বিশ্বে করোনার ঊর্ধ্বগতি, প্রতিদিন শনাক্ত ২ লাখ করে

১ থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত সময়ে বিশ্বজুড়ে শনাক্ত হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ রোগী। মারা গেছেন প্রায় ৩৮ হাজার। ছবি: রয়টার্স
১ থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত সময়ে বিশ্বজুড়ে শনাক্ত হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ রোগী। মারা গেছেন প্রায় ৩৮ হাজার। ছবি: রয়টার্স

চলতি মাসের শুরু থেকে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে হঠাৎ করে দ্রুত ঊর্ধ্বগতি শুরু হয়েছে। মাসের প্রথম আট দিনের মধ্যে চার দিনই দৈনিক নতুন রোগী শনাক্তের হার ২ লাখ ছাড়িয়েছে। বাকি চার দিন ছিল ২ লাখের নিচে। আট দিনের গড় প্রায় ২ লাখ। অথচ গত মাসেও গড় ছিল দেড় লাখের নিচে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে, বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতির দিনে দিনে অবনতি ঘটছে।

জুলাইয়ের এ বাড়তি সংখ্যায় সবচেয়ে বড় অংশ থাকছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দেশটিতে দৈনিক রোগী শনাক্তের হার প্রথমবারের মতো ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে গত বুধবার। তবে বিশ্বজুড়ে সংক্রমণের সঙ্গে তুলনায় মৃত্যু অতটা বাড়েনি। তারপরও মৃত্যুর সংখ্যা একটু একটু করে বাড়তির দিকে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

করোনা মহামারির বৈশ্বিক তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১ থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত সময়ে বিশ্বজুড়ে শনাক্ত হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ রোগী। মারা গেছেন প্রায় ৩৮ হাজার। অর্থাৎ গড়ে দিনে প্রায় ২ লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষের। অথচ গত জুনেও দৈনিক গড়ে দেড় লাখের কম রোগী শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন সাড়ে ৪ হাজারের কিছু বেশি। ওই মাসে বিশ্বজুড়ে মোট শনাক্ত হয়েছে ৪৩ লাখ ২৬ হাজারের বেশি রোগী, মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের।

করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক হিসাব প্রকাশ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফো। এ ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে শনাক্ত রোগীর
সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২৩ লাখ ছুঁই ছুঁই। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭১ লাখের বেশি রোগী। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৫৪ হাজারের বেশি মানুষের।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গতকাল সদস্যরাষ্ট্রগুলোর এক ব্রিফিংয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দিনে দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক এই মহামারির বিস্তার আরও দ্রুতগতিতে ঘটছে। বিগত ছয় সপ্তাহে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।

সংক্রমণ ও মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র এখনো শীর্ষ দেশ। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। দেশটিতে তারপর থেকে যে মহামারি পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, তার আর উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বরং দিনে দিনে আরও অবনতি ঘটছে পরিস্থিতির। যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩২ লাখ ছুঁই ছুঁই। মৃত্যু ১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে ৬১ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দেশটিতে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক রোগী শনাক্তের রেকর্ড। এদিন যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন আরও ৮৯০ জন রোগী।

>

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে দিনে দিনে। ছয় সপ্তাহে রোগী দ্বিগুণ।

করোনার সংক্রমণে প্রথমে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য হিমশিম খেয়েছে। সেই নিউইয়র্ক সামলে উঠলেও এখন যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া আর ফ্লোরিডায় যেন সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটেছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে টেক্সাসের কর্তৃপক্ষ আবারও লকডাউন করেছে। অন্য অঙ্গরাজ্যগুলোয়ও বিভিন্ন শহর কর্তৃপক্ষ আবারও লকডাউনের পথে হাঁটছে।

যুক্তরাষ্ট্রের যে অঙ্গরাজ্যগুলোয় করোনার সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে, সেগুলোর তালিকা করলে লুইজিয়ানা থাকবে নিচের দিকেই। তারপরও এখানকার গভর্নর জন বেল এডওয়ার্ডস বুধবার বলেছেন, ‘আমাদের অঙ্গরাজ্যজুড়ে মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। এখন আর এ রোগ এক বা দুই এলাকায় সীমাবদ্ধ নেই।’

সিএনএন জানায়, ফ্লোরিডার অবস্থা এতটাই নাজুক যে সেখানকার হাসপাতালগুলোর নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রগুলোর (আইসিইউ) ধারণক্ষমতা শূন্যের কোঠায় নেমে আসছে। বুধবার এখানকার ৪২টি হাসপাতাল জানিয়েছে, তাদের সব আইসিইউ শয্যা রোগীতে ভরা। নতুন করে আর আইসিইউতে রোগী রাখা সম্ভব নয়।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলেও। দেশটিতে ১৭ লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। করোনায় মারা গেছেন ৬৮ হাজারের বেশি মানুষ। পেরু, চিলিসহ দক্ষিণ আমেরিকার অন্য দেশগুলোর পরিস্থিতিও দিনে দিনে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী মেক্সিকোর অবস্থাও ততটা ভালো নয়।

সংক্রমণ ও মৃত্যুতে তৃতীয় শীর্ষ দেশ দক্ষিণ এশিয়ার ভারত। এ দেশেও সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটেছে যেন। কয়েক দিন ধরে প্রতিদিনই ২০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। দৈনিক মৃত্যুও ৫০০ জনের আশপাশে থাকছে। এর মধ্যে ৪ জুলাই মারা যান ৬১০ জন, যা এ পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা। ভারতে ৭ লাখ ৮০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ২১ হাজারের বেশি।