কেনিয়ায় সরকার শিক্ষার্থীদের এ বছরের পড়াশোনা বাতিল গণ্য করবে

কেনিয়ায় কিছু শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাস করতে পারলেও অধিকাংশই ক্লাসের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
কেনিয়ায় কিছু শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাস করতে পারলেও অধিকাংশই ক্লাসের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

করোনাকালে বিশ্বজুড়ে নানা দুর্গতির মধ্যে শিক্ষা দুর্গতির বিষয়টিও এখন চোখে পড়ছে। অনেক দেশে বন্ধ রাখতে হয়েছে স্কুল-কলেজ। কবে খুলবে তার নিশ্চয়তাও পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। এ সমস্যা সমাধানে কেনিয়া অস্বাভাবিক পথেই হাঁটতে যাচ্ছে। সেখানে কিছু শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাস করতে পারলেও অধিকাংশই ক্লাসের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে কেনিয়ার সরকার কোভিডের কারণে শিক্ষার্থীদের এ বছরের পড়াশোনা বাতিল গণ্য করছে। তবে এ সিদ্ধান্তে শিক্ষাবৈষম্য আরও খারাপ রূপ ধারণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে কেনিয়ার শিক্ষা–দুর্গতির চিত্র তুলে ধরে বলেছে, এস্থার আধিয়াম্বো এ বছর উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আশা করেছিলেন। পড়াশোনা করে একটি চাকরি জুটাতে পারলে নাইরোবির মাথারে বস্তিতে দরজির কাজ করা মা ও পরিবারের জন্য সহায়ক হতো। কিন্তু আধিয়াম্বো ও তাঁর মতো অনেক কেনিয়ার শিক্ষার্থীর এ বছর হারিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা কর্মকর্তারা গত জুলাই মাসে এ বছরের একাডেমিক পড়াশোনা বাতিল করেছেন। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের একই ক্লাসে আবার পড়তে হবে। আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে আবার ক্লাস শুরু হবে।

শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা বিশ্বে কেনিয়া একমাত্র দেশ, যেখানে পুরো এক বছরের পড়াশোনা বাতিল করে শিক্ষার্থীদের আবার নতুন করে শুরু করতে বলছে।

আধিয়াম্বোর ভাষ্য, ‘দুঃখজনক ও খুবই ক্ষতির খবর। এ মহামারি আমাদের সবকিছু শেষ করে দিয়েছে।’

নিউইয়র্ক টাইমস প্রতিবেদনে বলেছে, প্রায় মাসব্যাপী বিতর্কের পর একাডেমিক বর্ষ বাতিল করেছে কেনিয়ার সরকার। দেশটির শিক্ষাসচিব জর্জ মাগোহা বলেছেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাস থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি শিক্ষাবৈষম্য দূর করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত মার্চ মাসে স্কুল বন্ধের সময় শিক্ষা বৈষম্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। স্কুল বন্ধের পর অল্প কিছু শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি সুবিধা ছিল, যাতে তারা দূরে বসে পড়াশোনা করতে পারে। তবে অধিকাংশের এ সুবিধা ছিল না।

তবে গবেষকেরা বলছেন, বৈষম্য ঠেকাতে পুরো শিক্ষাবর্ষ বাতিল করা হলেও বর্তমান শিক্ষাবৈষম্য এতে আরও বাড়বে। স্কুল খুলে দিলে দুই ধরনের শিক্ষার্থীর পড়াশোনার স্তর এক থাকবে না এবং সমভাবে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না।

কেনিয়ার টেকনিক্যাল স্কুলের যোগাযোগ পরিচালক কেন কে. রামানি বলেন, শিক্ষাবর্ষ বাতিল করলে শিক্ষাবৈষম্য হবে দিন ও রাতের পার্থক্যের মতো।

শিক্ষাবর্ষ বাতিল হলে কেনিয়ার ৯০ হাজার স্কুলে ১ কোটি ৮০ লাখ শিক্ষার্থীর ওপর এর প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া উদ্বাস্তু শিবিরে থাকা আরও দেড় লাখ শিক্ষার্থীর জীবনে এর প্রভাব পড়তে দেখা যাবে। দেশটিতে প্রাইমারি স্কুলের শেষে ও হাইস্কুলের শেষে জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ দুটি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। ২০২১ সালে নতুন শিক্ষার্থী গ্রহণ করা হবে না সেখানে।

২০২১ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে উপস্থিত হয়ে ক্লাস করার বিষয়টি বন্ধ রাখছে দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দুই দশক ধরে কেনিয়াতে ব্যক্তিমালিকানাধীন স্কুল, কিন্ডারগার্টেন ও হাইস্কুল ছাতার মতো গজিয়েছে। দেশটির এক–চতুর্থাংশ স্কুলই ব্যক্তিমালিকানাধীন। সেখানে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের কিছু উদ্যোগ রয়েছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে কেনিয়া। দেশটির অর্থনীতি ইতিমধ্যে ধুঁকতে শুরু করেছে। করোনারা বিস্তার ঠেকাতে কড়া লকডাউনের পর এখন পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হয়েছে।

জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কেনিয়ায় করোনায় সংক্রমণের সংখ্যা ২৬ হাজার ৯২৮ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৪২৩। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরীক্ষা ব্যাপক হলে সংক্রমণ আরও বাড়ত।