হংকংয়ে নিরাপত্তা আইনে ধরপাকড় শুরু

হংকংয়ে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে জড়ো হন শত শত মানুষ। সেই বিক্ষোভের ছবি তুলতে যাওয়া সাংবাদিকদের মুখে পেপার স্প্রে ছোড়ে দাঙ্গা পুলিশ। গতকাল হংকংয়ের কেন্দ্রস্থলের একটি সড়কে।  ছবি: এএফপি
হংকংয়ে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে জড়ো হন শত শত মানুষ। সেই বিক্ষোভের ছবি তুলতে যাওয়া সাংবাদিকদের মুখে পেপার স্প্রে ছোড়ে দাঙ্গা পুলিশ। গতকাল হংকংয়ের কেন্দ্রস্থলের একটি সড়কে। ছবি: এএফপি

আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে চীনের আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকং। অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত করতে চীন হংকংয়ে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন কার্যকর করেছে। ওই আইনের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার হংকংবাসী বিক্ষোভ মিছিল বের করলে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে। নতুন আইনের আওতায় দুজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। অন্য কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও বেশ কয়েকজনকে।

গত মঙ্গলবার চীনের পার্লামেন্টের সংসদীয় কমিটিতে আইনটি পাস হওয়ার পরপরই তা পুনর্বিবেচনা করতে বেইজিংয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ২৭টি দেশ। তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কারোর নাক গলানো সহ্য করবে না তারা।

১৯৯৭ সালে একটি চুক্তির মাধ্যমে হংকংকে আবারও চীনের হাত তুলে দেয় ব্রিটেন। এর আগে অঞ্চলটি ব্রিটেনের উপনিবেশ ছিল। ‘এক দেশ দুই পদ্ধতির’ মাধ্যমে পরিচালিত হংকংয়ে আলাদা বিচার বিভাগ, আইনসভা, নিরাপত্তা বাহিনীও রয়েছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র হংকংয়ে নতুন করে অশান্ত হয়ে ওঠে গত বছরের মে মাসে। সন্দেহভাজন আসামিকে মূল ভূখণ্ড চীনে নিয়ে বিচারের সুযোগ দিয়ে একটি আইন করতে উদ্যত হয় বেইজিংপন্থী হংকংয়ের প্রশাসন। এর প্রতিবাদে হংকংবাসী ক্ষোভে ফুঁসে উঠলে সেই উদ্যোগ থেকে পিছু হটে প্রশাসন।

চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসের সংসদীয় কমিটি মঙ্গলবার বিলটি অনুমোদন করে। ওই দিনই চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিলটিতে সই করলে তা আইনে পরিণত হয়।

>জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রত্যাহার করতে চীনের প্রতি আহ্বান ২৭ দেশের।

ওই আইনে বিচ্ছিন্নতাবাদ, কেন্দ্রীয় সরকার পতন, সন্ত্রাসবাদ ও জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করতে বিদেশি বাহিনীর সঙ্গে আঁতাতমূলক যেকোনো কাজ শাস্তিমূলক অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং এ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া হংকংয়ের আইনসভাকে পাশ কাটিয়ে যেকোনো নিরাপত্তাসংক্রান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এ আইনে। এই আইন কেউ ভঙ্গ করছেন কি না, তা দেখভালের জন্য হংকংয়ে কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করবে চীনের নিরাপত্তা বাহিনী, যা আগে পারত না।

সমালোচক, পশ্চিমা বিশ্ব ও হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থীদের দাবি, হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা ধূলিসাৎ করবে এই আইন। হংকং একটি ‘নিষিদ্ধ পুলিশি রাষ্ট্রে’ পরিণত হবে।

হংকংকে ব্রিটেন থেকে চীনের হাতে হস্তান্তরের ২৩তম বার্ষিকী ছিল গতকাল। দিনটি উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হংকংয়ের প্রশাসন। এতে যোগ দেন হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম তাঁর উত্তরসূরিরা। এ দিনটি এলেই হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থীরা বেশ ঘটা করে বিক্ষোভের ডাক দেন। এবারের এই দিনটি ছিল আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু নতুন আইনে গ্রেপ্তারের শঙ্কা থাকায় অনেকে বিক্ষোভে আসতে ভয় পান। এরপরও কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি শপিংমলের সামনে জড়ো হন। এ সময় দাঙ্গা পুলিশ তাঁদের ওপর পিপার স্প্রে ছোড়ে, ব্যবহার করা হয় জলকামান। বিক্ষোভকারীরা বলতে থাকেন, ‘শেষ পর্যন্ত লড়ব’, ‘হংকংকে স্বাধীন করব’।

পরে পুলিশ জানায়, অবৈধভাবে সমবেত হওয়ার জন্য ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, স্বাধীন হংকংয়ের পতাকা রাখাসহ নতুন নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের জন্য দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে ওই আইনের প্রতিবাদ জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানিসহ ২৭টি দেশ। জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের কার্যালয়ে মঙ্গলবার বিবৃতিটি পড়ে শোনান জাতিসংঘের ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত জুলিয়ান ব্রেথওয়েট।