করোনার সর্বোচ্চ দৈনিক শনাক্ত নিয়ে নতুন বিপর্যয়ে টোকিও

ছবি রয়টার্স
ছবি রয়টার্স

জাপানে করোনাভাইরাসের ফিরে আসা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। টানা ছয় দিন ধরে নতুন শনাক্ত হওয়া দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ১০০–এর ওপরে থাকার পর গতকাল তা ৭৫–এ নেমে যায়। অনেকে তখন কিছুটা হলেও আশ্বস্ত বোধ করতে শুরু করেছিল। কিন্তু আজকের সংখ্যা গণনা তাদের সেই প্রত্যাশা ভেঙে দিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ৯ জুলাই রেকর্ড সর্বোচ্চ ২২৪টি নতুন সংক্রমণ টোকিওতে শনাক্ত করা হয়। এই হিসাব এর আগে এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখে গণনা করা ২০৬টির চেয়ে বেশি।

উল্লেখ্য, এপ্রিল মাসের সেই গণনার পর জরুরি অবস্থা জারি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল। জাপান সরকার কিংবা টোকিওর মেট্রোপলিটন প্রশাসন এখন অবশ্য আবার জরুরি অবস্থা জারির সম্ভাবনা নিয়ে ভাবতে চাইছে না। তবে তা সত্ত্বেও সংক্রমণের আরেকটি ধাক্কা সামাল দিতে হলে কী করা দরকার, তা নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্তে তাদের পৌঁছাতে হবে।

রাজধানীর প্রশাসন হঠাৎ করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এতটা বৃদ্ধি পাওয়াকে এখনো দুর্যোগ হিসেবে দেখছে না। বরং কর্মকর্তারা বলছেন, মানুষের আরও বেশি আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে গিয়ে ভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষায় যোগ দেওয়ার প্রত্যাশিত ফলাফল হচ্ছে এটা। এ ছাড়া সংক্রমণ মূলত রাতের বিনোদনের কয়েকটি জায়গায় সীমিত থাকাও ঢালাও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে কর্মকর্তাদের বিরত রাখছে এবং তাঁরা বিচলিত বোধ করছেন না। টোকিওর গভর্নর ইয়ুরিকো কোইকে আজ সকালে রাখা এক বক্তব্যে বলেছেন, তাঁর বিশ্বাস, নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক মানুষের অংশ নেওয়ার ফলাফল এবং এ কারণেই নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের দিকে এগিয়ে গিয়ে অর্থনীতির ক্ষতি তিনি আর করতে চাইছেন না।

নতুন সংক্রমণ মূলত কয়েকটি স্থানে কেন্দ্রীভূত থাকায় সাধারণ মানুষও এ নিয়ে এখন পর্যন্ত খুব বেশি চিন্তিত নয়। তবে আগামী কয়েক দিন সংক্রমণের গণনা একইভাবে বাড়তে থাকলে এই হিসাব হয়তো পাল্টে যেতে পারে, যা কিনা শেষ পর্যন্ত সীমিত আকারে হলেও আবার নিয়ন্ত্রণ আরোপের দিকে প্রশাসনকে নিয়ে যেতে পারে।

অন্যদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের অন্য যে আরেকটি দিক সরকারকে উৎসাহিত করছে, তা হলো মৃত্যুর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাওয়া। গত দুই সপ্তাহে জাপানের রাজধানীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারও মৃত্যু হয়নি। সংক্রমণ আবার বিস্তৃত হতে থাকলেও চিকিৎসা গ্রহণ শেষে হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সংখ্যাও হচ্ছে হাতেগোনা ছয়জন। বেশি মানুষ করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়া সত্ত্বেও সীমিত মৃত্যুর পেছনের একটি কারণ হচ্ছে, আক্রান্তদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত তরুণদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। এরা মূলত ২০ ও ৩০ বছর বয়সের লোকজন, রোগপ্রতিরোধ সামর্থ্য যাঁদের বৃদ্ধদের চেয়ে বেশি।

এ রকম হিসাব-নিকাশ সরকারকে আশ্বস্ত করতে পারলেও আগের মতো ঘরের বাইরে যাওয়ায় মানুষকে তা এখনো প্রণোদিত করতে পারছে না। মানুষের, বিশেষ করে মধ্যবয়সী সংসারী লোকজনের জীবনধারায় অজান্তেই যেন এক বদল এসে গেছে। তাঁরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ঘরমুখী। করোনাভাইরাস দূরে রাখার বাছবিচারে এটাকে ইতিবাচক অগ্রবর্তী হিসেবে দেখা গেলেও সামাজিক জীবনধারা ও অর্থনীতির বেশ কয়েকটি দিকের বেলায় তা বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিচ্ছে।

সমাজ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাপানে গার্হস্থ্য নিপীড়ন এখন আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ার পথে। অন্যদিকে অর্থনীতি, বিশেষ করে অর্থনীতির ভ্রমণ–সংক্রান্ত খাত, কনসার্ট ও খেলাধুলার মতো বিনোদন ব্যবসা এবং রেস্তোরাঁ ও পানশালা পরিচালনা এখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। ফলে এসব খাতে কীভাবে সাহায্য করা যায়, সেই চিন্তাও সরকারকে করতে হচ্ছে।