করোনায় সৃষ্ট অসমতায় আসতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়

প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স
প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক অসমতার সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থার সত্যিকার চিত্র এখনো উঠে আসেনি। এই অসমতা বিশ্বকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে ফেলতে পারে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা খ্রিষ্টান এইডের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

‘ব্লিডিং ব্যাক উইথ জাস্টিস: ডিসমান্টলিং ইনইকুয়ালিটি আফটার কোডিভ-১৯’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, চাকরি হারানো ও খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা মারাত্মক আকার নেওয়ায় গরিব দেশগুলোতে সংকট বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে রূপ নিচ্ছে। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাবগুলো কেবল পড়তে শুরু করেছে।

যুক্তরাজ্যের পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান জানায়, প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, ২০২০ সালে কোনো জরুরি সহায়তা না পেয়ে তীব্র ক্ষুধায় ভোগা মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে, অর্থাৎ ২৫ কোটিতে গিয়ে ঠেকবে। অনেক দেশে খাদ্যের দাম ব্যাপকভাবে বাড়তে শুরু করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ আফগানিস্তানের অনেক এলাকায় ইতিমধ্যে খাদ্যের দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে। ভারতের বিভিন্ন শহরের আট কোটি মৌসুমি শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। ফলে তাঁরা গৃহহীন অবস্থায় থেকে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর অবস্থাও একই। মাতৃস্বাস্থ্যের মতো প্রতিদিনকার স্বাস্থ্যসেবাও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেক দেশে করোনাকালে চিকিৎসার অভাবে করোনা রোগীর চেয়ে বেশি মারা যাচ্ছেন অন্য রোগীরা।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার অক্সফাম এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, এ বছর সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণে যত লোক মারা যাবে, তার চেয়ে বেশি মারা যাবে ক্ষুধায়। চলতি বছরে বিশ্বের সবচেয়ে গরিব প্রায় ১২ কোটি ২০ লাখ মানুষ অতিমাত্রায় দারিদ্র্য ও অনাহারে ভুগবে। এর ফলে দিনে অতিরিক্ত ১২ হাজার লোকের মৃত্যু হতে পারে।

খ্রিষ্টান অ্যাড নামের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনায় বাড়ছে অসমতা
ধনী–গরিব বৈষম্য প্রকট হবে
২০২০ সালে তীব্র ক্ষুধায় ভোগা মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ, অর্থাৎ ২৫ কোটিতে গিয়ে ঠেকবে।
অতিগরিব দেশগুলোতে অনেকে, বিশেষত মেয়েরা আর কখনোই স্কুলে ফিরে যেতে পারবে না।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নিয়মিত হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু অনেক দেশে দুর্বল স্যানিটেশন ব্যবস্থার কারণে সেই স্বাস্থ্যবিধি মানাও অধিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের (৩০০ কোটি) বাড়িতে হাত ধোয়ার মৌলিক উপকরণ নেই। আফ্রিকার দ্বিতীয় ও চতুর্থ জনবহুল দেশ ইথিওপিয়া ও গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে প্রতি ১০ জনের একজনের কম লোকের বাড়িতে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

খ্রিষ্টান অ্যাড আরও বলছে, প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর ৯ জনই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। অতিগরিব দেশগুলোতে অনেকে, বিশেষত মেয়েরা আর কখনোই স্কুলে ফিরে যেতে পারবে না। পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলার প্রাদুর্ভাবের সময় স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মেয়েদের স্কুল থেকে স্থায়ীভাবে ঝরে পড়ার হার অনেক বেড়ে যায়। ফলে বেড়ে যায় শিশুশ্রম, বঞ্চনা, যৌন নিপীড়ন, বাল্যবিবাহ ও অল্প বয়সে সন্তান জন্মের হার। সংকটের সময় সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বড় মূল্য চুকাতে হয় নারীদের। নারীদের বেশির ভাগেরই সামাজিক সেবাকর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করতে হয় বিভিন্ন সেক্টরে। অর্থনৈতিক সংকটের সময় নারীদের প্রতি সহিংসতাও অনেক বেড়ে যায়।

ধনী ও গরিব দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক অসমতার বিষয়টির ওপরও আলোকপাত করা হয়েছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, ধনী দেশগুলো নিজেদের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে বিশাল পরিমাণ অর্থ জোগাড় করে। অন্যদিকে গরিব দেশগুলো বিশাল ঋণের বোঝায় কাতরাতে থাকে।

করোনা মহামারির কারণে বেড়ে যাওয়া অসমতা বিশ্বকে যে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে দাঁড় করিয়েছে, তা থেকে উত্তরণের কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনের ভূমিকাতে প্রখ্যাত উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ জ্যোতি ঘোষ বলেন, ‘বিপর্যয় রুখতে এবং সমতাভিত্তিক বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারে লক্ষ্যমাত্রা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রয়োজন। এটা ব্যাপকভাবে আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্কের রূপান্তর ঘটাবে।’