে দেখা যাচ্ছে দুটি মডেল। একটা অমিত শাহর মডেল, অন্যটা কেজরিওয়াল সরকারের। এটা কিন্তু কোনো মডেলের প্রাধান্য পাওয়ার লড়াই নয়। তাঁর অনুরোধ, রোগী ও রোগের মোকাবিলার স্বার্থে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেন তাঁর নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেন। কারণ, সবাইকে কোভিড কেন্দ্রে যেতে হলে যত অ্যাম্বুলেন্স দরকার হবে, তা দিল্লিতে নেই। কোভিড কেন্দ্রেও হুলুস্থুল লেগে যাবে। মানুষের স্বার্থেই তাই এই নির্দেশ তুলে নেওয়া হোক।

কেজরিওয়ালের মডেল অনুযায়ী, সংক্রমণ ধরা পড়লেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক রোগীর বাড়ি গিয়ে দেখবেন বাড়িতে আলাদা থেকে চিকিৎসার সুযোগ আছে কি না। সুযোগ থাকলে কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। মুখ্যমন্ত্রী বুধবার টুইট করে বলেন, বহু মানুষ বাড়িতেই সুস্থ হয়ে উঠছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় দিল্লিতে নতুন সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় চার হাজার জন। তামিলনাড়ুকে (৬৪ হাজার ৬০৩) টপকে দিল্লি (৬৬ হাজার ৬০২) চলে আসে দুই নম্বর স্থানে। তালিকার এক নম্বরে মহারাষ্ট্র। আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৩৯ হাজার। দেশে দিনে নতুন সংক্রমিত হচ্ছেন ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। দিল্লিতে মৃত্যুহারও দ্রুত বাড়ছে। মারা গেছেন ২ হাজার ৩০১ জন। মৃত্যুর ক্ষেত্রে গুজরাট তৃতীয়। ১ হাজার ৭১০। মোদি রাজ্যে সংক্রমণ প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার।