করোনা: ভারতে ছয় দিনে সংক্রমণ এক লাখ

ভারতের মুম্বাইয়ে পিপিই পরে করোনা পরীক্ষার ক্যাম্পে যোগ দিতে বেরিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ছবি: রয়টার্স
ভারতের মুম্বাইয়ে পিপিই পরে করোনা পরীক্ষার ক্যাম্পে যোগ দিতে বেরিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ছবি: রয়টার্স

ভারতে করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যা পাঁচ লাখ পেরিয়ে গেল। সবচেয়ে বড় কথা, শেষ এক লাখ সংক্রমণে সময় লেগেছে মাত্র ছয় দিন! এত দ্রুত সংক্রমণের এমন বিস্তার সরকার, বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক মহলে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে গোষ্ঠী সংক্রমণের সম্ভাবনা নিয়ে।

করোনার এই লাগামছাড়া বৃদ্ধিতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। লাদাখে চীনা আগ্রাসন নিয়ে লাগাতার সমালোচনা করে আসা রাহুল আজ শনিবার করোনা নিয়ে আক্রমণ শানিয়ে বলেন, ‘করোনা রোধে সরকারের আদৌ কোনো পরিকল্পনা নেই। প্রধানমন্ত্রী মৌন। তিনি নীরবে আত্মসমর্পণ করেছেন। লড়াইয়ের সব উদ্যোগ হারিয়ে ফেলেছেন।’ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক নিবন্ধ সংযোজন করে তিনি টুইটে বলেছেন, গত দুই সপ্তাহে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিগোষ্ঠী অথবা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ একবারও করোনা মোকাবিলায় কোনো বৈঠকে বসেনি। রাহুল এর আগে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘ঔদ্ধত্য অজ্ঞতার চেয়েও ভয়ংকর।’

ভারতে করোনার সংক্রমণ প্রথম ১ লাখে পৌঁছেছিল ১১০ দিনে। ১ থেকে ২ লাখে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল ১৫ দিন। পরের এক লাখ ১০ দিনে। সংক্রমণ ৩ থেকে ৪ লাখ হয় ৮ দিনে। ৪ থেকে ৫ লাখ হয় মাত্র ৬ দিনে। শুক্র থেকে শনিবার ২৪ ঘণ্টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে সংক্রমিত হয় সাড়ে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ। প্রতিদিনই ভেঙে যাচ্ছে আগের দিনের রেকর্ড। শনিবার মোট সংক্রমণের সংখ্যা ৫ লাখ ৮ হাজার ৯৫৩। সংক্রমণ এই সংখ্যায় পৌঁছাতে সময় লেগেছে মাত্র ১৪৯ দিন!

এই কারণেই বিভিন্ন মহলে গোষ্ঠী সংক্রমণ নিয়ে প্রশ্ন জাগছে। সরকারিভাবে যদিও এখনো তা বলা হচ্ছে না। সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। অবশ্য তা তুলনামূলক হারে কম। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩৮৪ জনের। দেশে মোট মৃত্যু ১৫ হাজার ৬৮৫। উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রকে নিয়ে। শুধু ওই রাজ্যেই মারা গেছে ৭ হাজার ১০৬ জন।

মহারাষ্ট্রে মোট সংক্রমিত ১ লাখ ৫২ হাজার ৭৬৫ জন। তারপরেই রাজ্য হিসেবে দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে দিল্লি (৭৭ হাজার ২৪০)। সংক্রমণ ও মৃত্যু (২ হাজার ৪৯২) দুটি ক্ষেত্রেই রাজধানী–রাজ্য দ্বিতীয়। সংক্রমণে তৃতীয় তামিলনাড়ু (৭৪ হাজার ৬২২)। কিন্তু মৃত্যুতে তৃতীয় গুজরাট (১ হাজার ৭৭১)। এই চার রাজ্যকে নিয়ন্ত্রণে আনাই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই অবস্থায় প্রায় প্রতিটি রাজ্যই আরও বেশি করে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার দিকে হাঁটছে। যেমন পশ্চিমবঙ্গ ১ জুলাই থেকে মেট্রোরেল চালু করার কথা ভাবছে। তবে কোনো রাজ্যেই স্কুল–কলেজ, সিনেমা হল, বার আপাতত খোলা হচ্ছে না। স্কুলের সব পরীক্ষা ইতিমধ্যেই পুরো বছরের মতো বাতিল হয়ে গেছে।

দিল্লিতে করোনার মোকাবিলার দায়িত্বে রাজ্য সরকারের সঙ্গে এগিয়ে এসেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নমুনা পরীক্ষা চার গুণ বাড়ানো হয়েছে। শুক্রবার পরীক্ষা করা হয়েছে ২১ হাজারের বেশি নমুনা। শনিবারও তা–ই। যত বেশি পরীক্ষা তত বেশি সংক্রমণ। সে কারণে স্থাপন করা হয়েছে একাধিক ‘আইসোলেশন কেন্দ্র’। দক্ষিণ দিল্লির ছত্তরপুর এলাকায় এক আধ্যাত্মিক কেন্দ্রে খোলা হয়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ‘আইসোলেশন কেন্দ্র’। সেখানে মোট ১০ হাজার সংক্রমিতের চিকিৎসা করা যাবে। আপাতত ওই কেন্দ্রে দুই হাজার বেড পাতা হয়েছে। চিকিৎসার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেনা ও আধা সেনা বাহিনীকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল আজ যৌথভাবে ওই কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। আজ থেকে দিল্লিতে শুরু হয়েছে ‘সেরোলজিক্যাল সার্ভে’। রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না, এই পরীক্ষার মাধ্যমে তা দেখা হয়।