কাতার অবরোধ মীমাংসার শেষ চেষ্টাও ব্যর্থ

২০১৭ সালের জুন থেকে সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশের আকাশসীমা বন্ধ রয়েছে কাতার এয়ারওয়েজের জন্য। ছবি: রয়টার্স
২০১৭ সালের জুন থেকে সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশের আকাশসীমা বন্ধ রয়েছে কাতার এয়ারওয়েজের জন্য। ছবি: রয়টার্স

কাতার অবরোধ মীমাংসার কূটনৈতিক প্রয়াস আবারও ভেস্তে গেল। কাতারের দাবি, আরব আমিরাতের নিজ অবস্থান বদল এবং দেশটির প্ররোচনায় সৌদি আরবও সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় পুরো বিষয়টি ব্যর্থ হয়। আমেরিকার ফক্স চ্যানেলের বরাতে এই প্রয়াসের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কাতারের স্থানীয় কিছু গণমাধ্যম।

এবারের প্রয়াসের মূল বিষয়টি ছিল কাতার এয়ারওয়েজের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর আকাশসীমা খুলে দেওয়া। এ সম্পর্কিত মীমাংসা প্রস্তাবের বেশ কিছু বিষয় মেনে নিতে সম্মত হয় সৌদি আরব ও আরব আমিরাত।

২০১৭ সালের জুন থেকে সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের (বাহরাইন ও মিসরসহ) আকাশসীমা বন্ধ রয়েছে কাতার এয়ারওয়েজের জন্য। কেবল আকাশসীমা নয়, কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিকসহ সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয় এই জোট। তাই তখন বাধ্য হয়ে কাতার এয়ারওয়েজের উড়োজাহাজগুলো ব্যবহার করছে ইরানের আকাশসীমা। আর এ কারণে ইরান কাতারের কাছ থেকে পাচ্ছে বার্ষিক ১৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু এই অর্থ ইরানের হাতে যাক, তা কোনোভাবেই চাচ্ছে না ট্রাম্প প্রশাসন।

আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে ইরানের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান জোরালো করার বিভিন্ন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইরানকে কাতারের এই বার্ষিক ফি থেকে বঞ্চিত করতে তাই বেশ আগ্রহী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের প্রাথমিক সম্মতির পরই একটি সমন্বিত আপসনামা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় ওয়াশিংটনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।

কাতারের দৈনিক আলরায়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, এই প্রচেষ্টার সূচনা হয় কয়েক মাস আগে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার বৈঠকে বসেন আমেরিকা, কাতার, সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের নীতিনির্ধারকেরা। প্রাথমিকভাবে লক্ষ্য ছিল কাতার এয়ারওয়েজের জন্য এই দুই দেশের আকাশসীমা খুলে দেওয়া। কিন্তু চূড়ান্ত পর্বে আকস্মিকভাবে অবস্থান বদল করে আবুধাবি। পাশাপাশি আমেরিকার এই মীমাংসা প্রস্তাবনার প্রতি সমর্থন স্থগিত করতে সৌদি আরবের প্রতিও আহ্বান জানান আবুধাবির প্রতিনিধিরা। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে পুরো বিষয়।
এতে আশাহত হন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্তারাও। কারণ, চার বছর ধরে চলা উপসাগরীয় সংকট নিরসন করতে পারলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ট্রাম্পের সাফল্য হিসেবে যোগ হতো বিষয়টি, যা আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্পের অবস্থানকে শক্তিশালী করত।

কাতারে অবস্থিত আমেরিকান সেনাদের ঘাঁটিতে যাতায়াত এবং নানা কাজে দোহায় মার্কিন কূটনীতিকদের বহনকারী কাতার এয়ারওয়েজ ইরানের ওপর দিয়ে অতিক্রম করে থাকে। বিষয়টিতে নিরাপদ বোধ করেন না মার্কিনরা। এর চেয়ে কাতার এয়ারওয়েজের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ সৌদি ও আমিরাতের আকাশসীমা ব্যবহার তুলনামূলকভাবে বেশ নিরাপদ মার্কিনদের কাছে।

ফক্স নিউজের এই প্রতিবেদন সম্পর্কে অবশ্য সৌদি আরব ও আরব আমিরাত এখনো সুস্পষ্টভাবে কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে কাতারের দৈনিক আলশারক-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরব যে দিন দিন আরব আমিরাতের অন্ধ অনুসারীতে পরিণত হচ্ছে, এর মাধ্যমে সেটি আবারও প্রমাণিত হলো।