লাখো টাকা দিয়ে জাদুকর পোষা

দ্য উইজার্ড (বাঁয়ে) ও তাঁর শিষ্য এরি ফ্রিম্যান।
দ্য উইজার্ড (বাঁয়ে) ও তাঁর শিষ্য এরি ফ্রিম্যান।

নিউজিল্যান্ডের বড় শহরগুলোর একটি ক্রাইস্টচার্চ। এক বিকেলে শহরের একটি ক্যাফেতে কফি খেতে বসেছিলেন দুজন ব্যক্তি। তাঁদের লম্বা দাড়ি, পরনে কালো লম্বা পোশাক আর টুপি। তাঁরা যেমন খুশি তেমন সাজো অনুষ্ঠানে আসেননি। হ্যালোইনেও নয়। সাধারণ কোনো লোকও যে নন, পোশাকই তার নিদর্শন। তাঁরা আসলে জাদুকর। বছরের পর বছর লাখ লাখ টাকা বেতন দিয়ে এই জাদুকরদের পুষছে ক্রাইস্টচার্চ কর্তৃপক্ষ।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, ক্রাইস্টচার্চ শহরের বর্তমান সরকারি জাদুকরের নাম ইয়ান ব্রাকেনবারি চ্যানেল। যুক্তরাজ্যের নাগরিক ব্রাকেনবারি ১৯৭৪ সালে নিউজিল্যান্ডে আসেন। এখন তিনি ‘দ্য উইজার্ড’ বা সরকারি জাদুকর হিসেবে পরিচিত। উইজার্ড নামেই তাঁর গাড়ির লাইসেন্স, পাসপোর্ট। এই পরিচয়ে তিনি বেশ গর্বিতও। মানুষের কাছেও তিনি তুমুল জনপ্রিয়। পেয়েছেন নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ সম্মাননা। ক্রাইস্টচার্চ সিটি কাউন্সিল ওই পদের জন্য ১৯৯৮ সাল থেকে বছরে তাঁকে ১৬ হাজার নিউজিল্যান্ড ডলার (প্রায় ৯ লাখ টাকা) সম্মানি দেয়।

৮৭ বছর বয়সী এই জাদুকর এখন খুব কমই জনসমক্ষে আসেন। তিনি তাঁর উত্তরসূরির হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে চান। এরি ফ্রিম্যানকে (৩৯) তাঁর উত্তরসূরি মনে করা হচ্ছে। তিনি মূলত গিটারবাদক ও একটি ব্যান্ডের সদস্য।

ব্রাকেনবারি তরুণ বয়সে কানাডায় রয়েল এয়ারফোর্সের সদস্য ছিলেন। পড়ালেখা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব তেহরানে। তৎকালীন স্ত্রীর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় এসেই বদলে যায় তাঁর পেশার ধরন। জাদুকরের পেশায় অধিক মনোযোগী হয়ে পড়ায় স্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে ছেড়ে চলে যান। সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানে উচ্চতর লেখাপড়া শেষে পার্থে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায় কমিউনিটি আর্ট অর্গানাইজার হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে সিডনির ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের গবেষণা শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। আজগুবি সব কাজের জন্য তিনি চাকরি হারান। পরে তিনি জাদুকর পদের ধারণা উপাচার্যকে জানান এবং সেই পদে যোগ দেন।

দ্য উইজার্ড বলেন, ‘বিশ্বে আমিই জাদুকর নামে নতুন পদ সৃষ্টি করি। এর আগে বইয়ে ছাড়া কোথাও এই পদ ছিল না।’ একসময় ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের শিক্ষকেরা এর বিরোধিতা করায় তিনি ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নে চলে যান। জাদুকর পেশার কারণে সব বন্ধু ও স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে যাওয়ায় ১৯৭৪ সালে তিনি ক্রাইস্টচার্চে চলে আসেন। সেখান থেকেই মূলত তাঁর পেশার সত্যিকার যাত্রা শুরু হয়।

ব্রাকেনবারি ক্রাইস্টচার্চকে বাকি বিশ্ব থেকে আলাদা হিসেবে দেখতেন। একসময় তিনি একটি ক্যাথেড্রাল স্কয়ারের তত্ত্বাবধায়ক হন। তাঁর অদ্ভুত বেশভূষা ও পোশাক মানুষকে আকৃষ্ট করত। তারপরও প্রথমে তাঁকে দ্য উইজার্ড নিয়োগ দিতে রাজি হয়নি ক্রাইস্টচার্চ কাউন্সিল। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। কাজে ও আচরণে কাউন্সিলকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা পুরোদমে চালিয়ে যান।

ব্রাকেনবারি বলেন, ১৯৮৮ সালে ক্রাইস্টচার্চের কাছের শহর ওয়াইমেটে অনাবৃষ্টি দেখা দেয়। স্থানীয় কৃষিমেলার আয়োজকেরা বৃষ্টি নাচের জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানান। তিনি ড্রাম বাজানো শুরু করার কয়েক ঘণ্টা পরই বৃষ্টি নামে। তাঁর এই কাজ স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে তো বটেই, সারা নিউজিল্যান্ডে সাড়া ফেলে দেয়। ১৯৯০ সালে নিউজিল্যান্ডের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাইক মুর দেশটির জাদুকর হিসেবে তাঁকে নিয়োগ দিতে কাউন্সিলকে চিঠি লেখেন। আট বছর পর তাঁকে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।