আমেরিকায় ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছে

আমেরিকার ৩৬টি অঙ্গরাজ্যে গত এক সপ্তাহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। ছবি: রয়টার্স
আমেরিকার ৩৬টি অঙ্গরাজ্যে গত এক সপ্তাহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। ছবি: রয়টার্স

আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য সবকিছু ধীরে ধীরে চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু এখন করোনাভাইরাসের বিস্তার বাড়তে থাকায় অন্তত ১৪ অঙ্গরাজ্য সে সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে। এতেও ভাইরাসটির বিস্তার বন্ধ করাটা কঠিন হয়ে যাবে বলে সতর্ক করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

গতকাল সোমবার জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের লাইভে ইভেন্টে বক্তব্য রাখেন দেশটির সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) মুখ্য উপপরিচালক অ্যানে শুখান্ট বলেন, ‘বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আমরা আশা করতেই পারি যে, এর বিস্তার কমিয়ে আনা যাবে। কিন্তু আমার মনে হয়, এটি অত্যন্ত কঠিন। কারণ, আমরা এটি সহজে নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে এখন আর নেই।’

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত আমেরিকায় করোনাভাইরাসের নিশ্চিত সংক্রমণের শিকার হয়েছে ২৫ লাখের বেশি মানুষ। এতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১ লাখ ২৬ হাজারের বেশি।

চলতি মাসের শুরুর দিকে সংক্রমণের হার কমে এলে ধীরে ধীরে অর্থনীতি চালুর সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন প্রশাসন। স্থানীয় প্রশাসনগুলোর মাধ্যমে এই অর্থনীতি চালুর কাজটি চলছিল। কিন্তু গত কয়েক দিনে দেশটির কিছু অঞ্চলে আবার সংক্রমণ বাড়তে থাকে। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় প্রশাসন মনে করছে, ঘর ও ঘরের বাইরে লোকসমাগম বেড়ে যাওয়াই এর কারণ। বিশেষত বিভিন্ন বার ও রেস্তোরাঁয় আবার মানুষের যাতায়াত শুরু হওয়ায় নতুন করে ভাইরাসটির বিস্তার বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

অবশ্য আগে থেকেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছিলেন যে, কিছু অঙ্গরাজ্য খুব দ্রুত গতিতে অর্থনীতি চালু করছে। এটি বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছিল। সে সময় তাঁদের কথা কেউ না শুনলেও এখন ঠিকই আবার লকডাউনের মতো পদক্ষেপের কথা ভাবছে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য প্রশাসন। এরই মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম সাতটি কাউন্টিতে বার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। একইভাবে বার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে টেক্সাস। আর ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যজুড়ে বারে বসে মদ্যপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অ্যারিজোনায় বার, জিমসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আরও এক মাসের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে সমুদ্র সৈকত বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো জানিয়েছেন, অর্থনীতি খোলার পদক্ষেপ স্থগিত করা হবে কিনা, তা পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর জানিয়ে দেওয়া হবে। এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ এ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন কুমো।

তবে নতুন করে বার-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে খুব একটা সুফল মিলবে না বলে মনে করছেন ড. পিটার হোটেজ। বেলর কলেজ অব মেডিসিনের ন্যাশনাল স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ডিন হোটেজ সিএনএনকে বলেন, সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে এখন যে খুব একটা সুফল মিলবে, তেমন নয়। এটা একটা চেষ্টা। কিন্তু সফল হওয়াটা কঠিন।’

গত এক সপ্তাহে আমেরিকার ৩৬টি অঙ্গরাজ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। তবে এর মধ্যেও দুটি অঙ্গরাজ্যে সংক্রমণ কমেছে। এগুলো হচ্ছে নিউজার্সি ও রোড আইল্যান্ড। এ দুটি অঞ্চলে গত এক সপ্তাহে ধারাবাহিকভাবেই সংক্রমণ কমেছে। খুব দ্রুত গতিতে সংক্রমণ বেড়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে। অর্থনীতি চালুর পদক্ষেপ নেওয়ার পর মাত্র কয়েক সপ্তাহেই অঞ্চলটিতে সংক্রমণ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। গতকাল সোমবার শুধু লস অ্যাঞ্জেলেসেই নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৯০৩ জনের। শহরটির মেয়র আগামী দু সপ্তাহকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এদিকে নতুন করে এই প্রকোপে অর্থনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। অর্থনীতি চালুর কারণে অনেকে আশার আলো দেখেছিলেন। কিন্তু এখন আবার লকডাউনের মতো সিদ্ধান্তের সামনে দাঁড়িয়ে সবাই হতাশ হয়ে পড়ছেন। টেক্সাসেই যেমন বার বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পর এক বারের মালিক সিএনএনকে জানান, বেকারভাতার আবেদন করা ছাড়া তাঁর আর উপায় রইল না। সব মিলিয়ে আমেরিকায় করোনাভাইরাসের এই দ্বিতীয় ঢেউ সবাইকে শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে।