করোনার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় বন্যার হানা

চীনের মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ জিয়াংশিতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ইয়াংজি নদীর পানি উপচে আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়ে। এতে শত শত বাড়িঘর ও অবকাঠামো পানিতে তলিয়ে যায়। গতকাল জিয়াওজিয়াং এলাকায়। ছবিটি ওপর থেকে তোলা। ছবি: এএফপি
চীনের মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ জিয়াংশিতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ইয়াংজি নদীর পানি উপচে আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়ে। এতে শত শত বাড়িঘর ও অবকাঠামো পানিতে তলিয়ে যায়। গতকাল জিয়াওজিয়াং এলাকায়। ছবিটি ওপর থেকে তোলা। ছবি: এএফপি

করোনাভাইরাসের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া ও চীনে আঘাত হানল বন্যা। ভারি বৃষ্টিপাতে নদ–নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই তিন দেশে বন্যা ও ভূমিধসে গত এক মাসে অন্তত ২২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন।

ভারতের কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশটির উত্তর–পূর্বাঞ্চলে বন্যা ও ভূমিধসে নতুন করে প্রাণ হারিয়েছে ১৬ জন। মুম্বাইয়ে ভবনধসে আটজন মারা যায়। এ নিয়ে দেশটিতে ভূমিধস ও বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০১। গত এক মাসে নেপালে ১১৭ জন ও বাংলাদেশে ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

ভারতের ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণকক্ষ শুক্রবার জানায়, ভারী বর্ষণের কারণে আগের দিন বৃহস্পতিবার মুম্বাইয়ের দুই ভবনের আংশিক ধসে পড়ে। এতে এক ভবনের ছয়জন এবং অন্য ভবনের দুজন প্রাণ হারান।

ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, চীনের তিব্বত, ভারত ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বহমান ব্রহ্মপুত্র নদের পানি গত মাসে বৃষ্টির কারণে বেড়ে যায়। এতে নদের পনিতে প্লাবিত হয় আসাম রাজ্যের নিম্নাঞ্চল। সেখানে ভূমিধস বেড়ে যায়। এতে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ঘরহারা হয়েছে।

আসাম রাজ্য সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান এম এস মনিবানান বলেন, আসামের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানিতে আটকে পড়া প্রায় ৪ হাজার লোককে উদ্ধার করেছে কর্তৃপক্ষ। বন্যায় বাড়িঘর জলমগ্ন বা ধ্বংস হয়েছে, এমন প্রায় ৩৬ হাজার মানুষ প্রায় ৩০০ সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।

আসামে মানুষের মতো প্রাণীরা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। আসামের ৪৩০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিখ্যাত কাজীরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের ৯০ শতাংশই পানিতে তলিয়ে গেছে। সেখানকার বেশ কিছু গন্ডার ও বন্য শূকর ডুবে গেছে। রাজ্যের বনমন্ত্রী পরিমল সুক্লবৈদ্য বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘আমি বলতে পারি, সাম্প্রতিকালে রাজ্যের ভয়াবহ বন্যার একটি এবারের বন্যা।’

প্রতিবেশী দেশ নেপালে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পানি উজানে নেমে আসায় ভারতের দরিদ্র রাজ্য বিহারের পূর্বাঞ্চলের অন্তত ৯টি নদীর পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় অনেক গ্রাম ডুবে গেছে। ৯ নদীর একটি গন্ধক নদী। এর পানির তোড়ে বিলীন হয়ে গেছে বিহারের গোপালগঞ্জ জেলার কোটি কোটি ডলারের নবনির্মিত সেতুর সব সংযোগ সড়ক। ফলে সেখানকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর ওপর শুক্রবার থেকে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় রাজ্যে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে রাজ্যের রাজধানী পাটনার আবহাওয়া অফিস।

নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গত এক মাসে বর্ষাসংক্রান্ত দুর্ঘটনায় দেশটিতে অন্তত ১১৭ জন মারা গেছে। এর মধ্যে পাবর্ত্য এলাকায় ভূমিধস ও দক্ষিণের সমতল অঞ্চলে বন্যার কারণে এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। অন্তত ৪৭ জন নিখোঁজ রয়েছে। আহত হয়েছে ১২৬ জন।

উহানে বন্যায় ‘সর্বোচ্চ সতর্কতা’

এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এশিয়ার দেশ চীনের মধ্য ও পূর্বাঞ্চলজুড়ে প্রবল বৃষ্টিপাতে কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। যে শহরে প্রথম করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটে, সেই হুবেই প্রদেশে উহানসহ আরও কয়েকটি স্থানে শুক্রবার ‘সর্বোচ্চ সতর্কতা’ জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।

বৃষ্টিতে নদী, হ্রদের পানি উপচে যাওয়ায় উহান শহরে, আনহুই, জিয়াংশি ও ঝেঝিয়াং প্রদেশে এই সতর্কতা জারি করা হয়। উহানে বন্যার কারণে ব্যাহত হচ্ছে করোনা মোকাবিলায় কার্যক্রম।

বৃষ্টিতে উহানের ইয়াংজি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের পূর্বসতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বিশালাকার তিনটি পাহাড়ি জলাধারে পানি বিপৎসীমার ১০ মিটারের বেশি বেড়ে গেছে। এ ছাড়া জিয়াংশি প্রদেশে পয়্যাং হ্রদের পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সাংহাইয়ের একটি হ্রদের পানি বিপৎসীমার ওপরে চলে যায়।