কলকাতায় করোনার সংক্রমণ বহুতল আবাসনে বেশি, বস্তিতে কম

কলকাতার চক্রবেড়িয়া এলাকা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
কলকাতার চক্রবেড়িয়া এলাকা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা মহানগরজুড়ে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। দেখা গেছে, করোনার সংক্রমণ বিভিন্ন বিভিন্ন আবাসনে বিস্তৃত হয়েছে। সে তুলনায় বস্তিতে এতটা ছড়ায়নি ভাইরাসের সংক্রমণ। বরং বস্তির মানুষ অনেকটাই ভালো আছেন। করোনার কবল থেকে রেহাই পেতে ফের কলকাতা পারে লকডাউন। সেই চিন্তাভাবনা চলছে রাজ্য সচিবালয় নবান্নে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে এ নিয়ে নতুন নির্দেশনা আসতে পারে।

কলকাতা পৌর করপোরেশনের মুখ্য প্রশাসক ও সাবেক মেয়র ফিরহাদ হাকিম গতকাল সোমবার জানিয়েছেন, কলকাতার বহুতল আবাসন ও পাকা বহুতল আবাসিক বাড়িতে করোনার প্রকোপ বেশি। সে তুলনায় বস্তিতে সংক্রমণ কম। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ২৮১ জন। এর মধ্যে ৩৭ জন বস্তিবাসী। আর ২৪৪ জন বহুতল আবাসন এবং বহুতল পাকা বাড়ির বাসিন্দা।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, আক্রান্তের ৪০ শতাংশ বহুতল আবাসন, ৪৫ শতাংশ বহুতল পাকা বাড়ি এবং মাত্র ১৫ শতাংশ বস্তি এলাকার বাড়ি। এর নেপথ্যের কারণ হিসেবে ফিরহাদ হাকিম বলেন, একশ্রেণির সম্পন্ন আবাসিকের চরম উদাসীনতা ও উন্নাসিকতা।

ফিরহাদ হাকিম এ কথাও বলেন, বেশির ভাগ বহুতল ও পাকা বাড়িতে পৌরসভার স্বাস্থ্যকর্মীদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। তাঁরা জানতেও পারছেন না, ওই সব আবাসন ও পাকা বাড়িতে কতজন করোনায় আক্রান্ত বা সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত রয়েছেন। ফলে মাইক্রোপ্ল্যানিং কর্মসূচি পালনে সহযোগিতার পরিবর্তে অসহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি পৌর করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর, মুখ্য প্রশাসককেও ঢুকতে দিচ্ছে না। তাই কলকাতায় এখন প্রতিদিন গড়ে ২৫০ জনের বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন করোনায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শহরে করোনা রুখতে পৌর করপোরেশনের সঙ্গে নতুন করে পদক্ষেপ নিতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

ইতিমধ্যে কলকাতা পৌর করপোরেশন শহরের ১৯টি এলাকাকে অতিসংক্রমিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে আরও কড়াভাবে লকডাউন বহাল করা চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।

কলকাতা পৌর করপোরেশনের স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশাসক অতীন ঘোষ বলেছেন, শহরের বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতালের সমস্ত বেডে সম্পন্ন পরিবারের রোগীরাই ভর্তি রয়েছেন। বেশির ভাগ পরিবারের প্রায় সব সদস্যই সংক্রমিত হচ্ছেন। তা ছাড়া হোম কোয়ারেন্টিনে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা ঘরের মধ্যে পরছেন না মাস্ক। এতে পরিবারের মধ্যে সংক্রমণের হার বাড়ছে।

কলকাতার যেসব এলাকায় এখন করোনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বাগবাজার, মতিলাল বসাক লেন, কাঁকুরগাছি, সিআইটি রোড, আলীপুর রোড, জাজেস কোর্ট, জাস্টিস মাধবচন্দ্র রোড, এলগ্রিন রোড, চক্রবেড়িয়া রোড, শরৎ বোস রোড, গলফ ক্লাব রোড, টলি পার্ক অ্যাপার্টমেন্ট, ডোভার লেন, পূর্বালোক, পণ্ডিতিয়া রোড, ড. শরৎ ব্যানার্জি রোড।

সোমবার পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ২৮১ জন। আর মারা গেছেন ১০ জন। সব মিলিয়ে এখন কলকাতায় এই সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৩৮৯। আর মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮১। সব মিলে এখন কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৯৮৭। এর মধ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এই রাজ্যে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছে ৮৬১ জন। আর সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গে মারা গেছে ২২ জন। এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছে ৭৭৯ জন। তবে এই রাজ্যে সুস্থতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। এখন পর্যন্ত এই রাজ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৫ হাজার ২৩৫ জন। সুস্থতার হারে এখন ভারতের ১৯তম স্থান পশ্চিমবঙ্গের। সুস্থতার হারে ভারতে এখন শীর্ষে রয়েছে চণ্ডীগড়। সেখানে সুস্থতার হার ৮৬ শতাংশ।