কলকাতায় করোনা পরীক্ষায় প্রতারকচক্রের সন্ধান

কলকাতায় করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
কলকাতায় করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

১ আগস্ট থেকে পশ্চিমবঙ্গে করোনা রোধে কেন্দ্রীয় সরকারঘোষিত আনলক-৩ বহাল হলেও করোনা দমন হয়নি বা দমনের লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না; বরং বেড়েই চলেছে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। করোনা পরীক্ষায় প্রতারকচক্রের সন্ধান মিলেছে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে করোনার সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ায় হাসপাতালে মিলছে না করোনার শয্যা। করোনার নমুনা পরীক্ষার এতটুকু সুযোগও পাচ্ছে না মানুষ; বরং করোনার নমুনা পরীক্ষার নামে প্রতিদিন বাড়ছে দুর্ভোগ। মানুষ লাইন দিয়ে করোনার পরীক্ষার নাগাল ধরতে হিমশিম খাচ্ছে। এরই মধ্যে রাজ্যজুড়ে সক্রিয় হয়ে পড়েছে একশ্রেণির প্রতারকচক্র। তারা বাড়ি থেকে করোনার নমুনা পরীক্ষার নামে সোয়াব সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট দিচ্ছে। আর তা ‘নেগেটিভ’ রিপোর্ট। এতে পরীক্ষা করাতে দেওয়া ব্যক্তি নিশ্চিন্ত হলেও তাঁর দেহে করোনার সংক্রমণ থাকলে পরে তা গুরুতর আকার ধারণ করছে।

এমন এক প্রতারকচক্রের সন্ধান পেয়েছে কলকাতা পুলিশ। গতকাল শনিবারই পুলিশ এই প্রতারকচক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ ওই তিন প্রতারককে গতকাল আদালতে তুললে আদালত তাদের ৩ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

গত ২৫ জুলাই দক্ষিণ কলকাতার নেতাজিনগর থানা এলাকার নাকতলা রোডের ব্যাংক ম্যানেজার বিমল সিনহা সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হয়ে এক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ওই চিকিৎসক তাঁকে দেখে অবিলম্বে তাঁর সোয়াব পরীক্ষার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি নমুনা পরীক্ষার জন্য একটি ল্যাবের ফোন নম্বরও দেন। ওই রোগী সেখানে ফোন করার পর সেখান থেকে এক ব্যক্তি এসে তাঁর সোয়াব নেন বাড়ি থেকে। ২৭ জুলাই হোয়াটসঅ্যাপে রিপোর্ট পাঠানো হয় যে ওই ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ। এতে ওই ব্যক্তি আশ্বস্ত হলেও দুদিন পর তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপরই তাঁকে ভর্তি করানো হয় সরকারি বাঙ্গুর হাসপাতালে। সেখানে তাঁর নমুনা পরীক্ষা হলে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ৩০ জুলাই ওই ব্যক্তি মারা যান।

এরপরই রোগীর আত্মীয়রা হাসপাতালে জানান, এর আগে তো তাঁর নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছিল। বাঙ্গুর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা রিপোর্টটি পরীক্ষা করে দেখেন সেটি ভুয়া। ভারতের আইসিএমআরের ফরম ডাউনলোড করে কলম দিয়ে নেগেটিভ লিখে রিপোর্টটি দেওয়া হয়। এতে সন্দেহ হয় হাসপাতালের। কারণ, আইসিএমআরের রিপোর্ট কখনো হাতে লেখা হয় না। সবকিছুই মেশিনে হয়।

এ ঘটনার পর বিষয়টি নেতাজিনগর থানায় জানানো হয়। তদন্তে এই চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কলকাতার আদালত এই তিনজনকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে
১ আগস্ট থেকে ভারতের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও বহাল হয়েছে আনলক-৩। কিন্তু করোনারোধে এই ব্যবস্থা রাজ্যে কোনো সুফল বয়ে আনেনি; বরং গতকাল নতুন করে পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৫৮৯ জন। মৃত্যু ৪৮ জনের। আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে গতকাল আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এতে পশ্চিমবঙ্গে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হলেন ৭২ হাজার ৭৭৭ জন। মারা গেছেন ১ হাজার ৬২৯ জন। গতকাল সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ১৪৩ জন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫০ হাজার ৫১৭ জন। কলকাতায় গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছেন ৭১৪ জন আর মারা গেছেন ১৯ জন। এখন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬ হাজার ১৩৫ জন। হোম আইসোলেশনে আছেন ১২ হাজার ৮৮৬ জন এবং সেফ হোমে আছেন ১ হাজার ৬১০ জন। পশ্চিমবঙ্গে মৃত্যুহার এখন কমে হয়েছে ২ দশমিক ২৩ শতাংশ।