চীনকে আরও একবার কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন মোদি

নরেন্দ্র মোদি
নরেন্দ্র মোদি

চীনকে আরও একবার কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বললেন, লাদাখে যারা ভারতীয় ভূখণ্ডের দিকে চোখ তুলে চেয়েছিল, তাদের যোগ্য জবাব দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভারত যেমন বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে জানে, তেমনই জানে শত্রুতার উপযুক্ত জবাব দিতে।

প্রতি মাসের শেষ রোববার রেডিওতে প্রধানমন্ত্রী মোদির ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়। গত রোববারের সেই অনুষ্ঠানে তিনি টেনে আনেন লাদাখে চীনা হামলার প্রসঙ্গ। চীনকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পাশাপাশি মোদি এটাও বুঝিয়ে দেন, ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় দেশজুড়ে চীনা পণ্য বয়কটের মনোভাব দানা বাঁধতে শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে সাধারণ মানুষ তাঁকে বলছেন, লাদাখ হামলার পর থেকেই তাঁরা চীনা পণ্য কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। মোদি বলেন, এই মনোভাবই ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

পূর্ব লাদাখে চীনা আগ্রাসন নিয়ে ভারতের রাজনীতি এই মুহূর্তে উত্তপ্ত। দেশের সরকার ও সেনাবাহিনীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন নিয়ে দাঁড়ানোর কথা শুনিয়েও কংগ্রেস প্রতিদিন ‘সত্য উদঘাটন’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে যাচ্ছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী প্রতিদিনই জানতে চাইছেন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে চীনা সৈন্য গলওয়ান ও প্যাংগং লেক এলাকায় কতটা জমি দখল করে রেখেছে। জবাব না পেয়ে রাহুল তির্যক ভঙ্গিতে মোদিকে ‘সারেন্ডার মোদি’ তকমা দিয়েছেন। এমনকি, ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের আগেও রাহুল টুইট করে জানতে চান, দেশের সুরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় কবে আলোচিত হবে? লাদাখ নিয়ে মুখে কুলুপ সেনাবাহিনীর। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাও নীরব।

কংগ্রেসের কোনো প্রশ্নের সরাসরি জবাব সরকার বা শাসক দল বিজেপির নেতারাও দিচ্ছেন না। পাল্টা আক্রমণ করে তাঁরা বলছেন, কংগ্রেসের আমলে ভারতের ৪৩ হাজার কিলোমিটার জমি চীন দখল করেছে। এই রাজনৈতিক চাপান-উতোরের মধ্যেই রোববার রাহুলের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, তাঁর আত্মসমীক্ষা করা দরকার। তাঁদের মন্তব্য চীন ও পাকিস্তান হাতিয়ার করছে।

প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের দাবি, চীনা সৈন্যরা ভারতের অভ্যন্তরে ঘাঁটি গাড়েনি। অথচ, সব কটা উপগ্রহ চিত্র অন্য কথা বলছে। ২২ জুনের উপগ্রহ ছবিতে ভারতের দিকে চীনা অবকাঠামোর স্পষ্ট হদিস মিলেছিল। ২৫ ও ২৬ জুনের ছবিতে কালো ত্রিপলে ঢাকা আরও ১৬টি চীনা ছাউনির ছবি দেখা গেছে। ওই ছাউনিগুলো ২২ তারিখের ছবিতে ছিল না। অর্থাৎ, আলোচনা সত্ত্বেও চীন দখল করা জমি ছেড়ে পিছু হটছে না। আগ্রাসী মনোভাবও ত্যাগ করেনি।

গোয়েন্দাদের দাবি, গলওয়ানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে চীন ১৩৭ মিটার ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করেছে। অবকাঠামোও তৈরি করছে। বিরোধীদের দাবি, দখল করা জমির মোট পরিমাণ বেশ কয়েক কিলোমিটার। চীনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিশ্র ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, তার সমাধানের একমাত্র উপায় চীনের নতুন নির্মাণকাজ বন্ধ করা। গলওয়ান উপত্যকার সার্বভৌমত্বের দাবি আদৌ যুক্তিযুক্ত নয়। এই আচরণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে। পাল্টা প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি হবে।

উত্তেজনা কমার আশু কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। চীন ও ভারত দুই দেশই সীমান্তে তার শক্তি বৃদ্ধি করছে। চীনের তৎপরতার পাল্টা হিসেবে ভারত মোতায়েন করেছে ৪৫ হাজার জওয়ান। নিয়ে যাওয়া হয়েছে টি-৯০ ট্যাংক, ১৫৫ মিলিমিটার বফর্স হাউইটজার কামান, এয়ার সার্ভিল্যান্স সিস্টেম, এয়ার ডিফেন্স ক্ষেপণাস্ত্র ‘আকাশ’। নিকটবর্তী ঘাঁটিগুলোয় তৈরি রাখা হয়েছে ভারতীয় বিমানবাহিনীকে।