চীনকে টেক্কা দিতে দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ

বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে দুটি বিমানবাহী রণতরিসহ যুদ্ধজাহাজের একটি বহর পাঠিয়েছে ওয়াশিংটন। ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি
বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে দুটি বিমানবাহী রণতরিসহ যুদ্ধজাহাজের একটি বহর পাঠিয়েছে ওয়াশিংটন। ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

হংকংয়ে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে এবং সীমান্তবিরোধ নিয়ে ভারতের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে ব্যাপক আলোচনায় চীন। নানা বিষয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের উত্তেজনা বেড়েছে। এই অবস্থায় বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে দুটি বিমানবাহী রণতরিসহ যুদ্ধজাহাজের একটি বহর পাঠিয়েছে ওয়াশিংটন। গতকাল শনিবার সেখানে সাম্প্রতিকালের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া হওয়ার কথা রয়েছে। এতে অংশ নেওয়ার জন্যই যুদ্ধজাহাজগুলো সেখানে পাঠানো। তবে এই পদক্ষেপ এমন এক সময় নেওয়া হলো, যখন দক্ষিণ চীন সাগরে বড় ধরনের সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চীন।

করোনাভাইরাস, বাণিজ্য, হংকংসহ বিভিন্ন বিষয়ে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে বর্তমানে উত্তেজনা চরমে। এমন সময়ে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য একে অন্যকে দায়ী করে আসছে দেশ দুটি।

এক বিবৃতিতে মার্কিন নৌবাহিনী জানায়, ইন্দো-প্যাসিফিক মুক্ত ও খোলা রাখতে গতকাল দক্ষিণ চীন সাগরে অভিযান ও মহড়া পরিচালনা করতে যাচ্ছে ইউএসএস নিমিটজ ও ইউএসএস রোনাল্ড রিগ্যান (দুটি বিমানবাহী রণতরি)।

ওই দুই বিমানবাহী রণতরির সহযোগী হিসেবে আরও কিছু যুদ্ধজাহাজ পাঠানো হচ্ছে। তবে দক্ষিণ চীন সাগরের ঠিক কোথায় ওই মহড়া অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি ওই বিবৃতিতে। প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার বিস্তৃতি দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় ৯০ ভাগই চীন নিজেদের বলে দাবি করে থাকে। তবে চীনের এই দাবির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে প্রতিবেশী দেশগুলো।

দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন মহড়ার খবর প্রথম প্রকাশিত হয় ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এ। প্রতিবেদনে রিয়াল অ্যাডমিরাল জর্জ এম উইকফের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এমন দ্ব্যর্থহীন বার্তা আমাদের অংশীদার ও মিত্রদের কাছে দেওয়ার জন্যই এই মহড়া।’ রণতরি রোনাল্ড রিগ্যান পরিচালিত স্ট্রাইক গ্রুপের কমান্ডার উইকফ আরও বলেন, চীনের মহড়ার জবাব দিতে এই মহড়া নয়। কোনো রাজনৈতিক ঘটনার সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।

এক সপ্তাহ আগে ইউএসএস নিমিটজকে সঙ্গে নিয়ে আরেকটি যুদ্ধবিমানবাহী রণতরি ইউএসএস থিয়োডর রুজভেল্ট ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করে। ওয়েস্টার্ন প্যাসিফিক অঞ্চলে একই সময়ে তিনটি বিমানবাহী রণতরির অভিযান বা মহড়ায় যোগ দেওয়া বিরল ঘটনা। ফলে এই মহড়াকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

>

দক্ষিণ চীন সাগরে বড় ধরনের সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চীন। এর মধ্যে পাল্টা সামরিক মহড়ার ঘোষণা পেন্টাগনের।

চীন গত সপ্তাহে দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধপূর্ণ প্যারাসেল আইসল্যান্ডের কাছে পাঁচ দিনের সামরিক মহড়া চালানোর ঘোষণা দেয়, যা গত বুধবার শুরু হয়েছে। প্যারাসেল আইল্যান্ডকে চীন ও ভিয়েতনাম উভয় দেশই নিজেদের বলে দাবি করে থাকে।

চীনের ঘোষণার পরপর মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন দাবি করে, এ ধরনের মহড়া স্থিতিশীলতা রক্ষা ও উত্তেজনা কমানোর বিপরীতমুখী পদক্ষেপ হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি চীনের ওই মহড়ার সমালোচনা করে ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনও। তারা জানায়, এটা প্রতিবেশীদের সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে এবং এই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়াবে। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ওই সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দেয় চীন। উল্টো উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য ওয়াশিংটনকে দায়ী করে দেশটি।

মার্কিন নৌবাহিনীর তথ্যমতে, দক্ষিণ চীন সাগরসহ পশ্চিম প্রশান্ত অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই মহড়া চালিয়েছে মার্কিন বিমানবাহিনীর রণতরিগুলো। বর্তমানে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস নিমিটজ, ইউএসএস রোনাল্ড রিগ্যান ও ইউএসএস থিয়োডোর রুজভেল্ট নিয়োজিত রয়েছে।

দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বিরোধ অনেক দিনের। ব্রুনেই, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ কোরিয়া ওই সাগরের কিছু অংশ নিজেদের বলে দাবি করে। সেই বিরোধের জেরে সেখানে সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, দক্ষিণ চীন সাগর থেকে গ্যাস, তেল আহরণ করতে চাওয়া প্রতিবেশী দেশগুলোকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে চীন।