অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব হবে ধারণার চেয়েও ভয়াবহ

রয়টার্স প্রতীকী ছবি
রয়টার্স প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাসের মহামারি বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বজুড়ে বেকার হয়েছে কোটি কোটি মানুষ। স্বাস্থ্যসেবা ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে, খাদ্যাভাবে রয়েছে অনেকেই। অর্থনৈতিক এই বিপর্যয় সমাজের গভীরে থাকা বৈষম্যকে প্রকট আকারে দৃশ্যমান করেছে, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীগুলোকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে, দারিদ্র্য বরণ করতে হয়েছে অনেককে। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট।

এর আগে ২০০৭-০৮ সালে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। ওই মন্দার সময়ও কিছু দেশে দারিদ্র্য বেড়ে গিয়েছিল, অন্য দেশগুলোয় দারিদ্র্যের হার কমার গতি কমে গিয়েছিল। উৎপাদন কমে গিয়েছিল, বেকারত্ব বেড়ে গিয়েছিল। গবেষকেরা বেকারত্বের হার বৃদ্ধির সঙ্গে মৃত্যুর হার বৃদ্ধির সংযোগ ‍খুঁজে পেয়েছেন।

এবারের ব্যাপক এই মন্দায় মহামারির প্রভাব পরোক্ষই বলতে হবে। মূলত আর্থিক বাজারের সমস্যাগুলোর কারণে এই মন্দা প্রকট হয়েছে। এটাও মেনে নিতে হবে যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি শ্লথ হলে স্বাস্থ্যসেবা ও মানুষের ভালো থাকার ওপরও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

গত এপ্রিলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রক্ষেপণ করেছিল, ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৩ শতাংশ সংকোচন দেখবে, যা ২০০৭-০৮ সালের মহামন্দার পর সবচেয়ে বড় সংকোচন। গত সপ্তাহে আইএমএফ আগের ওই প্রক্ষেপণ পর্যালোচনা করে বলেছে, এবারের মন্দা ধারণার চেয়েও ভয়াবহ হবে। নতুন প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, অর্থনীতির সংকোচন ঘটবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ফেলো জাস্টিন স্যান্ডফুর বলেছেন, আইএমএফের সাম্প্রতিকতম প্রক্ষেপণ পুরো সংকটের একটা অংশ মাত্র তুলে ধরতে পেরেছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) গত সপ্তাহে এক ঘোষণায় বলেছে, চলতি বছর ১৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষকে খাদ্যসহায়তা দিতে তারা তাদের কার্যক্রম জোরদার করছে। করোনা মহামারিতে লকডাউন ও বেকারত্ব বৃদ্ধির কারণে বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠার পর কোনো একক বছরে এই প্রথম এত সংখ্যক মানুষের খাদ্যসহায়তা দিতে হচ্ছে ডব্লিউএফপিকে।

ডব্লিউএফপির জ্যেষ্ঠ মুখপাত্র স্টিভ তারাভেলা বলেন, মহামারি দরিদ্রকে আরও দরিদ্র করছে। ক্ষুধার্তকে আরও ক্ষুধার্ত। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, মন্দার সবচেয়ে বড় শিকার হয় নারী ও কিশোরীরা। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি ও কর্মসংস্থানের সুযোগের ওপর সবার আগে প্রভাব পড়ে।

বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, গত মার্চ মাসের শেষ নাগাদ মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে ১৫০ কোটি শিশু-কিশোরের পড়ালেখা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। গত এপ্রিলে মালালা ফান্ড প্রক্ষেপণ দেয়, মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে এক কোটি কিশোরী বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের লিঙ্গসমতাবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক নাহলা ভালজি গত মে মাসে বলেছেন, অতীতের সংকটগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে সবাই জানে যে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময় যে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে নারীরা এই ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারে খুব কমই। বিশ্বজুড়েই নারীরা সবচেয়ে বেশি অবৈতনিক কাজগুলো করে থাকে। তারা যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়ে কিংবা অপরিকল্পিতভাবে গর্ভধারণ করে, তাহলে তাদের ওপর তার প্রভাব হয় দীর্ঘমেয়াদি।